বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনাকেই প্রয়োজন

বাহালুল মজনুন চুন্নু

শেখ হাসিনাকেই প্রয়োজন

চারদিকে বেজে উঠেছে নির্বাচনী উৎসবের বাদ্য। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্রই শুধু নির্বাচনী আলাপ, নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনামূলক বিশ্লেষণ চলছে সব মহলে, সেইসঙ্গে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের নানা হিসাব নানা সমীকরণ নিয়েও। এ ব্যাপার-স্যাপারগুলোই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য। এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন লড়াই করে গেছেন, এখন লড়াই করে যাচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দেশ ও মানুষকে ভালোবেসে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, শৃঙ্খলমুক্তির জন্য নিরলস সংগ্রামে অবিচল পথ হেঁটে চলেছেন। হত্যা, লুটপাট-রাহাজানি, দুর্নীতির মহোৎসব থেকে বাংলার মানুষকে মুক্তি দিতে আলোকবর্তিকা হাতে হাজির হয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময়ে এবং সেই আলোকবর্তিকার আলো দিয়ে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির সোপানে।

শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে দেশকে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশে আজ উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এ জোয়ারকে ‘তৃতীয় বিপ্লব’ বলা যায়। যে বিপ্লবে আপামর জনসাধারণ পাচ্ছে আর্থ-সামাজিক মুক্তি। প্রতিটি সেক্টরেই উন্নয়নের ছোঁয়া। অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি বদ্ধপরিকর। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জিডিপির হার ৭% ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের পাঁচটি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি, যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছেন। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালে যেখানে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, তা এখন ১৬১০ ডলার হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৪১.৫%, তা হ্রাস পেয়ে এখন ২২% হয়েছে। অতিদারিদ্র্যের মূল্যস্ফীতি ২৪.২৩% থেকে ১২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি যেখানে ডাবল ডিজিটে ছিল তা এখন ৫.৮৪ শতাংশ। ২০০৫-০৬ সালে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫২ বিলিয়ন ডলার তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৪.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, তিনি মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করেছেন। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ১৮ হাজার কমিউনিটি কি­নিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মাতৃমৃত্যু প্রতি হাজারে ১.৮ জনে এবং শিশুমৃত্যু ২৯ জনে হ্রাস পেয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ ১৪টির জায়গায় ৩৬টি করা হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়ে গেছে। তার আমলে যুগান্তকারী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১ কোটি ৭২ লাখ শিক্ষার্থীর মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারি করা হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। ৩৬৫টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। ফলে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার সংখ্যাগত ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতেও ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, চার লেনসহ যোগাযোগ-ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে একের পর এক জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তিনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমনে তার সরকার বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দারিদ্র্যবিমোচন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশনসহ নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছেন। তাকে তাই বলা হয় ‘উন্নয়নের জননী’। বলা হয় ‘দেশরতœ’।

তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে আনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করে দিতে চেয়েছিল ষড়যন্ত্রকারী বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দোসররা। ষোড়শ শতকে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তার ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই খারাপ।’ এ কথাটি এ যুগে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে সঠিক। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্বকে অস্বীকার করে জনমন থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করে দেশকে বানাতে চেয়েছিল পাকিস্তানের তাঁবেদার রাষ্ট্র। তাই এরা ক্ষমাহীন খারাপ মানুষ। এই ক্ষমাহীন খারাপ মানুষগুলোর চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে দেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা। মানবতাবিরোধী ভয়ঙ্কর সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করে দেশকে কেবল কলঙ্কমুক্তই করেননি, দেশে ফিরিয়ে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই শোষণমুক্ত এক আদর্শিক সমাজ। আর সেই পথেই সফলভাবে এগিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সাফল্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী হলেও তিনি আসলে সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র্র মানুষের কণ্ঠস্বর।’ সেই কণ্ঠস্বরের কল্যাণেই দেশ আজ দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত হচ্ছে, শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে পেরেছে। মাঝে মাঝে ভাবী শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না এলে এবং পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন না হলে দেশ আজ কোথায় যেত, তা ভাবতে বিস্মিত হতে হয়। তিনি দেশ শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই প্রত্যাশা, জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যার ত্যাগ-তিতিক্ষাকে মূল্যায়ন করবে।

লেখক : সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর