মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মৃত্যু যাতনা থেকে বাঁচার উপায়

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু যাতনা থেকে মুক্তির জন্য কিছু আমলের কথা বলেছেন, যে আমলের মাধ্যমে মৃত্যু যাতনা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়, যথা সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত। প্রতিদিন এই নিয়তে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করলে মৃত্যু যাতনা থেকে মুক্তিলাভের কথা হাদিসে উল্লিখিত আছে। অপারেশনের আগে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরকে অবশ করার পর যেভাবে ইচ্ছা কাটাছেঁড়া করলে যেমন কষ্ট অনুভূত হয় না, তেমনি সূরা ইয়াসিন হচ্ছে মৃত্যুর যাতনাকে অবশ করার জন্য একটি বিশেষ ইনজেকশন। সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াতের ক্রিয়াস্বরূপ মৃত্যুর সময় যখন আত্মাকে দেহ থেকে বের করা হয়, তখন মৃত্যু যাতনা অনুভূত হয় না। তবে প্রতিদিন সূরা ইয়াসিনের আমল সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু যার অন্তরে মৃত্যু যাতনার ভয় আছে, তার জন্য এ আমল করা কোনো কষ্টের ব্যাপার নয়।

মৃত্যুর পর কবরে প্রশ্নোত্তরের কথা একটু ভেবে দেখুন। যদি প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেওয়া হয়, তাহলে মহাসাফল্য লাভ হবে, আর সঠিক উত্তর না দিতে পারলে চরম বিপর্যয় ও অশান্তি দেখা দেবে। জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ও আজাবে আক্রান্ত হতে হবে। যার এ বিষয়ে বিশ্বাস ও ভয় আছে তার জন্য কবরের প্রশ্নোত্তরের সঠিক আমল করা সহজ হবে। যার ভয় নেই তার জন্য কঠিন। কবরে কী প্রশ্ন করা হবে? প্রশ্ন করা হবে তোমার রব কে? তোমার প্রতিপালকের পরিচয় কী? তার কথা স্মরণ আছে? যদি পৃথিবীতে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তার পরিচয় লাভ করা হয় তাহলে উত্তর দেওয়া সহজ হবে। অন্যথায় মুখে কোনো উত্তর আসবে না।

হজরত রাবিয়া বসরি একজন বড় বুজুর্গ মহিলা ছিলেন। আল্লাহর মুহব্বত ও মারিফাতে ধন্য এই মহিলাকে যখন মুনকির নাকির কবরে প্রশ্ন করেছিল তোমার রব কে? তখন তিনি ফেরেশতাদের বললেন, তোমাদের প্রশ্নের উত্তর আমি পরে দেব। প্রথমে তোমরা আমার প্রশ্নের উত্তর দাও যে, তোমরা কারা এবং কোথা থেকে এখানে এসেছ? তারা উত্তরে বলল, আমরা মুনকির নাকির দুই ফেরেশতা, আসমান থেকে আল্লাহর নির্দেশে এখানে এসেছি। রাবিয়া বললেন, এখান থেকে আকাশের দূরত্ব কতটুকু? তারা উত্তর দিলেন ৫০০ বছরের রাস্তা। তিনি বললেন, তোমরা কি তোমাদের স্রষ্টা ও প্রভু তথা আল্লাহকে স্মরণে রেখেছ? তারা বলল, হ্যাঁ। রাবিয়া বসরি বললেন, তোমরা ৫০০ বছরের রাস্তা অতিক্রম করেও যদি আল্লাহকে ভুলতে না পারো, তাহলে যে রাবিয়া তার সমস্ত জীবন আল্লাহকে স্মরণে রেখেছে, তোমরা কি মনে কর মাত্র তিন ফুট মাটির নিচে পৌঁছে আমি আল্লাহকে ভুলে গেছি? বাস্তবিকই যারা বস্তুজগতে আল্লাহকে স্মরণে রাখে কবরেও তাদের স্মরণ থাকবে। তবে বস্তুজগতে আল্লাহকে স্মরণ রাখার আমল করা তাদের জন্য সহজ, যাদের অন্তরে কবরের প্রশ্ন-উত্তরের ভয় বিদ্যমান।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর