সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন রসুলুল্লাহ (সা.)

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন রসুলুল্লাহ (সা.)

বর্তমান সময়ে মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শুধু শহরই নয়, মাদকের আগ্রাসী দানব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামে, পাড়ায়, মহল্লায় সবখানে।  মাদকের প্রভাবে নিকষ কালো অন্ধকার নেমে আসছে সমাজ ও পরিবারে। বাড়ছে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ। ধনী কিংবা গরিব কেউই  রেহাই পাচ্ছে না এর সর্বনাশা ছোবল থেকে। ঠিক যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে গজিয়ে ওঠা মাদক সম্রাটরা। ইসলাম-পূর্ব জাহেলি যুগেও মাদকের দৌরাত্ম্য ছিল ব্যাপক। যাকে চিরকল্যাণের ধর্ম ইসলাম এসে সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর— যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো এ-ই চায় যে, মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখবে। সুতরাং তোমরা কি নিবৃত্ত হচ্ছ’ (সূরা মায়েদা-৯০, ৯১)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা মাদকের চূড়ান্ত বিধান দিয়েছেন। মাদককে ঘোষণা করেছেন ঘৃণ্য ও বর্জনীয় বস্তু হিসেবে। সব ধরনের মাদকই হারাম : যে শ্রেণিরই হোক, যে নামেরই হোক, ইসলামে সব মাদকদ্রব্যকে হারাম করা হয়েছে। পবিত্র হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু মূসা আশ’আরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে (আবু মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়েমেনে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়েমেনে তৈরি করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওইগুলো কী কী? আবু মূসা (রা.) বললেন, তা হলো বিত্ত ও মিয্র শরাব। বর্ণনাকারী সা’ঈদ (রহ.) বলেন, আমি আবু বুরদাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিত্ত কী? তিনি বললেন, বিত্ত হলো মধু থেকে গ্যাজানো রস আর মিয্র হলো যবের গ্যাঁজানো রস। (সা’ঈদ বলেন) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সব নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। হাদিসটি জারির এবং আবদুল ওয়াহিদ শাইবানী (রহ.)-এর মাধ্যমে আবু বুরদা (রা.) সূত্রেও বর্ণনা করেছেন (বোখারি)। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুকুম : রহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি ছিলেন উম্মতের জন্য চূড়ান্ত দরদি।

সেই মহান দরদি ব্যক্তিটিও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন। কেউ তা বর্জনে অস্বীকৃতি জানালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুকুম দিয়েছেন তিনি। হজরত দায়লাম আল-হিময়ারি (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলাম, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমরা শীতপ্রধান এলাকায় বসবাস করি। আমাদের সেখানে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা গম থেকে তৈরি মদ পান করে ক্লান্তি দূর করি ও শীত প্রতিরোধ করি। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাতে কি নেশার সৃষ্টি হয়? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তবে তা বর্জন কর। আমি বললাম, কিন্তু লোকেরা তা বর্জন করবে না। তিনি বললেন, যদি তারা এটা বর্জন না করে তাহলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর (সুনানে আবু দাউদ)।

মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আল্লাহ ও তার রসুল অভিশাপ দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক ও শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয়— এদের সবাইকে আল্লাহ লা’নত করেছেন (আবু দাউদ)।

মাদকই এমনই একটি অভিশপ্ত জিনিস, এর উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রহণ পর্যন্ত যে কোনো পর্যায়েই যাদের সম্পৃক্ততা থাকবে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসুলের এই অভিশাপের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা নিজেদের যত ক্ষমতাধরই মনে করুক, তারা চির অভিশপ্ত ও নিকৃষ্ট। ক্ষমতা কিংবা চালাকির আশ্রয় নিয়ে দুনিয়ার সরকার থেকে পার পেয়ে গেলেও আসমান, জমিন ও গ্রহ-নক্ষত্রের সরকার থেকে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এহেন নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখুন।  সংশ্লিষ্টদের তওবা করে একটি সুস্থ ও পবিত্র জীবনে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক গবেষক।

সর্বশেষ খবর