শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সফল মুমিনের গুণাবলি

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

সফল মুমিনের গুণাবলি

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একত্ববাদ ও রসুল (সা.)-এর রিসালাতে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে তার প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মহান আল্লাহতায়ালা,  তাঁর প্রেরিত সব নবী, রসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, পরকাল ও তকদিরের ওপর পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ইমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ইমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তিনিই প্রকৃত মুমিন। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনুল কারিম ও পবিত্র হাদিস শরিফে মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে মুমিন বান্দার কিছু গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য জেনে নিই।

কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত ইমানদার তো তারাই আল্লাহর জিকির হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের ইমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল : আয়াত ২)। একজন মুমিন আল্লাহর ওপর ইমান আনার পর আর কখনো সন্দেহে পড়ে না। সে পূর্ণতার সঙ্গে আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হয়। যেমন আল্লাহতায়ালা নিজেই বলেছেন, ‘মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর প্রতি ইমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এরাই সত্যবাদী।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১৫)। ‘তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভুকে ডাকে না।’ (সূরা ফুরকান : ৬৮)। মুমিনরা যে কোনো সংবাদকে যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করে।  ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও। এরপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও’ (হুজরাত-৬)।

অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে মুমিন বান্দারা এড়িয়ে চলেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না আর অহতুেক বিষয়ের পাশ দিয়ে যখন তারা গমন করে, তখন তারা ভদ্রভাবে পাশ কাটিয়ে যায়’ (ফুরকান-৭২)। সফল মুমিন কারা? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী-নম্র, যারা অনর্থক কথার্বাতা বলে না, যারা জাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে (মুমিনুন-১-৪)।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অন্যের সহায়ক। তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদের ওপর আল্লাহ দয়া করবেন’ (তওবা-৭১)। মুমিন জিন্দেগীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মহব্বত ও দয়া। এ জন্য মুমিনকে মহব্বত ও দয়ার প্রতীক বলা হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীল মুমিনদের জন্য দয়াময় আল্লাহ তাদের জন্য (মানুষের অন্তরেও) মহব্বত পয়দা করে দেন (মরিয়ম-৯৬)। নূর নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারও সঙ্গে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না’ (মুসনাদে আহমাদ)। অবশ্যই এই ভালোবাসা হবে নিতান্তই আল্লাহতায়ালার জন্য। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই ব্যক্তি তার ইমানকে দৃঢ় করল যে কাউকে ভালোবাসল আল্লাহর জন্য, কাউকে ঘৃণা করল আল্লাহর জন্য, কাউকে কোনো কিছু দিল আল্লাহর জন্য আর কাউকে কোনো কিছু দেওয়া হতে বিরত থাকল কেবল আল্লাহর জন্য’ (তিরমিজি)।

সূরা আনফালের ২৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসুল ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খিয়ানত কর না। অথচ তোমরা এর গুরুত্ব জান।’ আসলে মুমিন চরিত্রে খিয়ানতের কোনো স্থান নেই, তিনি বরাবরই রক্ষক হবেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমার মধ্যে চারটি জিনিস থাকে তবে পার্থিব কোনো জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলেও তোমার ক্ষতি হবে না। ১. আমানতের হিফাজত; ২. সত্য ভাষণ; ৩. উত্তম চরিত্র; ৪. পবিত্র রিজিক’ (আহমাদ) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তার আমানত তাকে ফেরত দাও যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ কর না’ (তিরমিজি, আবুদাউদ)। মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আমানতের রক্ষণাবেক্ষণকারী। মুমিন কখনো খেয়ানতকারী হতে পারে না। এটা মুমিনের চরিত্রের বিপরীত কাজ।

পবিত্র কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত মুমিন জিন্দেগির সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জীবনযাপন বেশি বেশি দান সাদকার মাধ্যমে কিয়ামতের কঠিন বিপদের মুহূর্তে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে।

তাই মহান আল্লাহর কাছে সব সময় ইমানের পথে অটল থাকার তৌফিক কামনা করতে হবে।  আল্লাহ আমাদের সবাইকে সফল মুমিন হিসেবে কবুল করুন।  আমিন!

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন, বেতার, টিভির ইসলামী উপস্থাপক। খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর