সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিচিত্রিতা

নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দ্বীপটি মূলত একটি ‘চর’। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিল চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিল। পরে হাতিয়ার সংসদ সদস্য নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত বল্লার চর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি—এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ সালের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিল না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিল। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে এই দ্বীপে বনায়নের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ সালের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার। বর্তমানে সে সংখ্যা কয়েক লাখ। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবি করেন।

প্রায় ৯১ বর্গ কিমি. আয়তনের নিঝুম দ্বীপে নয়টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬ হাজার ৯৭০ দশমিক ৪৫৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে অবস্থিত।

নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। এ দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এ ছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপের বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুকায়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে এক ধরনের মাছ, যাদের উভচর প্রাণী বলা হয়। পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ছয় থেকে নয় ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এ সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে। এ ছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। এই শুঁটকি মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। আবার এই শুঁটকি হাঁস-মুরগির খাবারেও ব্যবহার করা হয়। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে কেওড়া গাছ। ইদানীং বনবিভাগ কিছু নোনা ঝাউও রোপণ করছে।  এ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ।

মুন্সী জামিল উদ্দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর