রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট হোক গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য

নঈম নিজাম

ভোট হোক গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য

সব জল্পনা-কল্পনা শেষ। আজ জাতীয় সংসদের ভোট হচ্ছে। মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে আগামীর বাংলাদেশের জন্য। অথচ সেদিনও একজন প্রশ্ন করছিলেন, ভাই ভোট ঠিকমতো হবে তো? জবাবে বলেছিলাম, অবশ্যই হবে। ভোট না হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। যে সমস্যাগুলো ভোট নিয়ে হচ্ছে এমন সমস্যা অতীতেও ছিল। এখনো আছে। আগামীতেও থাকবে। কিন্তু মানুষ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এবারকার ভোট নিয়ে মানুষের কৌতূহল শুরু থেকেই ছিল। ভোট অনুষ্ঠান এবং অংশগ্রহণমূলক অবস্থান নিয়ে উৎকণ্ঠারও শেষ ছিল না। মানুষের অনেক প্রশ্ন ছিল আমাদের কাছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি ভোটে থাকবে তো? তাদের ১৮ জন প্রার্থী জেলে। অনেকে পালিয়ে। ১৬ আসন থেকে ভোটের আগেই ছিটকে গেছেন তারা। আবার কিছু এলাকায় ভোটের মাঠে নামতেই পারেনি। জামায়তের প্রার্থিতা প্রশ্নে আদালত আর ইসিতে সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল অনেক দিন। বিএনপি কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা ছিল না। ভয়-আতঙ্ক ছিল অনেক এলাকায়। আবার নিজস্ব সমস্যাও তাদের কম ছিল না। প্রার্থী বাছাই তারা ঠিকভাবে করতে পারেনি। মনোনয়ন কেনাবেচার অভিযোগ ওঠে এহছানুল হক মিলনের আসনসহ কয়েকটি আসনে। এমন অনেক টানাপোড়েনের পরও বাংলাদেশের রাজনীতির আজ টার্নিং পয়েন্ট। এ টার্নিং পয়েন্ট গণতন্ত্রের, আইনের শাসন ও আগামীর রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, উদার গণতান্ত্রিক, উন্নত সমৃদ্ধ গতিশীল এক বাংলাদেশ দেখতে চাই। হানাহানি, সংঘাত, আগুন-সন্ত্রাস নয়, সহনশীলতাই আমাদের সামনে রাজনীতির সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা।

আজকের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত। এ অর্জনে কোনো একটি দল ভোটের বাইরে থাকলে তাদেরই লোকসান। বাস্তবে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সামনে ভোটে অংশ না নেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল কি? যদি থাকত তাহলে তারা ২০১৪ সালের মতোই সরে যেত। আমার ধারণা, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট এতটুকু বুঝতে পেরেছে ভোটে না থাকলে অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে তাদের। ২০১৪ সালে ভোটে না এসে বিএনপি বড় ধরনের ভুল করেছিল। সেই ভুলের খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে। আগামীতে হয়তো আরও দিতে হবে। বিএনপি এবার ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে তাদের আর উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকত না। ২০১৪ সালে বিএনপির অনেক শক্তি, সাহস ও অবস্থান ছিল। সংসদে কিছু আসনও ছিল। সেই আসনের জোরে তারা দাপট নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সবকিছুর মোকাবিলা করেছিল। এখন ২০১৮। সময় অনেক বদলে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের ঢেউ বিএনপির রাজনীতিকে করেছে কোণঠাসা। গ্যাপ তৈরি করেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। মাঠে গত পাঁচ বছর তাদের অবস্থান ছিল না। নেতা-কর্মীর মাঝে ছিল বিশাল দূরত্ব। আর সে কারণে ঘুরে দাঁড়ানোর একটাই পথ ছিল, তা হলো ভোটে অংশ নেওয়া। মানুষ এখন আর জ্বালাও-পোড়াও কার্যক্রম পছন্দ করে না। তরুণ প্রজম্মে র চিন্তা-চেতনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতির স্বপ্নের জগৎ বদলে গেছে।

ভোটের শুরু থেকে সারা দেশ পর্যবেক্ষণে ছিলাম। সাংবাদিক ও পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে খবর নিয়েছি ভোটের সার্বিক পরিবেশের। অনেক নেতিবাচক খবরের পাশাপাশি ইতিবাচক খবরও পেয়েছি ভোটের পরিবেশের। সিলেট থেকে অনেক সহকর্মী জানান, মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। শুধু সিলেট নয়, অনেক এলাকায় ভোটের প্রচারণা ছিল জমজমাট। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার বিভিন্ন আসনে প্রার্থীরা মাঠে ছিলেন। সরগরম ছিল মাঠের ভোটের রাজনীতি। দুই দলের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি ছিলেন। এ নিয়ে উত্তেজনার শেষ ছিল না। চট্টগ্রামের ভোটের মাঠে মিছিল-সমাবেশ দুই পক্ষই সমানতালে করেছে। বগুড়ায় ঘাম ঝরে আওয়ামী লীগের বেশি। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। উত্তরাঞ্চল থেকে ঘুরে আসা এক সাংবাদিক জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই পক্ষই মাঠে ছিল, আছে। রাজশাহীতে বিএনপি’র গ্রুপিং আছে। বিভিন্ন আসন থেকে অনেক প্রার্থী ছিটকে পড়েন। তার পরও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠ ছাড়েননি। বৃহত্তর সিলেটেও ভোটের ইতিবাচক পরিবেশের খবর পাই। অনেকে হতাশ ছিলেন ইলিয়াস আলীর পত্নীর অসচেতনতার জন্য। কেউ কেউ বলছেন, ইলিয়াসের ছেলেকে রেখে দিলেই চলত। একজন বাদ পড়লে আরেকজন থাকতে পারতেন। ভোট হতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার পরিবেশের অমিল ছিল। আটকের ভয়ে অনেক এলাকায় প্রার্থী মাঠে নামেননি। আবার মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নিজেদের সমস্যাও কম ছিল না। গোলাম মাওলা রনিকে ঠাঁই দেননি বিএনপির কর্র্মীরাই। কুমিল্লার দেবীদ্বারে জাসদ প্রার্থীকে বিএনপি কর্মীরা খুঁজে পাননি। একই পরিবেশ ছিল ঢাকার উত্তরায়। মিরপুরে জামায়াত নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন ধানের শীষ নিয়ে। এই প্রার্থীকে মানুষ মাঠে দেখেনি। মিরপুরের আরেক আসনে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। এমপি নির্বাচন করার মতো শক্তি তার ছিল কিনা তা যাচাই-বাছাই করে দেখেনি বিএনপি। আলালকে বাদ দিয়ে সালামকে দেওয়া হয়েছিল ঢাকার মোহাম্মদপুরে। আবদুস সালাম ব্যস্ত ছিলেন টিভি টকশো নিয়ে। মোহাম্মদপুরে তিনি ঠিকভাবে মাঠে ছিলেন না। অথচ আলালের বসবাস ছিল মোহাম্মদপুরে। ভোটে নামলে মাঠে থাকতে হয়। হামলা, মামলার ভয়ে আপনি ঘরে থাকলে প্রার্থী হয়েছেন কেন? আপনারা কি জানতেন না ঋণখেলাপি অথবা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হয়ে ভোট করা যায় না? তার পরও দল থেকে ঋণখেলাপি অথবা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের মনোনায়ন দেওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। অবশ্য শুধু রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির জন্য ভোট করলে আলাদা কথা।

অনেক সমস্যা ও জটিলতার পরও বাংলাদেশের মানুষ ভোটে সহনশীল পরিবেশ দেখতে চায়। সাধারণ মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার দিতে হবে। আজ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলো নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অঙ্গীকার অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার সবারই রয়েছে। কিন্তু সবার কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই কমিশনের ক্ষমতা কম মনে করার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত ক্ষমতা ইসিকে সংবিধান দিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও ভালো একটি নির্বাচন ইসি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ইতিহাস হয়ে যাবে। যা আগামী দিনের গণতন্ত্রের জন্য দৃষ্টান্ত হবে। আমাদের সমস্যা অনেক আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর হিংসা-বিদ্বেষ আছে। যুগে যুগে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু মানুষকে তার গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। হোন্ডা, গুন্ডার ভোট কেউই দেখতে চায় না। সেই যুগের হ্যাঁ-না ভোট আমাদের দেখা আছে। বাক্সভর্তি ভোট দেওয়ার পর গণনার সময় দেখা যেত সেই এলাকায় এত ভোট নেই। সেই ভোট আর বাংলাদেশে আসবে না। পরিবেশ অনেক বদল হয়েছে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ভোট দেখতে চাই আজ ৩০ ডিসেম্বর। জনগণই সিদ্ধান্ত নিক বাংলাদেশের আগামী নিয়ে। চার্চিলের একটা কথা রয়েছে, ‘বছরের সবগুলো দিন রাজনীতিবিদদের। একটি দিন মানুষের। সেই দিনটি হলো ভোটাধিকার প্রয়োগের দিন।’ আজ সেই ঐতিহাসিক দিন।

ইতিহাস বলে, সবসময় ভোটের দিন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় তেমন নয়। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রয়েছে আমাদের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা। শুধু জাতীয় নয়, সমস্যা আমাদের পেশাজীবীদের ভোট নিয়েও কম নয়। আপনি কবে কাকে আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাননি, কবে কাকে সালাম দেননি, কবে চা খেতে বলেননি সব হিসাবই ভোটের দিন দিতে হয়। জাতীয় রাজনীতিতে শুধু উন্নয়নে কাজ হয় না। উন্নয়নের পথে থাকা দেশগুলোর হিসাব-নিকাশ অনেক রকমের। কখনো কখনো আফসোস করতে হয় রাজনীতিবিদদের, এত কাজ করলাম তবু ভোট পেলাম না। শুধু কাজে ভোট আসে না। মানুষ দ্রুত সব ভুলে যায়। উন্নয়নকাজের পাশাপাশি দরকার শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন। করতে হয় কর্মীদের মূল্যায়ন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেই বারোটা বেজে যায়। স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক ভোটে তখনই সাফল্য আসবে যখন মাঠে কর্মী থাকবে। আজ ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের জন্যও এক কঠিন পরীক্ষার দিন। আগামীর কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজ। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের পথ আর দেখতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখতে হবে অস্তিত্বের প্রশ্নে। উন্নতি, সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতাই দেখতে চায় মানুষ। তবে তারুণ্যের কথা বলতে হবে আগামীর সরকারকে। প্রযুক্তির বিস্ময় নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বাংলাদেশও। এই বিস্ময়কে ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তারুণ্যের জন্য সৃষ্টি করতে হবে সরকারি-বেসরকারি চাকরির বিশাল খাত। দেশে-বিদেশে থাকা সব তরুণকে কাজে লাগাতে হবে। কোটা বাতিল হয়েছে। মেধার ভিত্তিতে বাংলাদেশে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। এ পথকে সামনে নিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে সমাজের বৈষম্যমূলক অবস্থানে থাকা তরুণদেরও টেনে আনতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে সড়কে শৃঙ্খলা। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। মনে রাখতে হবে, এই বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু একটি দেশ সৃষ্টি করেছেন। শেখ হাসিনা সততা, নিষ্ঠা, শ্রম দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এই এগিয়ে নেওয়া বেগবান হবে সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতায়। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের শেষ ঠিকানা। তাকে ঘিরেই জেগে উঠতে পারে স্বপ্নের আগামী। সেই আগামী হবে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত। সংসদে থাকবে শক্তিশালী বিরোধী দল। থাকবে আইনের শাসন, নিরাপদ সড়ক আর চিন্তার গভীরতা। মিডিয়া পাবে তার স্বাধীনতা। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এগিয়ে যাবে। স্বপ্নের জাল বুনতে দরকার স্বাপ্নিক মানুষও। জনগণ জানে সেই স্বাপ্নিক মানুষটি কে। তাদের ভোট সেই স্বাপ্নিক মানুষের দিকেই যাক।

তারুণ্যের স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়। দেশে অবস্থানকারী তরুণদের পাশাপাশি এনআরবি তারুণ্যকে নিয়ে আসতে হবে আমাদের সমৃদ্ধিতে। দুনিয়াতে উঠে দাঁড়ানো দেশগুলো শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে তার তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে। প্রথম মহাযুদ্ধের পর জাপান বিদেশে অবস্থানরত তরুণ শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও জাপান এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। তারুণ্যের বুদ্ধিভিত্তিক মেধাকে কাজে লাগিয়ে জাপান সবকিছু বদলে দিয়েছিল। সেই তারুণ্যকে কাজে লাগানো জাপান আজ সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। আমাদের দরকার মেধাভিত্তিক সম্পদ। এ সম্পদের একটি অংশ এখন বিদেশে পড়াশোনা করছে। আরেকটি অংশ রয়েছে দেশে। দুই অংশকে এক করে কাজে লাগাতে হবে। বিদেশে শুধু বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছাত্ররা নয়, উত্তরাধিকারসূত্রে বসবাসরত আরেকটি প্রজম্ম  ও রয়েছে। বিদেশি নাগরিক হলেও তারাও আমাদের অংশ। সেই তারুণ্যকে সম্ভব হলে বাংলাদেশে আসার জন্য উৎসাহ জোগাতে হবে। বিশ্ববাস্তবতায় মালয়েশিয়াও তাদের প্রবাসী ছাত্রদের এভাবেই কাজে লাগিয়েছিল। আজ ভোটের পর আগামী দিনের সরকারে যারা আসবেন, তাদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুন করে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরতে হবে। আমাদের গার্মেন্ট রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে-গঞ্জে। উন্নয়নের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া সম্ভব। দরকার ভিশন ও বাস্তবায়নের দক্ষতা। পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। আর্থিক খাতে ফেরাতে হবে শৃঙ্খলা। কক্সবাজারে বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করা দরকার। পর্যটনের দরজা খুলে যাবে। হোটেলগুলোকে দিতে হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অকারণ রক্ষণশীলতার দরকার নেই। একটি দেশকে উঠে দাঁড়াতে হলে অনেক কিছু গুছিয়ে করতে হবে। নোয়াখালীর বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। সৈয়দপুরকে ঘিরে নেওয়া যায় নতুন পরিকল্পনা। আমাদের বেসরকারি খাত এগিয়ে চলছে। শতাধিক ব্যবসায়িক গ্রুপ ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সক্ষমতা রাখে। এদের উৎসাহ জোগাতে হবে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের ঋণ প্রদানে হতে হবে দায়িত্বশীল। অখ্যাত, অজ্ঞাত কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার খেলা বন্ধ করতে হবে। বন্ধক ছাড়া ঋণ দেওয়া যাবে না। আর বন্ধক করা সম্পদের ওপর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিতে হবে ব্যাংককে। তাহলে ভুয়া জাল দলিলের ঋণ বন্ধ হবে। সবকিছুতে রাজনীতি টেনে আনার দরকার নেই। মুজিবকোট পরে ব্যাংকে গেলেই ঋণ দেওয়া যাবে না। এখন দেশে সবাই আওয়ামী লীগ। অতিসুবিধাভোগীদের কারণে আসল-নকল চেনা কঠিন। তাই আগামীর সরকারের কাজ হবে নতুনভাবে সবকিছু ঢেলে সাজানো। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ সবাইকে দেন না। তাই আগামীতে ক্ষমতার অপব্যবহার কেউই দেখতে চায় না। প্রতিহিংসা ধ্বংস ডেকে আনে। ইতিবাচক চিন্তা বয়ে আনে সমৃদ্ধি। আজকের এই ভোটের দিন হোক ইতিবাচক সব কাজের মানুষদের জন্য।

            লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর