বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণকারীই মুসলিম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

মহান স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণকারীই মুসলিম

মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম স্ত্রীলোক। ‘মুসলিম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আত্মসমর্পণকারী। আর পারিভাষিক অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আইন পালনকারী। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পূর্ণ মুসলিম সেই পুরুষ বা নারী যার জবান ও হাত থেকে অন্যান্য পুরুষ বা নারী নিরাপদে থাকে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

হাদিসের অর্থ হচ্ছে শরিয়তের হুকুম ছাড়া যে কোনো মানুষকে যে কোনো রকমের কষ্ট দেওয়া ইসলামবিরোধী কাজ। এতে মানুষ পূর্ণ মুসলিম থাকে না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘মুসলিম সে যে নিজের জন্য যা কল্যাণকর মনে করে অন্যের জন্যও তা কল্যাণকর মনে করে।’ আহমাদ, মিশকাত। মানুষকে কষ্ট দেওয়া সদাচরণবিরোধী কাজ, যার পরিণাম জাহান্নাম। জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। কেননা সম্পর্ক ছিন্ন করাই হচ্ছে আদর্শ নষ্ট করার মূল। প্রকৃত মুসলমান না থাকার পরিচায়ক।

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, আর তাকে দুশমনের হাতেও সোপর্দ করতে পারে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেয়, এর বদৌলতে আল্লাহ মহাপ্রলয়ের দিন তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ মহাপ্রলয়ের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না, তার সঙ্গে মিথ্যা বলতে পারে না। আর তাকে অপমানও করতে পারে না। প্রত্যেক মুসলিমের মানসম্মান, ধনসম্পদ ও রক্ত অন্য সব মুসলিমের ওপর হারাম। (তিনি বুকের দিকে ইশারা করে বলেন,) আল্লাহভীতি এখানে। কোনো ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় প্রতিপন্ন করে।’ মুসলিম, তিরমিজি। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতাকে ধোঁকা দিও না, পরস্পর শত্রুতা পোষণ করো না, পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, একজনের দামের ওপর অন্যজন দাম করো না। আল্লাহর দাসেরা! তোমরা ভাই ভাই হয়ে থেকো। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তাকে নির্যাতন করতে পারে না। হেয় মনে করতে পারে না এবং অপমান-অপদস্থও করতে পারে না। তাকওয়া এখানে। নিজের বুকের দিকে ইশারা করো এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। কোনো ব্যক্তির খারাপ প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। সব মুসলিমের রক্ত, ধনসম্পদ ও মানসম্মান অন্য সব মুসলিমের ওপর হারাম।’ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাবধান! অযথা ধারণা করা থেকে বিরত থেকো। কেননা অযথা ধারণা পোষণ করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। মানুষের দোষ অনুসন্ধান করো না। গুপ্তচরবৃত্তি করো না। আল্লাহর বান্দারা! ভাই ভাই হয়ে থাকো, যেভাবে তোমাদের আদেশ করা হয়েছে। এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে লাঞ্ছিত করতে পারে না। এবং অবজ্ঞা করতে পারে না। তাকওয়া ও খোদাভীতি এখানে। এই বলে তিনি তাঁর মুবারক বুকের দিকে ইশারা করলেন। কোনো ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট, সে তার মুসলিম ভাইকে অবজ্ঞা বা ঘৃণা করবে। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মানমর্যাদা ও ধনসম্পদ হরণ করা হারাম। আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার দিকে তাকাবেন না। বরং তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেবেন।’

             লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর