শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

সর্বোত্তম আদর্শের প্রতীক মহানবী (সা.)

মুফতি এহসানুল হক
পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সব প্রশংসা আল্লাহতায়ালার নিমিত্তে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যারই হাতে রয়েছে জীবিকার চাবিকাঠি। যিনি জন্ম-মৃত্যুর মালিক, জীবনদাতা, আইনদাতা, বিধানদাতা, মালিক। অসংখ্যবার সালাত ও সালাম-সর্বশেষ নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর, যার আনীত জীবনাদর্শই হলো আমাদের চলার একমাত্র পাথেয়। অতঃপর আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো— আদর্শের প্রতীক মহানবী (সা.)। শুরুতেই আমি এ ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে কারিমের একটি আয়াত তুলে ধরছি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে দুনিয়ার মানুষ সকল, আমার সর্বশেষ নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে তোমাদের সবার জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে আমার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা.) আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে বিশ্বনবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.) নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা সনদ দিচ্ছেন যে, তিনি (সা.) হলেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং দুনিয়ার সব মানবমণ্ডলী যে মহামানবকে আদর্শের একমাত্র মাপমাঠি হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং যাকে একমাত্র অনুকরণ ও অনুসরণ করতে পারে তিনি হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন সবার জন্য আদর্শ-অনুকরণীয় ব্যক্তি। শিশুকালে শিশুদের জন্য, কিশোর ও যুব বয়সে কিশোর ও যুবকদের জন্য, স্বামী হিসেবে স্বামীদের জন্য, রাষ্ট্রপরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রপতিদের জন্য, রাজনীতিবিদ হিসেবে রাজনীতিবিদের জন্য, যোদ্ধা হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধান ও সাধারণ সৈন্যদের জন্য— এক কথায় তিনি (সা.) হলেন, সর্বক্ষেত্রে আদর্শের মূর্ত প্রতীক; অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিস। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত নিজকে ইমানদার বলে দাবি করতে পার না যতক্ষণ না আমি মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.) তোমাদের কাছে তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততিসহ দুনিয়ার সব বিষয় থেকে অতি প্রিয় না হব।’

আমরা যদি মেনে নিই আদর্শের প্রতীক মহানবী (সা.), তাহলে জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নতির জন্য, আমাদের তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে। সর্বদা তাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে। মেনে নিতে হবে তাকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র নেতা হিসেবে। আমরা যদি তাই করি, তাহলে আমাদের ব্যক্তি হতে আন্তর্জাতিক জীবন অবধি সর্বক্ষেত্রে শান্তি আসতে বাধ্য। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন— এক কথায়, সর্বক্ষেত্রে উন্নতি হতে পারে, প্রতিষ্ঠিত হতে পারে শান্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি ইমানদার হও, তাহলে তোমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই, তোমরাই সর্বক্ষেত্রে বিজয়ী হবে।’ আল্লাহতায়ালা এ ঘোষণা দিয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আমরাই সর্বক্ষেত্রে উন্নত জাতি। এ কথা আমাদের সর্বক্ষেত্রে চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করতে হবে— আদর্শের মূর্ত প্রতীক হলেন, মহানবী (সা.)। তিনিই (সা.) আমাদের অনুকরণ ও একমাত্র ব্যক্তি।

মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.) তার জন্মের পর থেকে সর্বক্ষেত্রে আদর্শের মূর্ত প্রতীক হওয়ার কারণে তিনি তার এ বিরাট পরিকল্পনায় ব্যাপকভাবে সফল হন। আরবের এ অন্ধযুগকে তিনি গড়ে তোলেন সোনালি যুগ হিসেবে। সমাজে তিনি এমন কিছু মহামানব সৃষ্টি করেছিলেন, যাদের কর্ম প্রচেষ্টার বদৌলতে এক সময় অর্ধ পৃথিবী মুসলমানরা শাসন করেছিল, জাকাতের অর্থ নিয়ে জাকাতদাতারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে, গ্রহীতা পাওয়া যাচ্ছিল না। মানুষ নিরাপদে সড়কে ঘোরাফেরা করেছে, করেছে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য। নেই কোনো ভয়। ভয় ছিল না ঘুম হওয়ার। ছিল না সন্ত্রাস বা হাইজ্যাকিং বা ছিনতাই, মানুষ ছিল নিরাপদ। আজও আমরা যদি রসুল (সা.)-এর আদর্শকে সঠিক অর্থে মেনে নিই, চূড়ান্তভাবে তা আমাদের মনমানসিকতায় কার্যকরী করি, তাহলে আজকের আধুনিক যান্ত্রিক যুগেও আমরা সুনিশ্চিতভাবে নিরাপদ। গড়ে তুলতে পারি একটি উন্নত সমাজ-ব্যবস্থা।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— ‘হে আমার সাহাবিরা শোন, আমি এমন দুটি বিষয় তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখ অর্থাৎ তার ওপর আমল কর, তাহলে কখনো গোমরাহ হবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)। আল্লাহতায়ালা আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তারই বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন।  আমিন।

সর্বশেষ খবর