সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত

হানাহানি বন্ধে কঠোর হোন

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্ব পাহাড়ের সবুজ প্রান্তরে রক্ত ঝরাচ্ছে। গত শনিবার প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে প্রাণ হারিয়েছে পার্বত্য এলাকার সবচেয়ে উগ্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফের সহযোগী পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের খাগড়াছড়ি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমাসহ ছয় কর্মী। একজন পথচারীও গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন তিনজন। ইউপিডিএফ এ হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী পাহাড়ি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা এবং তাদের মিত্র ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গ্রুপকে দায়ী করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্ত পরিস্থিতি তিন পার্বত্য জেলা শুধু নয়, সারা দেশের মানুষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষণীয় যে, আইনশৃঙ্খলার এ বিসংবাদের প্রায় প্রতিটি ঘটনার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামের চার সশস্ত্র পাহাড়ি সংগঠনের কোনো না কোনোটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সশস্ত্র পাহাড়ি সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে শান্ত পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠছে। প্রতিটি পাহাড়ি রাজনৈতিক সংগঠনের হাতে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় পাহাড়ি বাঙালি নির্বিশেষে প্রায় সব মানুষই তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় দীর্ঘদিন ধরে তিনটি আঞ্চলিক সংগঠন নিজস্ব স্বার্থ সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তার করত। সংগঠনগুলো হলো—পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও জনসংহতি সমিতি (লারমা)। গত বছরের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ ভেঙে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক আত্মপ্রকাশের পর থেকে অঞ্চলভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় মাসে খুন, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, গুলিবিনিময়সহ প্রায় ৬০টি ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ মাসে চার সশস্ত্র গ্রুপের দ্বন্দ্বে তিন ডজনের বেশি খুন হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর আশা করা হয়েছিল পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে। শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ও বিজিবির ক্যাম্প ছিল সাড়ে পাঁচশর বেশি। চুক্তির পর দুর্গম পার্বত্য এলাকা থেকে ৩৩৪টি ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারকে নিজেদের যথেচ্ছতা প্রকাশের সুযোগ হিসেবে দেখছে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যরা। এ হঠকারিতা বন্ধে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নিতে হবে উদ্যোগ। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ে বসবাসকারী সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়াও জরুরি।

সর্বশেষ খবর