মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাযুদ্ধ

কোনো একটি যুদ্ধ বা বিপ্লব যেমন এক দিনে বা একটি কারণে সংঘটিত হয় না, তেমনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় বিপ্লবের পশ্চাতেও অনেক কারণ ছিল। যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক কারণ।

রাজনৈতিক : পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানির শক্তি ও ক্ষমতা দ্রুতগতিতে বেড়ে চলল এবং ভারতীয় রাষ্ট্রগুলো এর চাপ অনুভব করতে লাগল। ১৮১৮ সালে শেষ পেশোয়া সিংহাসনচ্যুত হলে প্রকৃতপক্ষে সব দেশীয় রাজ্যগুলো হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হলো, আর না হয় কোম্পানির সঙ্গে হীনশর্তে চুক্তিতে আবদ্ধ হলো। ব্রিটিশের রাজ্য বিস্তার নীতি এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা সীমান্তের কতগুলো স্বাধীন রাজ্যও সাম্রাজ্যভুক্ত করে নিয়েছিল। ১৮৪৩ সালে তারা সিন্ধু আক্রমণ করে তা সাম্রাজ্যভুক্ত করে। ১৮৪৯ সালে মুলতানের দেওয়ান মূল রাজ্যের বিদ্রোহের অজুহাতে পাঞ্জাব অধিকারভুক্ত করে নেওয়া হয়। ব্রিটিশের আশ্রিত নাবালক মহারাজ দিলীপ কুমারের অধিকারও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। লর্ড ডালহৌসি রাজ্য বিস্তারে এক নতুন নীতি গ্রহণ করেন। তার স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা দেশীয় রাজাদের বহুদিনের দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকার অস্বীকার করা হয়। দত্তক পুত্র গ্রহণের প্রথা প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে চলে আসছিল। এ প্রথা অনুসারে অপুত্রক রাজারা রাজ্য ও বংশ রক্ষা করার জন্য দত্তক পুত্র গ্রহণ করতেন। লর্ড ডালহৌসি এ নীতি অনুসারে সাতারা, নাগাপুর, ঝাঁসি এবং অন্য কয়েকটি রাজ্য অধিকার করেন। কর্ণাটের নবাব ও তাঞ্জোরের রাজার দত্তক পুত্রদের উপাধি ও বৃত্তি লোপ করা হয় এবং পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাওয়ের দত্তক পুত্র নানা সাহেবও তার অধিকার (বৃত্তি) থেকে বঞ্চিত হন। ১৮৫৬ সালে অযোধ্যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। অযোধ্যার নবাব অনেক দিন ধরে কোম্পানির বিশ্বস্ত মিত্র ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশের এ রাজ্যগ্রাস নীতি মুসলমানদের মনে ভীষণভাবে আঘাত হানে। ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতির দ্বারা রাজ্যগ্রাস, উপাধি ও বৃত্তিলোপ, সম্রাট বাহাদুর শাহকে দিল্লির রাজপ্রাসাদ থেকে বিতাড়নের পরিকল্পনা প্রভৃতি ভারতীয় রাজন্যবর্গ ও জনসাধারণের মধ্যে দারুণ আশঙ্কা ও  উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এসব কারণে দেশীয় রাজা, দেশীয় সিপাহি ও জনসাধারণ ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সন্দিহান হয়ে ওঠেন এবং ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্তিলাভের জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

 

সর্বশেষ খবর