রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সারা বছর অনুভূত হোক সেই সুবাস

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সারা বছর অনুভূত হোক সেই সুবাস

মাহে রমজান আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা আমাদের সাধ্যমতো রমজান যাপন করেছি। ইবাদত-বন্দেগি করে তাকওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন আমরা চর্চার জীবনে এসেছি। রমজানের এক মাস যেভাবে আমরা তাকওয়াময় জিন্দেগির প্রশিক্ষণ নিয়েছি, বাকি ১১টি মাস সেভাবে তাকওয়ার চর্চা করে আবার রমজানের বন্দরে আমাদের দেহ-মন ভরাতে পারলেই সফল হবে আমাদের এ বছরের প্রশিক্ষণ। হে আমার দরদি পাঠক! রমজানের একটি মাস তারাবি-তাহাজ্জুদ, সাহরি-ইফতার, দান-সদকার মাধ্যমে এক ধরনের জান্নাতি জীবন, শৃঙ্খলার জীবনযাপন করেছি আমরা। মানুষের প্রতি প্রেমের, দরদের চর্চা করেছি। ইফতারের সময় প্রতিবেশী, পাশের দোকানদার, পথচারী, অফিসের কর্মচারী এক কথায় পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে এক ধরনের আত্মীয়তার ব্যবহার করেছি। গরিব-দুঃখীদের খোঁজ নিয়েছি। রমজান চলে গেছে। এখনো যেন আমরা সেই আমলগুলোর চর্চা আরও বেশি করে করতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে ১১ মাস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ইন্নাল্লাহা লা ইউগায়য়িরু বিকাউমিন হাত্তা ইউগায়য়িরু বিআনফুসিহিম। অর্থ : আল্লাহতায়ালা কোনো জাতিকে পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করেন।’ কোরআনের এ কথাটি জাতির ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, তেমনি ব্যক্তির ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্যি। আমরা যদি আমাদের নিজেকে না বদলাই, নিজের পরিবেশকে না পাল্টাই, তাহলে কোনো জাদুমন্ত্র বলে আমরা বদলে যাব না। কোনো দোয়ার গুণে কিংবা শুধু আনুষ্ঠানিকতার ফলে আমাদের ভিতর পরিবর্তন আসবে না। আমাদের অবশ্যই কঠোর চর্চা ও অনুশীলনীর মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে নিজেদের অবস্থাকে পরিবর্তন করার। এ পরিবর্তন যেমন বাইরের, তেমনি ভিতরেরও হতে হবে। সুফিরা বলেন, মানুষের যখন ভিতর জগৎ আলোকিত হয়ে যায়, ভিতর জগতে পরিবর্তন আসে, তখন তার বাইরে তা প্রকাশ ঘটে। আমার মনে যদি মানুষের প্রতি হিংসা না থাকে, তাহলে আমার কাজেও সেটা বোঝা যাবে। আমার কথায় বোঝা যাবে। আমার চলায় প্রকাশ পাবে।

হে আমার দীনি ভাই-বোনেরা! রমজান চলে গেলে কেন যেন আমরা আবার ঘুমিয়ে পড়ি। অলস হয়ে যাই। অবস হয়ে আসে আমাদের ইমান-আমল। কিন্তু রসুল (সা.) এবং সাহাবি (রা.)-এর জীবনী চর্চা করলে দেখা যায়, রমজান চলে গেলে তারা আরও বেশি তাকওয়ার প্রতিযোগিতায় লেগে যেতেন। মাহে রমজানে শয়তান ছিল সীমানার মধ্যে। শৃঙ্খলার ভিতর। এখন সে স্বাধীন। চাইলেই আমাদের গোমরাহির পথে টেনে নিতে পারছে। তাহলে ভেবে দেখুন, কত বেশি সচেতন-সজাগ থাকতে হবে এখন আমাদের। কতবেশি কোরআনের ছায়ায়, প্রভুর মায়ায় ডুবে থাকতে হবে আমাদের। বলছিলাম, রসুল (সা.) এবং তাঁর প্রিয় সাহাবিদের কথা। বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, রমজানের পরের ছয় মাস তারা বিদায়ী রমজানের ব্যথায় কাঁদতেন। রমজানের অভ্যাসগুলো, আমলগুলোর বেশি বেশি চর্চা করতেন। এভাবে ছয় মাস কেটে গেলে তাদের মনে এক ধরনের আনন্দের জোয়ার আসত। তখন তারা রমজান আসছে এই আনন্দ নিয়ে দিন কাটাতে শুরু করবেন আবার। রমজানকে ঘিরে তাদের প্রস্তুতি শুরু হতো ফের। এই ছিল তাঁদের রমজানময় জীবন। আফসোস! রমজান আসে রমজান যায়। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে কোনো অনুভূতিই যেন কাজ করে না। এখনো এক মাসও হয়নি, কেউ কেউ রমজানের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছি। পাপের জীবনে ডুবে গেছি। তাই বলছি, আমরা যদি ইচ্ছা না করি, কোনোভাবেই রমজানের ফায়দা নসিবে জুটবে না। তাই আসুন! আজ থেকে, এখন থেকেই আমরা শপথ নিই, আগামী রমজান আসা পর্যন্ত আমাদের জীবনে ফুটে ওঠা রমজানের ফুলগুলো ঝরতে দেব না। রমজানের ফোটা ফুলগুলো থেকে ঘ্রাণ নেব বাকি ১১ মাস। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবনকে রমজানময়, তাকওয়াময়, কোরআনময় করে দিন। আমিন। 

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

            www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর