সোমবার, ২১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানের ফাজায়েল

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

রমজানের ফাজায়েল

আল্লাহতায়ালা তাঁর সৃষ্টির কোনো কোনো জায়গাকে যেমন অন্য জায়গার ওপর মর্যাদা দেন, তেমনি কোনো কোনো সময়কেও অন্য সময়ের ওপর মর্যাদা দেন। যেমন তিনি পবিত্র রমজান মাসকে অন্য সব মাসের  ওপর মর্যাদা দিয়েছেন। বিভিন্ন বড় ফজিলত ও পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে এ মাসকে করেছেন আরও বরকতময়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমাদান মাস, এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।

এটি এমন একটি মাস যে মাসে রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)।

এটি তওবার, মাগফিরাতের ও আত্মশুদ্ধির মাস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান থেকে অপর রমজান পর্যন্ত এসব তাদের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম : ২৩৩)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে পুণ্যের আশায় রমজানের সিয়ামব্রত পালন করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বোখারি : ৩৮)।  তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে বিশ্বাসের সঙ্গে পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বোখারি : ৩৭)।

এটি মুক্তির মাস। এ মাসে জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রামজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না; জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও আর বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণকামী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে জাহান্নাম থেকে বহু লোককে মুক্তি দান। প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। (তিরমিজি : ৬৮২)।

এটি সংযমের মাস। অন্য কোনো ইবাদতে এতটুকু ধৈর্য ও সংযম পাওয়া যায় না, যতটুকু এ ইবাদতে পাওয়া যায়। এ মাসে বান্দা তার প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার থেকে বিরত থাকে। সংযত থাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে যাওয়া থেকেও। মহান আল্লাহতায়ালা ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ করেন, ‘কেবল ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সূরা আয-যুমার : ১০)।

এটি দোয়ার মাস। মহান আল্লাহতায়ালা সূরায়ে বাকারায় রমজানের আয়াতের শেষে বলেন, আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ইমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা ১৮৬)। অন্য রেওয়ায়েতে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।  ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়াকে আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এ জন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।  (তিরমিজি : ৩৫৯৮)।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর