রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

লাইলাতুল বরাতের ইবাদত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

লাইলাতুল বরাতের ইবাদত

আলোচ্য শিরোনামটি দুটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে। এক. পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রাত। দুই. নিয়মিত ইবাদত। লাইলাতুল বরাত বা মুক্তির রাত আমাদের অতি কাছে। মুক্তির রাতে মুক্তির জন্যই আমল করতে হবে। জানার বিষয় হলো কোন জিনিস থেকে মুক্তির আমল করতে হবে? উত্তর হলো গুনাহ থেকে মুক্তির আমল করতে হবে। কর্মময় দৈনন্দিন জীবনে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমাদের বহু গুনাহ হয়ে যায়। জীবন চলার প্রতিটি অঙ্গনে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। বাড়িতে থাকলে গুনাহ, রাস্তায় চলতে গেলে গুনাহ, কর্মক্ষেত্রে গেলে গুনাহ, হাটবাজারে গেলে গুনাহ। এসব গুনাহ থেকে আল্লাহপাক যাদের হেফাজত করেন তারা ব্যতীত বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন। অপরদিকে অনেকে চোখের গুনাহ, মনের গুনাহসহ বহু গুনাহ করে থাকে, যাকে তারা একেবারে গুনাহ মনেই করে না। তাই প্রিয় জীবনের হিসাব করার সময় এসেছে। নিজের জীবনের যাবতীয় গুনাহের খাতা হিসাব করে আল্লাহর কাছে গুনাহ মুক্তির রাতে গুনাহ মুক্তির জন্য দোয়া করতে হবে। গুনাহ মুক্তির রাতটি আল্লাহপাক বান্দাকে দান করেছেন যেন বান্দা নিজের অপরাধের ক্ষমা চেয়ে নিতে পারে, আল্লাহর কাছে চেয়ে আপন রিজিক বাড়াতে পারে এবং বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতে পারে। আর দয়াময় পরম দয়ালু বান্দার চাওয়া অনুপাতে তার চাহিদাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন। বান্দা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাইলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওই বান্দার ওপর বেশি খুশি হন। পবিত্র লাইলাতুল বরাত শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫তম রজনী। বাইকাকী ও ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে, হজরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন শাবান মাসের ১৫তম রাত অর্থাৎ বরাতের রাত আসে, তখন তোমরা রাত্র জাগরণ কর! অর্থাৎ নফল ইবাদত কর। বিশেষভাবে নফল নামাজ পড় এবং পরের দিন রোজা রাখ। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতে প্রথম আসমানে চলে আসেন, তিনি তাঁর বান্দাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন, তোমাদের কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করার আছ কি? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কেউ আমার কাছে রিজিক চাওয়ার আছ কি? যে রিজিক চাইবে, আমি তাকে রিজিক দান করব। কেউ বিপদগ্রস্ত বা রোগশোকগ্রস্ত আছ কি? আমার কাছে রোগশোক থেকে মুক্তি চাইবে, আমি তাকে মুক্তি দিয়ে দেব। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, এভাবে আল্লাহপাক এক একটা বিষয় উল্লেখ করে করে বলতে থাকেন— অমুক অমুকটা চাওয়ার কে আছ? আমি তাকে দান করব। আল্লাহপাক সুবহে সাদেক পর্যন্ত ডেকে ডেকে বলতে থাকেন। আমার কাছে চাও, আমার কাছে চাও, আমার কাছে চাও। উল্লিখিত হাদিসের বর্ণনা দ্বারা বোঝা গেল যে, পবিত্র লাইলাতুল বরাতে মহান রাব্বুল আলামিনের দয়া, করুণা ও ক্ষমা বান্দার খুব কাছে চলে আসে। উল্লিখিত রাতটি আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত। কী কী চাইতে হবে তা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এক নম্বর. আল্লাহর কাছে তামাম গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। সব গুনাহ থেকে মুক্তি নিয়ে কোনো বান্দা কবরে গেলে সে জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা অর্জন করল। দুই নম্বর. রিজিকে বরকতের দোয়া করা। তিন নম্বর. বিপদাপদমুক্তর জন্য দোয়া করা। এ ছাড়াও বান্দার তামাম নেক প্রয়োজনাদি আল্লাহপাক পুরো করেন যদি বান্দা কায়মনে আল্লাহর দরবারে চায়। আল্লাহপাক মূলত এ রাতে বান্দাকে চাওয়ার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন। দুই. নিয়মিত ইবাদত : যাবতীয় ইবাদত করতে হয় নিয়মিত ও সক্রিয়তার সঙ্গে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে— যারা মুমিন, তাদের জন্য কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মতো যেন না হয়, যাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। তাদের ওপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। (সূরা হাদীদ : ১৬)। নিয়মিত ইবাদত সম্পর্কে হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন— আল্লাহর কাছে ওই ইবাদত বেশি পছন্দনীয় যে ইবাদত নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবসময় করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হোক না কেন? অপর হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রাজি.) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন। তখন একজন মহিলা তার কাছে বসা ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এ মহিলাটি কে? হজরত আয়েশা (রাজি.) বললেন, এ হচ্ছে অমুক মহিলা, সে তার নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করছে। তিনি বললেন, ‘থাম’ সব কাজ তোমাদের শক্তি অনুযায়ী তোমাদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহর কসম, তোমরা ক্লান্ত হলেও মহান আল্লাহ (সওয়াব দিতে) ক্লান্ত হন না।

আর তাঁর কাছে উত্তম দীনি কাজ ওটাই যার কর্তা সে কাজ নিয়মিতভাবে আদায় করে। (বোখারি মুসলিম)। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের পবিত্র লাইলাতুল বরাতের হক আদায় করে ইবাদত করা ও নিয়মিত বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর