সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মাহে রমজান ও পাপমুক্ত জীবন গঠন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মাহে রমজান ও পাপমুক্ত জীবন গঠন

সূরা আজ-জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমি জিন এবং ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি”। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির সৃষ্টির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। মানব সৃষ্টির মূল লক্ষ্যই হলো তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে। ইবাদতের মূল কথা হলো ইতায়াত বা আনুগত্য। যার ভিতরে আনুগত্য যত বেশি তৈরি হবে সে ইবাদতে তত বেশি স্বাদ পাবে। আর একজন মুমিন-মুসলিমের কাছে শরিয়ত এমনটিই চায়। ইবাদত ও আনুগত্যতার মাস  মাহে রমজান। তাইতো অনেক সময় দেখা যায়, যে লোকটি অন্যান্য মাসে ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করত না। সে মাহে রমজানে দিনে রোজা রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করে, সময়মতো ইফতার ও সাহরিতে অংশগ্রহণ করে। একটু সময় পেলেই কোরআন তেলাওয়াত করে, নফল নামাজ বেশি বেশি আদায় করে, সুযোগ পেলে শেষ রাতে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে, আর রাতে তারাবিহের দীর্ঘ নামাজ আদায় করে। এসবই হলো মাহে রমজানের বরকত।  এর সঙ্গে একজন রোজাদারের জন্য অবশ্যই লক্ষণীয় ও করণীয় বিষয় হলো, সে পাকাপোক্ত ইরাদা করবে, যেন পাপমুক্ত জীবন গঠন করতে পারে। এখন

জানতে হবে কী কী কারণে পাপ হয়। তা জেনে  নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ওই কাজ থেকে  বিরত রাখতে হবে। যেমন চোখের কারণে, কানের কারণে এবং জবানের কারণে অনেক পাপ হয়ে থাকে। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য একজন রোজাদারের দায়িত্ব হলো নিজেকে সম্পূর্ণরূপে কন্ট্রোল করে নিজের এসব অঙ্গগুলোকে পাপমুক্ত রাখা। তাহলেই মাহে রমজানে ঘোষিত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ। পথে-ঘাটে চলতে গেলে শরিয়তের নিয়ম হলো দৃষ্টি নত করে চলা। একজন পথিক যখন নিজের দৃষ্টিকে নিচু করে চলবে তখন তাকানোর কারণে যত পাপ হয়ে থাকে তার থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। আজকাল অনেকে মোবাইলে বিভিন্ন অশ্লীল ছবি বা দৃশ্য দেখে থাকে। মাহে রজযান উপলক্ষে এ ধরনের সব অশ্লীল দৃশ্য দেখা থেকে নিজের চোখকে সম্পূর্ণ হেফাজত করতে হবে। আবার অনেকে অবসর সময়ে কিংবা পথে-ঘাটে চলতে চলতে মোবাইলে বিভিন্ন অশ্লীল গান ডাউনলোড করে তা শুনতে থাকে। এর দ্বারা অশালীন গান-বাদ্য শোনার পাপতো হয়ে থাকে। এমনকি এর কারণে ইমানের নূর দিল থেকে বের হয়ে যায়। ইবলিস খুশি হয়। মানব দিলে সে স্থান করে নেয়। এর থেকে বাঁচার উপায় হলো, অবসর সময়ে যদি কোনো কিছু শুনতেই হয় তাহলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কারি ও হাফেজদের তেলাওয়াত এবং বড় বড় হক্কানি ওয়ায়েজদের ওয়াজ ডাউনলোড করে শোনা যেতে পারে। মনের কান দিয়ে শ্রবণ করলে কোরআনের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। আমলের জজবা তৈরি হবে। অন্তত শ্রবণের পাপ থেকে নিজের কান হেফাজত থাকবে। অনেক সময়ে  জবানের কারণেও বহু পাপ হয়ে থাকে। জবানকে নিরাপদ রাখা সম্পর্কে  হাদিসে পাকে হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যার হাত ও জবান থেকে অন্য ভাই নিরাপদ থাকে”।  উক্ত হাদিস দ্বারা এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, খাঁটি ইমানদার হতে হলে নিজের হাত দ্বারা যেমন কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। অনুরূপ নিজের জবান দ্বারাও কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।  অনেককে দেখা যায় হাসি-কৌতুক করতে গিয়ে একে অপরকে এমন এমন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে যা কোনো সভ্য সমাজে কোনোভাবেই চলে না। কিংবা দেখা যায় মোবাইলে একে অপরকে উদ্দেশ করে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে বাক্যালাপ করতে থাকে। এর দ্বারা অশ্লীল বাক্য ব্যবহারকারীর নেক আমলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই মাহে রমজান উপলক্ষে একজন রোজাদারের এমন সংকল্প করতে হবে যে, মাহে রমজানে জবান দ্বারা কাউকে কষ্ট দিব না। প্রিয় পাঠক! যেহেতু মাহে রমজান পবিত্র কোরআন নাযিলের মাস। তাই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আমাদের অনেকের কর্মস্থলে যেতে হয়। সঙ্গে যদি একটি পকেট কোরআন শরিফ রাখি। তাহলে  যানবাহনে বসে বসে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে পারব। কিংবা কর্মস্থলে বসে বসেও  তেলাওয়াত করা যায়। এর দ্বারা নিজের ইমান তাজা হবে। জবানের হেফাজত হবে। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা হবে।  বেশি বেশি তেলাওয়াত করার কারণে শত শত নেকি আমলনামার খাতায় জমা হবে। প্রিয় পাঠক! উল্লিখিত পন্থায় যদি আমরা মাহে রমজান পালন করি তাহলে আশা করা যায় বাকি এগারো মাসও মহান রব্বুল আলামিন আমাদেরকে মাহে রমজানের মতো সব পাপ মুক্ত রাখবেন।  যদি  পাপমুক্ত হয়ে কবরে যেতে পারি তখন আশা করা যায় তিনি আমাদেরকে জান্নাতের সুশীতল ছায়াতলে স্থান করে দিবেন। মহান রব্বুল আলামীন আমাদেরকে মাহে রমজানে পাপমুক্ত জীবন গঠন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা।

সর্বশেষ খবর