রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইতিহাস

নীল বিদ্রোহ

উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে সেখানকার বস্ত্র-শিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই সময় নীলের ব্যবসা হয়ে উঠেছিল লাভজনক। ইংরেজরা নীল উৎপাদনে তৎকালীন বাংলায় সামন্ততান্ত্রিক শোষণ প্রক্রিয়া চালু করে এর জবরদস্তিমূলক চুক্তির প্রচলন করেছিল। এই চুক্তির পরিণতিতে কৃষকরা হয়েছিলেন ভূমিদাস। ১৮১০ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় নীলের চাষ উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে নীল চাষ অবনতির দিকে গিয়েছিল। এক সরকারি হিসাব মতে দেখা যায় যে, ১৮৪৯-১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা দেশে গড়পড়তা নীল উৎপাদিত হয়েছিল ১০ হাজার ৭৯১ মণ। নীল চাষ করে কৃষকদের লাভ হতো না। তারা নীল চাষ করে যে টাকা পেতেন তাতে দাদনের টাকা পরিশোধ হতো না। এক বিঘা জমিতে নীল উৎপাদন হতো ৮ থেকে ১২ বান্ডিল। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে হিলস নামক এক ইংরেজ সাহেব সর্বপ্রথম নীলের দর ধার্য করেন ১০ বান্ডিলের স্থলে ৪ বান্ডিল। তার আগে ১০ বান্ডিলের মূল্য ছিল ১ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী বিচার করলে কৃষকদের হাতে নীল উৎপাদন করার দরুন যে টাকা আসত, তা লোকসানের নামান্তর। ১০০০ বান্ডিল নীল গাছে ৬ মণ নীল প্রস্তুত হতো। ১ বিঘায় যদি ৭ বান্ডিল গাছ হয় তাহলে নীলের পরিমাণ হয় ২ সের। এক মণ উত্কৃষ্ট নীলের মূল্য ছিল ২৩০ টাকা। সবচেয়ে খারাপ নীল এক মণ বিক্রি হতো ১০৯ টাকা। অর্থাৎ হিসাবে দেখা যায়, প্রতি বিঘায় ১১ টাকার নীল উৎপাদন হতো। কৃষকরা পেতেন নামমাত্র মূল। কুঠিয়ালরা কৃষকদের উত্কৃষ্ট জমিতে নীল বুনতে বাধ্য করত। নীল ছাড়া অন্য কোনো শস্য উৎপাদন করতে পারতেন না তারা। দাদনের টাকা নেওয়ার সময় শর্তসাপেক্ষে চুক্তিপত্রে টিপ সই দিতে হতো। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলে চাষির ওপর চালানো হতো অকথ্য অত্যাচার। অত্যাচারের মাত্রা এত অধিক পরিমাণে বেড়ে গিয়েছিল, তারা দেশীয় জমিদার এবং রাইয়তদের মানুষ বলেই গণ্য করত না। নীল চাষিরা অবশেষে কুঠিয়ালদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে প্রতিকারের উদ্দেশে নালিশ জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। নীল কুঠিয়ালরাও উল্টো প্রজার নামে তাদেরই টিপ সই যুক্ত চুক্তি নামার শর্ত অনুযায়ী চুক্তি ভঙ্গের নালিশ উত্থাপন করেছিল। সরকার এ ব্যাপারে কোনো মীমাংসা করেনি। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে সরকার আইন জারি করে, যারা চুক্তিভঙ্গ করবে, তারা ফৌজদারি মামলায় সোপর্দ হবে।           মুন্সি জামিলউদ্দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর