সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হজরত আলী বলেছেন ওস্তাদের গোলামি কর

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হজরত আলী বলেছেন ওস্তাদের গোলামি কর

আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম আমাদের নবী। এ কথা যে স্বীকার করবে না সে মুমিনের খাতায় নাম লেখাতে পারবে না। ইমানের প্রথম শর্তই হলো এ দুটো কথাকে মনেপ্রাণে স্বীকার করে নেওয়া। নবী হওয়ার কারণেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে আমাদের আরেকটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তা হলো ছাত্র-শিক্ষক, গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক। হজরত নিজেই বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ একইভাবে স্রষ্টা হওয়ার কারণেও আল্লাহতায়ালার সঙ্গে আমাদের ওই গুরু-শিষ্য, শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক রয়েছে। আল কোরআনে আল্লাহ নিজেকে মানুষের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষক হওয়ার মাধ্যমেই রহমান নামের হক তিনি পূরণ করেছেন। ‘দয়াময় আল্লাহ! শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। শিখিয়েছেন বর্ণনাভঙ্গি।’

আল্লাহ ও নবী দুজনই মানবজাতির শিক্ষক। ঠিক এ কারণেই পৃথিবীতে যতগুলো মহান পেশা রয়েছে, শিক্ষকতা তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। দুনিয়াজুড়ে সভ্যতার বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা সবার আগে। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে সৎ ও সুন্দর মানুষ প্রয়োজন। আর শিক্ষকরাই পারেন সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মানুষ তৈরি করতে। তাই একটি দেশ এগিয়ে যাওয়ার পেছনে শিক্ষকদের ভূমিকা সবার ওপরে। শিক্ষক এগিয়ে গেলে এগিয়ে যায় দেশ। জাতি। মানুষ। আফসোস! আমাদের দেশের শিক্ষক-সমাজ আজ লাঞ্ছিত, অবহেলিত ও দুর্বিষহ বোঝা বয়ে বেড়ানো মানুষে পরিণত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি পর্যায়ের শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত হলেও কলেজ-স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকদের জীবনে সমৃদ্ধির ছোঁয়া নেই তেমন একটা। সরকারিভাবে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করা হয় না। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়েই শিক্ষকরা ভালো-মন্দ অনেক পথ বেছে নেন। এতে কলঙ্কিত হয়ে পড়েছে এ দেশের শিক্ষকসমাজ। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ভারী এখন ছাত্র-অভিভাবকদের মন।

যে কোনো সমস্যার গভীরে না গেলে সুষ্ঠু সমাধান আশা করা যায় না। তেমনি শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করতে চাইলেও সমস্যার গভীরে যেতে হবে। প্রাইমারি পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চতর গবেষণা বিভাগ পর্যন্ত শিক্ষকদের কী কী সমস্যা আছে এবং সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কী তা ভাবতে হবে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। একইভাবে আমাদের শিক্ষকদেরও মনে রাখতে হবে, সমাজের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো তারা নন। সমস্যা দেখে বিচলিত হয়ে পড়া, অন্যায় পথ-পদ্ধতি গ্রহণ করা শিক্ষকদের জন্য বেশি অন্যায়। আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষককে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে পাঠদান করতে হবে। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ওঠে, তা যেন আর না শুনতে হয় প্রত্যেক শিক্ষককে এ শপথ নিতে হবে। আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষাগুরুর সম্মান ও মর্যাদাবোধ কমে গেছে। আমরা প্রায় সময় শুনি, বিভিন্নভাবে শিক্ষককে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। এটা বড় বেদনার কথা। বড় হতাশার কথা। যেসব অভিভাবক শিক্ষক লাঞ্ছনা করেন কিংবা যাদের সন্তান শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করে তারা কেমন অভিভাবক আর কেমন শিক্ষার্থী বিষয়টি আমাদের চিন্তা-বিশ্লে­ষণের বাইরে। হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘একটি অক্ষরও যদি তুমি কারও কাছ থেকে শিখে থাক, তাহলে সেও তোমার ওস্তাদ। তার গোলামি করা, তার জন্য জীবন উৎসর্গ করা তোমার কর্তব্য।’ শিক্ষক দিবসের শপথ হোক শিখব যার থেকে শ্রদ্ধা জানাব তাকে। আল্লাহতায়ালা আমাদের কবুল করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর