শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামের দৃষ্টিতে মিতব্যয়িতা

মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম : পেশ ইমাম

কোনো কাজে বাড়াবাড়ি ইসলামে অনুমোদিত নয়; বরং ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যপন্থার জীবন দর্শনই হলো ইসলাম। এ কারণেই ইসলাম যেমনিভাবে কৃপণতাকে নিন্দনীয় হিসেবে চিহ্নিত করে তা পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছে, তদ্রুপ অপচয়কেও হারাম ঘোষণা করে তা বর্জনের আদেশ দিয়েছে। ইসলাম অপচয়, অপব্যয় ও কৃপণতা উভয়টি পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। মিতব্যয়িতার অর্থ হলো ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম বা আয় বুঝে ব্যয় করা। আর এই মিতব্যয়িতা শুধু এক দিনের জন্য নয় বরং সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের মধ্যপন্থি সম্প্রদায় করেছি।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৪৩। আর আমরা যদি কোরআনে বর্ণিত সেই মধ্যপন্থি সম্প্রদায় হতে চাই তাহলে আমাদের দুটি বিষয় বর্জন করতে হবে ১. কার্পণ্য ২. অপচয়, অপব্যয়।

১. কৃপণতাকে ইসলাম কবিরা গুনাহ বলে উল্লেখ করেছে। কৃপণতার খারাবি বর্ণনা করে আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য সেটা মঙ্গল, তা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। না, তা তাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কার্পণ্য করবে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলার বেড়ি হবে।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮০।

কৃপণতার ভয়াবহতা বর্ণনা করে রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কৃপণ আল্লাহ থেকে দূরে এবং লোক থেকেও দূরে।’ তিরমিজি। অন্য হাদিসে এসেছে : ‘ধোঁকাবাজ, কৃপণ ও খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করবে না।’ তিরমিজি। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো। কারণ জুলুমের পরিণতি হবে কিয়ামত দিবসে ভয়াবহ অন্ধকার। আর তোমরা কৃপণতা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ এ কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। কৃপণতা তাদের উসকিয়ে দিয়েছিল যেন তারা রক্তপাত ঘটায় এবং হারামকে হালাল জানে।’ মুসলিম, মিশকাত।

কৃপণতার কুফল বর্ণনা করে রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কৃ-পণতা থেকে তোমরা আত্মরক্ষা কর কেননা অধিক কৃপণতাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কৃপণতা তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।’ মুসনাদে আহমাদ।

অন্যদিকে ইসলাম অপব্যয়কেও হারাম ও নিষিদ্ধ করেছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কখনো অপব্যয় করবে না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ সূরা বনি ইসরাইল। উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে এ বিয়ষটি পরিষ্কার যে, ইসলাম কৃপণতা ও অপব্যয় কোনোটিই সমর্থন করে না; বরং মুমিনের পথ হলো এ দুয়ের মাঝে অর্থাৎ মিতব্যয়িতা। তাই তো আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা যখন ব্যয় করে তখন অপচয়ও করে না, কার্পণ্যও করে না বরং তারা থাকে এতদুভয়ের মধ্যপন্থায়।’ সূরা ফুরকান, আয়াত ২৫, ৬৭।

অনুরূপভাবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম (পরিমিত) পন্থা অবলম্বন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী কখনো অভাবগ্রস্ত হয় না।’

সুতরাং আসুন আমরা কৃপণতা ও অপব্যয় বর্জন করে মিতব্যয়ী হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর