বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রহমতের মাস রমজান

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রহমতের মাস রমজান

মাহে রমজান হলো আমাদের জন্য রহমতে ভরপুর পবিত্র মাস। রহমত, মাগফিরাত, নাজাত ও বরকতপূর্ণ এই মাসে মহান আল্লাহ রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য। তবে রোজা ছাড়া। কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। আর রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। কাজেই কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন কোনো অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া-ফ্যাসাদ না করে। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে, অথবা লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ বুখারি, মুসলিম। মুসলিমের বর্ণনায় আছে : ‘আদমসন্তানের সব কাজের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, কিন্তু রোজার কথা ভিন্ন। কেননা রোজা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’ রোজা এমন এক বরকতময় ইবাদত, যার সঙ্গে অন্য কোনো ইবাদতের তুলনা হয় না। রোজাদারের জন্য রব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার ও মর্যাদা। এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায় হজরত ওমর (রা) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছ থেকে মানুষের আমল বা কাজ সাত রকমের। দুই রকমের কাজ এমন যে, তার দুটো অনিবার্য ফল রয়েছে। আর দুই রকমের কাজ এমন যে, তার ফল কাজের সমান। আর এক রকমের কাজের দশ গুণ সওয়াব রয়েছে। আর এক রকমের কাজের সওয়াব সাত শ গুণ। আর এক রকমের কাজের সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। প্রথম দুটো হলো, যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করে, কাউকে তার সঙ্গে সমকক্ষ করে না এবং এ অবস্থায় আল্লাহর কাছে উপস্থিত হয়— তার জন্য জান্নাত অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা অবস্থায় তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে, তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ করে সে তার এক গুণ শাস্তি পায়। আর যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু কাজটা করে না, সে ওই কাজ করার এক গুণ সওয়াব পায়। আর যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে, সে তার কাজের সাত শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব পায়। আর রোজা আল্লাহর জন্য। এর সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাবারানি, বায়হাকি।

হজরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! একে আমি পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রেখেছিলাম। কাজেই তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ শোনো। আর কোরআন বলবে, আমি একে রাতের বেলা ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ শোনো। এরপর তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ আহমাদ, তাবারানি, হাকেম।

রমজানের রোজার রয়েছে একটি বিশেষ ফজিলত। রয়েছে এমন এক মর্যাদা যা অতুলনীয়। রমজান হলো সেই রহমত, বরকতময় মাস যে মাসে রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের জন্য নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এ মাসেই রয়েছে সেই পুণ্যবান লাইলাতুল কদর। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইমান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনাসহকারে ইবাদত করে (নামাজ পড়ে, তসবিহ-তাহলিল পড়ে) তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ইমান ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনাসহকারে রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ বুখারি, মুসলিম।

লেখক : বেতার-টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক।

খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর