রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট দেব কাকে

আমিনুল ইসলাম মিলন

ভোট দেব কাকে

নির্বাচন এসে গেল। দরজায় কড়া নাড়ছে। দরজায় কড়া নড়লে যেমন দরজা খুলতে হয়, তেমনি নির্বাচন এসে গেল বলে ভোটারদেরও সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভোট দেব কাকে? এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটাররা তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে দলীয় নেতা-কর্মী, যাদের ভোট নিজ নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নিশ্চিত। অন্য ভাগে দলীয় শুভাকাক্সক্ষী, নীরব সমর্থক এদের ভোট দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে অন্য দলীয় প্রার্থীর তুলনামূলক বিচারের ওপর নির্ভর করে। এর বাইরে আছে অগনিত সাধারণ ভোটার, যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট দলীয় সমর্থন নেই, যারা সিদ্ধান্ত নেন একেবারে শেষ মুহূর্তে। তাদের ভোটই ভোটযুদ্ধে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এরা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ব স্ব লাভ-অলাভ হিসাব করে। এর প্রায় ৫০ ভাগ আবার নারী ভোটার। কেমন ছিলাম, কেমন আছি, সামনে কেমন থাকব এ বিবেচনাবোধ থেকে তারা ভোট প্রদান করে। কেমন ছিল বাংলাদেশের মানুষ গত ১০ বছর। ডাল-ভাতের কি খুব অভাব হয়েছিল? দুই বেলা কি মোটা ভাত খেতে পেরেছিল? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কি তাদের নাগালের বাইরে ছিল? তাদের সুখে-দুঃখে সরকার কি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল? রোগে-শোকে কি তারা ন্যূনতম সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে? তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সরকার কি এগিয়ে এসেছে? বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কি সরকারি সাহায্য এসেছে? যাতায়াতের কষ্ট কি কমেছে? এ রকম হাজারো প্রশ্নের উত্তরে জবাব শুধু একটাই এর প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার প্রায় শতভাগ সফল। খাদ্যের অভাবে বাংলাদেশে এখন আর মানুষ মরে না। দেশে বস্ত্রহীন বলতে কেউ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায়। উপজেলা পর্যায়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্যতিক্রম বাদে, ডায়রিয়া, কলেরায় কেউ মরে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অতিদরিদ্র পরিবারটির সন্তানও স্কুলে যায়। কন্যাসন্তানটি আগে যায়। বিনামূল্যে বই পায়। সঙ্গে উপবৃত্তির নামে বাড়তি কিছু টাকা পায়। টাকা পেতে কোনো ঝামেলা নেই। মা-বাবার মোবাইলে টাকা আসে। যোগাযোগব্যবস্থায় ঘটেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। বাংলাদেশে এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে এক বা একাধিক রাস্তা পাকা নয়। সাঁকো শব্দটি আগামী দিনে বাংলা অভিধানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বল্প দূরত্বেও মানুষ এখন হেঁটে যায় না। বাস, টেম্পো,  রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, অটোরিকশা মানুষের নিত্যসঙ্গী। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কৃষি বিপণন সহজতর হয়েছে। লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক কৃষক। হাট-বাজার থাকে সরগরম। ফলে দেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে। প্রায় সবাই স্বাবলম্বী। জীবন-জীবিকার নিরাপত্তাহীনতা বহুলাংশে কমেছে। সন্তান থাকে বিদেশে, টাকা পাঠায়,  পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। মানুষের সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। গ্রামীণ জনপদেও ভোগের আকার-প্রকার-স্ফীতি বেড়েছে। গ্রামীণ বাজারেও ডায়াপার, পানি গরম করার গ্রিজার, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ওভেন, ব্লেন্ডারসহ বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। মানুষ এখন ছন তো দূরের কথা, টিনের ঘরও কেউ সহজে করে না। সরাসরি পাকা ঘর সাধ্যে কুলালে ছাদও পাকা। এগুলো মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও উন্নত জীবনমানের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে বিধবা, অসহায় ও দুস্থ নারী, স্বামীপরিত্যক্তা নারী, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আর্থিক জোগানে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে প্রতি বছরই আর্থিক অনুদানের অর্থ যেমন বাড়ছে, তেমনি উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। দারিদ্র্যবিমোচনে এ খাতটি একটি যুগান্তকারী জনবান্ধব কার্যক্রম হিসেবে ইতিহাসে একদিন ঠাঁই পাবে।

দেশে বিদ্যুতের সম্প্রসারণ হচ্ছে দ্রুতগতিতে। ফলে প্রতিদিন কিছু কিছু এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আসছে। এর ফলে গ্রামীণ জনপদে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ ঘটছে। হচ্ছে কর্মসংস্থান। গ্রামীণ দারিদ্র্য কমার এটিও একটি কারণ। সরকারের এ সার্বিক উন্নয়নের ব্যাপারে দলমতনির্বিশেষে ইতিবাচক সাড়াই মেলে। মোট কথা, সরকারের বিগত দুই মেয়াদের উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো নির্মাণসহ সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ে মোটা দাগে কোনো জন-অসন্তোষ বা বিরূপ প্রচারণা নেই। যে দুটি বিষয়ে ১৯৭২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হতো, সে দুটি ইস্যুকেও শেখ হাসিনা ম্লান করে দিয়েছেন। এর একটি ভারত-প্রীতি, অন্যটি ধর্ম। ভারত-প্রীতি সম্পর্কে বলতে হয়, ভারতের সঙ্গে গত ১০ বছরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো পদক্ষেপ/কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সাধারণ ধর্মভীরু মুসলমানরাও আজ বুঝেছে, আওয়ামী লীগ ধর্মবিরোধী কোনো দল তো নয়ই, বরং এ দেশে আওয়ামী লীগ ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি, তুরাগপাড়ে তাবলিগের জমি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া। আর শেখ হাসিনা মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সারা দেশে মসজিদ-মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্তটি বর্তমান সরকার নিয়েছে তা হলো, বিগত দেড় শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি-প্রদান। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শ্রেণি ‘দাওরায়ে হাদিস’ (কামিল)-কে স্নাতকোত্তরের মর্যাদা দিয়ে তিনি শুধু সাহস, প্রজ্ঞা, বাস্তবতা ও দূরদর্শিতার পরিচয়ই দেননি; তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাই পারেন এ রকম যুগান্তকারী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে। কৃতজ্ঞ কওমি ঘরানা যখন তাকে ‘কওমি জননী’ আখ্যা দেয়, তখন মনে পড়ে পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্যে আজ থেকে ১৫২ বছর আগে ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার ‘দেওবন্দ’ নামক গ্রামে ছাত্তা নামক মসজিদের সামনে এক ডালিম গাছের তলায় ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ নামক যে প্রতিষ্ঠানের জম্ম  হয়েছিল; যা বিগত দেড় শতাব্দী ধরে এ উপমহাদেশে কওমি শিক্ষা নামে পরিচিতি লাভ করে, কিন্তু বিগত দেড় শ বছরে কোনো সরকার যার যথাযথ মূল্যায়ন করেনি।

যা একাদশ সংসদ নির্বাচনে দল বা প্রতীক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করবে।

 

লেখক : সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর