বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাকরিতে বিদেশিদের আধিপত্য

কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে

বাংলাদেশে মানসম্মত চাকরির বাজারে বিদেশিদের আধিপত্য বাড়ছে। কী পরিমাণ বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা সরকারি হিসাবে ৮৫ হাজার এবং বেসরকারি হিসাবে অন্তত ২ লাখ বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বায়নের যুগে কোনো দেশের চাহিদার বিপরীতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু দেশের বিপুলসংখ্যক বেকার যুবককে বঞ্চিত করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রবণতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন, বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি, মিডিয়া রিসার্চ প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনী সংস্থাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে অন্তত ২ লাখ বিদেশি কর্মরত। সরকারি হিসাবে দেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশির সংখ্যা ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন; যার মধ্যে ৩৫ হাজার ৩৮৬ জন ভারতীয়ও আছেন। এর পাশাপাশি ১৩ হাজার ২৬৮ জন চীনা, ৪ হাজার ৯৩ জন জাপানি, একইসংখ্যক কোরীয়, মালয়েশিয়ার ৩ হাজার ৩৯৫ ও শ্রীলঙ্কার ৩ হাজার ৭৭ জন নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ হলো বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের প্রাক্কলন গবেষণা করে বলেছে, ২০১৬ সালে প্রবাসী আয় হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ২০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশে গেছে; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার সমান। অবৈধভাবে বা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে এর অন্তত তিন গুণ টাকা। তাজ্জব করার বিষয় হলো, যথাযথ অনুমোদন ছাড়া ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসেও চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন বিদেশিরা। এমনকি বাংলাদেশি অনেক কোম্পানিও বিদেশি কর্মকর্তা নিয়োগ করলে কোম্পানির সম্মান বাড়বে— এমন ধারণায় নিছক প্রশাসনিক দায়িত্বেও বিদেশিদের নিয়োগ দিচ্ছে। বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিদেশিদের আধিপত্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এ উদ্বেগের অবসানে দেশে কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে। গরিব এ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাওয়াও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়। জাতীয় স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে কড়া দৃষ্টি দেবে— আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

 

সর্বশেষ খবর