মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাগ নিয়ন্ত্রণের ফজিলত

যুবায়ের আহমাদ

রাগ নিয়ন্ত্রণের ফজিলত

রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জীবন চলার পথে প্রায়ই আমরা রেগে যাই। কখনো কখনো রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলি। রাগের সময় তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনেক ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়। তাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক লোক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে ওসিয়ত করুন! রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রাগ করবে না।’ লোকটি বার বার বলতে লাগল আমাকে ওসিয়ত করুন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন, ‘রাগ করো না।’ বুখারি। ইসলামের দৃষ্টিতে রাগ নিয়ন্ত্রণও একটি ইবাদত। যারা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং যখন তারা ক্রোধান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ সূরা শুরা, আয়াত ৩৭। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃত বীর বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে। বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ বুখারি, মুসলিম। রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি আল্লাহর ক্ষমা পেয়ে ধন্য হবে। আল কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। (পরহেজগার তো তারাই) যারা সচ্ছলতা ও অভাবের সময় দান করে, নিজেদের রাগ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪। রাগ নিয়ন্ত্রণের পুরস্কার জান্নাত। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি রসুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, ‘রাগ করো না তাহলে জান্নাত তোমার হবে।’ তাবারানি। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে বলে আল্লাহ রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে হাশরের ময়দানে অনেক বড় পুরস্কার প্রদান করেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের রাগ প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যে কোনো হুরকে ওই লোকের নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দেবেন।’ ইবনে মাজা। রাগ দমনে করণীয়ও বলে দিয়েছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কারও গোসসা হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি তা প্রশমিত না হয় তবে যেন সে শুয়ে পড়ে।’ মুসনাদে আহমাদ। রাগ নিয়ন্ত্রণে অজু করার কথাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। তিনি বলেন, ‘রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে; আর শয়তানকে তৈরি করা হয়েছে আগুন থেকে, আর একমাত্র পানির মাধ্যমেই আগুন নেভানো সম্ভব। তাই তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তার উচিত অজু করা।’ আবু দাউদ।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শরিফ মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর