বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুমিনের বৈশিষ্ট্য মিতব্যয়িতা

যুবায়ের আহমাদ

মুমিনের বৈশিষ্ট্য মিতব্যয়িতা

৩১ অক্টোবর বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। মানুষকে মিতব্যয়িতায় উৎসাহিত করতে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় দিবসটি। মিতব্যয় মানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন। অর্থাৎ কৃপণতা, অপব্যয় ও অপচয় না করে প্রয়োজনমতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করা। মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উম্মু ক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনই নিঃস্ব হয় না। তাই  ইসলাম মানুষকে অপব্যয় ও কৃপণতার ব্যাপারে সতর্ক করে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছে বার বার। শুধু একদিন নয়, সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান।

আল কোরআনে এ ব্যাপারে আয়াত নাজিল হয়েছে। মিতব্যয়িতাকে ইমানদার বা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন আল্লাহতায়ালা। ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ সূরা ফুরকান, আয়াত ৬৭।

মানুষসহ সৃষ্টিকুলের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সব রিজিক দিয়েছেন আল্লাহ। মানুষকে রিজিক ভোগের নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি রিজিক যেন অপচয় না হয় সে ব্যাপারেও কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন তিনি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আহার এবং পান কর, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৩২)। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অপব্যয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত সাদ (রা.)-কে অজুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বললেন, হে সাদ! অপচয় করছ কেন? হজরত সাদ (রা.) বললেন, অজুতে কী অপচয় হয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। প্রবহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার কর তা অপচয়। ইবনে মাজা।

কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা মিতব্যয়ীদের ‘রহমানের বান্দা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এর বিপরীতে অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৬-২৭। দুঃখজনক হলো, কিছু মানুষ ‘রহমানের বান্দা’ হওয়ার চেয়ে শয়তানের ভাই হওয়াটাকেই বেছে নিচ্ছে। অপচয় এখন আমাদের সমাজের অনেকের কাছে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়াতদ্বয়ে প্রথমে আত্মীয়স্বজন ও অভাবী লোকদের হক প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারপর অপব্যয় করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, আত্মীয়স্বজন ও অভাবীদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে দিলে অপব্যয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

অপচয় যেমন মিতব্যয়িতার প্রতিবন্ধক তেমনি অপব্যয়ও মিতব্যয়ী হওয়ার পথে অন্তরায়।  কেউ জৌলুস প্রদর্শনে কিংবা অপ্রয়োজনীয় বিনোদনে খরচ করছে লাখ লাখ টাকা আর তার পাশের একজন গরিব মানুষ হয়তো টাকার অভাবে ওষুধও কিনতে পারছে না। অপব্যয় ও অপচয় বন্ধ করে প্রয়োজনমতো খরচ করে একটু সতর্ক হয়ে অপচয়/অপব্যয়ের খরচটুকু বাঁচিয়ে মানবতার কল্যাণে তা খরচ করলে পৃথিবীতে অভাব থাকত না। অর্থের অভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত হতে হতো না কোনো রোগীকে। খাদ্য সংকটে পড়তে হতো না কোনো অভাবীকে।

আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়োও না এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়োও না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৯। অপব্যয় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পছন্দ করেননি। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাবে এটাই উত্তম।’ বুখারি ও মুসলিম।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ বোর্ডবাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর