বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সময় এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের

আ হ ম মুস্তফা কামাল, এফসিএ, এমপি

সময় এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতার হাত ধরে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সূর্যসন্তানরা তাঁদের বুকের রক্ত দিয়ে এবং মা-বোন তাদের জীবনের সম্ভ্রমটুকু পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জন্ম নেওয়া নবীনতম এই রাষ্ট্রের পরতে পরতে ছিল যুদ্ধ আর ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায় তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিকে ‘সোনার বাংলা’-য় রূপান্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। ’৭৫-এ ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর এ প্রচেষ্টাকে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী রুখে দিয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর দেশটি সামরিক-অসামরিক স্বৈরাচারী অপশাসনের হাতে পতিত হয়। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁদের দেশে আসা ছিল অনিরাপদ। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দের এটি ছিল এক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। প্রাণভয় উপেক্ষা করে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সেদিনই শুরু হয় তাঁর গণতন্ত্র ও শান্তি পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে এতিম হয়ে গিয়েছিল এ দেশের জনগণ। স্বাধীন দেশেও তারা পরাধীনের মতো ছিল। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা ছিল সাধারণ মানুষের কাছে বিশাল আনন্দের সংবাদ। ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ পনের বছরের সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গ্রিক পুরাণের ফিনিক্স পাখির মতো বাংলাদেশ আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগের অর্জন :

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ’৭৫ সালে হোঁচট খাওয়ার পর আবারও বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাসে শুরু গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়। তার মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা বিশেষ করে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্বয়ম্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের মাধ্যমে এই সেক্টরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ চালু করা এবং ১৯৯৮ সালে শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মূল্যস্ফীতি ১৯৯৬ সালের ৮.৯ শতাংশ থেকে ২০০১ সালে ১.৯ শতাংশে নেমে এসেছিল, জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আগের সরকারের ৪.৫ শতাংশের তুলনায় প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশ হারে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে ৪,৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়, খাদ্যশস্য উৎপাদন ২ কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো ১৯৯৮ সালে দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষাকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেইফটি নেট কার্যক্রম শুরু করেন। গ্রহণ করা হয় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’-এর মতো দারিদ্র্যবিমোচনে যুগান্তকারী কর্মসূচি। বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতার মতো উদ্ভাবনী কর্মসূচিগুলোর সূচনাও ঘটে এই সময়ে। প্রান্তিক কৃষকের কথা চিন্তা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রথমবারের মতো কৃষকের জন্য ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করেন। নাগরিকের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে সরকারি উদ্যোগে প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছিল। মোবাইল ফোন খাতের একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটিয়ে স্বল্পমূল্যে সবার কাছে মোবাইল ফোন সহজলভ্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জামের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে জনগণের কাছে সহজলভ্য করে তোলে, যার ফলে দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সুযোগ পায়। পরিবহন খাতের বিকেন্দ্রীকরণ বেসরকারি উদ্যোগে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নির্বাচন বিশ্ব আঙিনায় বাংলাদেশকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে নতুনভাবে উপস্থাপন করে। ১৯৯৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’-এ ভূষিত করা হয়। যেই হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন, তিনিই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের স্তুতি বর্ণনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেখানে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে প্রথম আখ্যায়িত করেছিলেন Just Faaland ও John Richard Parkinson নামক দুজন অর্থনীতিবিদ। তাঁদের রচিত Bangladesh : the test case of development শীর্ষক বইতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবজ্ঞা করে বলেছিলেন, ‘যদি বাংলাদেশ উন্নতি করতে পারে তাহলে পৃথিবীর যে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারবে।’ তাঁদের কথা ভুল প্রমাণিত করে ১৯৯৬-২০০১ সালে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য মর্যাদা পুনরায় ফিরে পেয়েছিল।

২০০৮-এর দিন বদলের সংগ্রাম : সম্ভাবনার ভিত্তি স্থাপন

অভূতপূর্ব গণসমর্থন নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে। চারদলীয় জোট সরকারের দুঃশাসনের অবসান হয়। শেখ হাসিনার সরকার বিগত ১০টি বছরে অর্থনীতি ও উন্নয়ন, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রনীতিসহ সব এলাকায় বাংলাদেশকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় বিজয় অর্জন ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি মাহেন্দ্রক্ষণ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সুযোগ বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের ফোকাস ছিল জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়ন। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সবার সামনে নিয়ে আসার এই উৎপত্তি ঘটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। যে দর্শনের মূল কথা হলো জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং সকল উন্নয়নের লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণ।

২০০৯ সালে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বমন্দার সঠিকভাবে মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রেখে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করে দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা। সর্বোপরি ‘রূপকল্প : ২০২১’ অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়ণের মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে, অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধিশালী মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। আজ আমরা এসব উদ্দেশ্যই সফলতার সঙ্গে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ৮ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেও মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশের নিচে ধরে রেখেছি। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে আমরা আইসিটি ব্যবহার করছি। জনগণকে সব রাষ্ট্রীয় সেবা ডিজিটালি দেওয়া হচ্ছে। দেশের তরুণসমাজকে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। তারা ভবিষ্যৎ উন্নত বিশ্বের কাতারে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে কাজ করবে। আমাদের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা। সে অনুযায়ী প্রতি বছর নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য, যা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। গত ১০ বছরে আমাদের অর্থনীতির গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৭ শতাংশ হারে, সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৫.৬ শতাংশ থেকে ৮.০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩ গুণের বেশি, রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ৯.১ শতাংশ থেকে ১০.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাস আয় বেড়েছে ৩ গুণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে ৯ গুণের বেশি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন-ব্যবস্থায় হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু উচ্চহারে কমেছে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৬.৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২.০ বছর। বিবিএসের সর্বশেষ প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০.০ শতাংশ থেকে ২২.৮ শতাংশে এবং আর অতিদারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ১১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সব পরিসংখ্যানই আমাদের সাফল্যের কথা বয়ান করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ Statemenship-এর কারণেই আজ আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার একটি সম্ভাবনাময় ভিত রচনা করতে পেরেছি।

বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন :

গত ১০টি বছর আমাদের উন্নয়ন অর্জন সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক আন্তর্জাতিক গবেষণা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময়কর ও অনুকরণীয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। Citigroup-এর বিবেচনায় ২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক 3G (Global Grotwh Generator) Countries তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। Price Waterhouse Coopers (PwC)-এর ২০১৭-এর The World in 2050 শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামকে আগামী দিনে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যেই পরিণত হবে পৃথিবীর ২৩তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে এবং পেছনে ফেলবে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গও বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশ। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে J P Morgan-Gi Frontier Five তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেটরো) মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাপানিদের কাছে দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘আরব নিউজ’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরবর্তী কেন্দ্রস্থল হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে এটি ৩২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বাজারে পরিণত হবে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক Business Insider পত্রিকার নিবন্ধে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও তাইওয়ানের পর বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের পঞ্চম এশিয়ান টাইগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান Lowy Institute তাদের গবেষণায় এই বক্তব্যের সপক্ষে বলেছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে তাইওয়ানকে ছাড়িয়ে যাবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যান্ড ফ্রিল্যান্স’ কর্তৃক প্রকাশিত Nation Brands 2017 শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ দেশের মধ্যে ৩৯তম, যা গত বছরও ছিল ৪৪তম। প্রথমবারের মতো ২০০৯-১০ অর্থবছরে Standard and Poor’s এবং Moody’s বাংলাদেশের ওপর সভরেন ক্রেডিট রেটিং প্রণয়ন করে। তাদের ২০১৭-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিংয়ের পরিমাণ Ba3 stable। সম্প্রতি World Economic Forum (WEF) বিশ্বের ৭৪টি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ওপর সমীক্ষা করে, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-বিষয়ক Inclusive Development Index অনুযায়ী পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম এবং ভারতের অবস্থান ৬২তম, পাকিস্তান ৪৭তম, শ্রীলঙ্কা ৪০তম ও চীন ২৬তম। একই ফোরামে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা সূচকেও বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে ৯৯তম অবস্থানে এসেছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে আগের বছরের চেয়ে ৯ ধাপ এগিয়ে ১২৮তম অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে (HDI) ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। লিঙ্গসমতার দিক থেকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং টানা তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।

উপমহাদেশের নোবেলবিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সফলতার বিষয়টি তাঁর বইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে উল্লেখ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন উড়ন্ত সূচনার পর্যায়ে রয়েছে। তাঁর ভাষায় প্রবৃদ্ধি ‘তরতর’ করে বাড়ছে। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘আজকের বাংলাদেশ পুরোটাই সাফল্যের গল্প, যা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই দৃষ্টান্ত।’ গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উপনীত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিতMillennium Development Goals বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের আগে এবং ২০১৫-এর অনেক আগেই বাস্তবায়ন করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। The Rise of the South শীর্ষক জাতিসংঘের ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩’-তে যে ১৮টি দেশ এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ হচ্ছে অর্থনীতির এলাকায় একটি রোল মডেল।’ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং জিমও বাংলাদেশের প্রশংসায় পিছিয়ে থাকেননি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ২০১৫ সালে কেনিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘সব দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা, তারা কীভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করছে তা শেখা উচিত।’

বাংলাদেশকে নিয়ে সারা বিশ্বের আজকে যে উচ্ছ্বাস এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রমাণ করে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও হিরণ¥য় নেতৃত্বে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে আসতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনার নামে সবাই বাংলাদেশকে চিনতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম করপোরেশনের বাণিজ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ফরচুনের ২০১৬ সালের মার্চের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১০ বছরে তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নিজে পুরস্কৃত হয়েছেন অসংখ্য ভূষণে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্যও এনেছেন অনেক সম্মাননা। নিউইয়র্কভিত্তিক বিখ্যাত সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে চলতি বছরের বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতি সম্প্রতি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রদান করে এবং তাঁদের প্রতি মানবিক আচরণের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম Mother of Humanity উপাধিতে ভূষিত করে। সর্বশেষ বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের ২০১৮ সালের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান এখন ২৬তম স্থানে, যা গত বছর ছিল ৩০তম।

রূপকল্প ২০২১-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ :

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব লাভের পর দেশবাসীর কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘ মার্চ, ২০১৮-এ জানিয়েছে, আমরা তথাকথিত স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছি। এ ক্ষেত্রে নির্ধারণী তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য যোগ্য। বিশ্বব্যাংক বা জাতিসংঘের হিসাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পৃথক কোনো শ্রেণি নেই। আমরা এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ এবং একইসঙ্গে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলের কাতারে অবস্থান করছে। ২০১০ সালেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল বিশ্বে ৫৮তম। সে অবস্থান থেকে ১৫টি ধাপ এগিয়ে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ৪৩তম। অন্যদিকে ক্রয়ক্ষমতা বিচারে ৩২তম বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ গত আট বছরে অর্থনীতির আকারে ১৫টি দেশকে পেছনে ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, গ্রিস, পর্তুগাল, কাতার, নিউজিল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, পেরু, আলজেরিয়া, ইরাক, ভিয়েতনাম, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, সুদান, কাজাখস্তান ও কুয়েত।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতার আবশ্যকতা :

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বাংলাদেশ দীর্ঘ ২১ বছর পর প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছিল। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’-য় রূপান্তরিত হওয়ার পথে অনেকাংশে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহযোগিতায় স্বাধীনতাবিরোধী ও নব্য জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে দেশকে আবার উল্টো রথে পরিচালিত করে; যার ফলে ২০০৭ সালে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয় এবং দেশের অগ্রগতি প্রায় থেমে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতার অভাবে ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশ আবারও দুষ্টচক্রে পতিত হয় এবং ১৯৯৬ সালের সব উন্নয়ন অর্জন ব্যর্থতার পথে ধাবিত হয়। ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। দেশের জনগণ এখন অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের নিজেদের নিয়ে দেশকে নিয়ে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি কোনো শক্তিই আটকাতে পারবে না। এখন আমাদের অর্থনীতি হলো বেগবান, ওপরে যাওয়ার অর্থনীতি। এখন দেশের অর্থনীতি শুধু সামনে যাবে, আর পেছনে যাবে না। সামনে যাওয়ার জন্য যত অবয়ব যত কমপোন্যান্ট শক্তিশালী করার কথা তা করা হয়েছে। অবকাঠামো যত প্রয়োজন তা নির্মাণ হচ্ছে। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়ে যাওয়ার পর এবং এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে আমাদের শিল্প খাত ও উন্নয়নশীল এলাকার জন্য কোনোরকম কষ্ট থাকবে না। অবকাঠামোগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলেই বিদেশি বিনিয়োগ আসবে কল্পনাতীতভাবে। সব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ আসবে। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এভাবে চলমান প্রতিটি প্রকল্প, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে এগুলো হয়ে যাওয়ার পর অর্থনীতির গতি আরও বৃদ্ধি পাবে। এ উন্নয়নযজ্ঞ থেমে যাবে যদি দেশ আবার ভুল নেতৃত্বের হাতে পড়ে।

শেষ কথা :

আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্রণা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দর্শনের মাধ্যমে আমাদের মাঝে তিনি আছেন সূর্যের মতো দেদীপ্যমান। আমাদের সব কাজে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর মূলমন্ত্রকে ধারণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার সাফল্যের সঙ্গে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে বাংলাদেশকে আজ মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে। জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১০ বছরে লব্ধ উন্নয়ন অভিজ্ঞতা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মৌলিক ও অভিনব। আজ আমরা বড় অর্থনীতির কাতারে চলে এসেছি। যেখানে আমাদের সঙ্গে আছে চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো দেশ। বৈশ্বিক প্রতিকূল বিষয়গুলো প্রশমনের মাধ্যমে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান সুসংহত। টেকসই উপায়ে এ অবস্থান ধরে রাখতে এবং ক্রমে ক্রমে আরও এগিয়ে যেতে প্রয়োজন হবে উদ্ভাবনী দক্ষতা ও কৌশল, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সমতা ও সর্বজনীন অংশগ্রহণ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অংশগ্রহণ করে উন্নত প্রযুক্তির কুশলী প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ করতে হবে। যাতে তাঁদের হাত ধরে শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার ওপর আগামী দিনের টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনা হবে। ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে হলে বাংলাদেশ পরিচালনার ভার পুনরায় জননেত্রীর হাতে তুলে দিতে হবে। তিনিই পারবেন বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে সত্যিকারের একটি ভিত্তি গড়ে দিতে।

সময় এখন আমাদের সময় বাংলাদেশের এ স্লোগান সামনে রেখে জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ উপহার দেবে, ইনশা আল্লাহ।

লেখক : মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

সর্বশেষ খবর