রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

পবিত্র লাইলাতুল বরাতের নফল ইবাদত

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

মুক্তিলাভের কাঙ্ক্ষিত রাত লাইলাতুল বরাত মুমিনদের দরবারে হাতছানি দিচ্ছে। এই পবিত্র রাতটি ধারণ করেছে শাবান মাস। শাবানকে রমজান আহ্বানকারী মাস হিসেবেও অভিহিত করা হয়। রমজান ছাড়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা আদায় করতেন। ১৫ শাবানের রাতকে রহমতের রাত হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ১৫ শাবানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং হিংসুক ও খুনি ছাড়া অন্য বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমাদ)।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে (শবেবরাতে) কী কী হয় তোমরা কি জান? আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি বলুন এই রজনীতে কী কী হয়? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে আগামী এক বছরে পৃথিবীতে আগমনকারী আদম সন্তানদের নাম লেখা হয়। আগামী এক বছরে পৃথিবী থেকে কে কে বিদায় নেবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রজনীতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মানুষের রিজিক আল্লাহর কাছ থেকে বরাদ্দ হয়। (বায়হাকি)।

এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের জন্য তার রহমতের দরজা খুলে দেন। এই রাতে আল্লাহ বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাদের পাপ ক্ষমা করেন। হজরত আলী (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শাবানের ১৫তম রাতে নামাজ পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ। কেননা সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করতে থাকেন— আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? আছে কি কোনো রিজিক যাচনাকারী, আমি তাকে রিজিক দেব? আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব? আছে কি এমন কেউ এমন কেউ ইত্যাদি (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এই রাতে আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেন উম্মতের গুনাহখাতা; কিন্তু সাত শ্রেণির মানুষের এই রাতে কোনো প্রকার অংশ থাকে না। ১. জাদুকর ২. শরাবখোর ৩. জেনাকারী ৪. আত্মীয়তা ছিন্নকারী ৫. মা-বাবার নাফরমান ৬. পরনিন্দাকারী ৭. কৃপণ; হিংসুক যে তিন দিনের বেশি অন্য মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখে। এদের কখনো মাফ করা হয় না।

শবেবরাতের করণীয় সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ১৫ শাবান তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। শবেবরাত উপলক্ষে করণীয় : রাত জেগে ইবাদত করা যেমন নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি।

আল্লাহর রহমত অর্জনের এই রাতে নফল ইবাদত করা উত্তম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নফল ইবাদত নিজের ঘরে করতেন, সেহেতু শবেবরাতে নিজের ঘরে ইবাদত করা উত্তম। এ রাতে কবর জিয়ারত করাও উত্তম। এ রাতে বাজি পোড়ানোসহ গর্হিত সব কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। আল্লাহ আমাদের শবেবরাতে সুন্নাত অনুযায়ী ইবাদতের তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর