শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাকাত ধনীদের জন্য ফরজ ইবাদত

মুফতি তারিকুল ইসলাম আল আযহারী

জাকাত ধনীদের জন্য ফরজ ইবাদত

জাকাত একটি ফরজ ইবাদত। এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্র হয়। আবু কাবশাহ আল আনবারী রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন : দুনিয়া চার শ্রেণি লোকের জন্য। প্রথমজন হলো, যে বান্দাকে আল্লাহ সম্পদ ও ইলম দান করেছেন এবং সে এগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলে, এগুলোর সাহায্যে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে চলে এবং এর সঙ্গে জড়িত আল্লাহর অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকে, এ ব্যক্তি উত্কৃষ্টতম মর্যাদার অধিকারী। (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ ও অন্যান্য)

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি তার হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরের মূল্য পরিমাণ দান করে, বলা বাহুল্য আল্লাহ হালাল বস্তু ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না, তবে আল্লাহ সেই দান তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর ওই দানকে তার দানকারীর জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে তা একদিন পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়। (বোখারি, মুসলিম)

আয়িশা রাযি. থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মহান আল্লাহ বান্দার দানকৃত একটি খেজুর ও লোকমা প্রতিপালন করতে থাকেন, এমনকি এক পর্যায়ে তা উহুদ পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়। (আত-তারগিব, ইবনু হিব্বান)

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একদা এক লোক পানিহীন এক প্রান্তর দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সে মেঘ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেল : অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি বর্ষণ কর। এটা শুনে মেঘ খণ্ডটি একদিকে এগিয়ে গেল এবং প্রস্তরময় ভূখণ্ডে পানি বর্ষণ করল। আর পানি ছোট ছোট নালাসমূহ থেকে বড় একটি নালার দিকে অগ্রসর হলো। এমনকি পানি পুরো বাগানকে বেষ্টন করে নিল। লোকটি ওই পানির পেছনে পেছনে যেতে লাগল। এমন সময় সে দেখতে পেল, এক ব্যক্তি তার বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বেলচা দিয়ে এদিক সেদিক পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। সে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর বান্দা! আপনার নাম কী? সে বলল, আমার নাম অমুক। অর্থাৎ, ওই নামই বলল, যে মেঘ থেকে এ পানি বর্ষিত হয়েছে সেখান থেকে আমি শুনতে পেয়েছিলাম। ওই আওয়াজ ছিল এই যে, অমুকের বাগানে গিয়ে পানি বর্ষণ কর। আপনার নামই তাতে বলা হয়েছিল। আচ্ছা, আপনি এ বাগানে এমনকি আমল করেছেন? সে বলল, তুমি যখন জানতে চাইলে তাহলে শুনো : এ বাগান থেকে যা কিছু উৎপন্ন হয়, আমি তার তত্ত্বাবধান করি। উৎপাদিত দ্রব্যের এক-তৃতীয়াংশ দান করে দিই। আরেক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার খেয়ে থাকি। আর এক-তৃতীয়াংশ পুনরায় এতে লাগিয়ে দিই। আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন : কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ হচ্ছে এমন দুই ব্যক্তির মতো যাদের গায়ে দুটি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের বুক থেকে কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত। দাতাব্যক্তি যখন দান করে তখন বর্মটি তার সম্পূর্ণ দেহ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। এমনকি হাতের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন যৎসামান্যও দান করতে চায়, তখন সে বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে সেঁটে যায়, সে তা প্রশস্ত করতে চেষ্টা করলেও তা প্রশস্ত হয় না।

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় সমতুল্য স্বর্ণ থাকত, তবে আমি তখনই সন্তুষ্ট হব যখন তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই তা নিঃশেষ হয়ে যায়, তার সামান্য পরিমাণ ছাড়া, যা আমি দেনা পরিশোধের জন্য রেখে দিতাম। আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! কোন দান সওয়াবের দিক দিয়ে বড়? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যখন তুমি সুস্থ থাক, সম্পদের প্রতি তোমার লোভ থাকে, তুমি দারিদ্র্যের ভয় কর এবং ধনী হওয়ার আশা রাখ, তখনকার দান। সুতরাং তুমি দান করার জন্য তোমার মৃত্যু আসার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। তখন তো তুমি বলবে : এই সম্পদ অমুকের জন্য, আর এই সম্পদ অমুকের জন্য অথচ তখন তো সম্পদ অমুকের হয়েই গেছে।

আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : উত্তম দান হলো, দুধালী উটনী ও দুধালী ছাগী, যা দুধ পানের জন্য কাউকে ধার দেওয়া হয়। যা সকালে এক ভাণ্ড দুধ দেয় এবং বিকালে এক ভাণ্ড। অর্থাৎ ধার দেওয়াও সদকাহ।

জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল! কেউ জাকাত দিলে এতে তার কী লাভ হবে? জবাবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যে ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের জাকাত আদায় করেছে, তার কাছ থেকে আপন-বালাই দূর হয়ে গেছে। (তারগিব, হা/৭৪০)

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন।

www.muftitariqulislam.com

সর্বশেষ খবর