বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিদেশে নারী শ্রমিক প্রেরণ

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে এড়িয়ে চলুন

সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারী শ্রমিকরা ব্যাপকহারে দেশে ফিরে আসছেন। মাত্র তিন দিনে দুই শতাধিক নির্যাতিত নারী কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দেশে ফিরেছেন। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার জনের দেশে ফিরে আসাকে অনেকে নারী শ্রমিকদের ফিরে আসার ঢাল হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। ফিরে আসা নারীদের অনেকেই সৌদি নিয়োগ কর্তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। ফেরত আসার আগে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে বা বিতাড়িত হয়ে তাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে ছিলেন। পাসপোর্টও ছিল না অনেকের। দূতাবাস থেকে দেওয়া ট্রাভেল আউটপাসে দেশে ফিরে এসেছেন হতভাগ্য নারী শ্রমিকরা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদকের কাছে একজন নারী শ্রমিক বলেছেন, ‘পাসপোর্টসহ মানসম্মান সব দিয়ে এসেছি, পালিয়ে এসে বাঁচতে পেরেছি এটাই বেশি।’ ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর হুইল চেয়ারে বসে এক নারী শ্রমিক বলেছেন, ‘লাখ টাকা বেতনের কথা বলে আমাকে পাঠানো হলেও সৌদিতে গিয়ে দেখি চক্রের কাছে আমাকে বিক্রি করা হয়েছে।’ এলাকার দালাল থেকে শুরু করে সৌদি আরবের কথিত নিয়োগকর্তা সবাই এ চক্রের অংশ। আরেক নারী শ্রমিকের ভাষ্য, সৌদি আরবে প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাকে আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার পাশাপাশি রড গরম করে ছ্যাঁকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। সৌদি আরব বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার। দেশের রেমিট্যান্স আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে সে দেশ থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী এই দেশটির বদনাম রয়েছে গৃহপরিচারিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের। ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কাসহ বেশকিছু দেশ সৌদি আরবে যে কারণে নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার পরও সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠানো হয় সে দেশের শ্রমবাজার ঠিক রাখার জন্য। নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে চুক্তির পাশাপাশি কোনো নারী শ্রমিক নির্যাতিত হলে তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে সেইফ হোম খোলা হয়। কিন্তু শত শত নারী শ্রমিক নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিরোধী নই। সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন সভ্য দেশে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে কাজ করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো দেশে আমরা আমাদের নারী শ্রমিকদের পাঠাব কিনা তা সময় থাকতে ভাবতে হবে।

সর্বশেষ খবর