বুধবার, ২২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগের অহংকার ওরা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে

পীর হাবিবুর রহমান

ছাত্রলীগের অহংকার ওরা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে

সাম্প্রতিক সময়ে এবং বিশেষ করে গত কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তাতে এ সংগঠনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরবের অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আজকের ছাত্রলীগ তার সব কীর্তি ও মর্যাদার ঝলমলে আলো নিভিয়ে দিয়ে অভিশপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাত্রলীগ যেন মহান জাতির পিতার ছাত্রলীগ নয়। এ ছাত্রলীগ যেন আমাদের প্রথম প্রেমের আবেগ-ভালোবাসার মুগ্ধতা নয়।

একদিন গভীর অন্ধকার যুগের সময় পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ও সামরিক একনায়কদের বিরুদ্ধে খেয়ে না খেয়ে কঠিন আদর্শ নিয়ে মহামুক্তির স্বপ্ন নিয়ে শৃঙ্খলভাঙার গান গাইতে গাইতে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জেল খেটে, নির্যাতন সয়ে, জীবন ও রক্ত দিয়ে মহান আদর্শে বৈরী স্রোতের বিপরীতে সব রক্তচক্ষু আর বুলেটের শক্তিকে উপেক্ষা করে, দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে যে ছাত্রলীগ ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আদর্শে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ভিতর দিয়ে গৌরবের মুকুট মাথায় পরেছিল; ক্ষমতার পাদপ্রদীপে বেড়ে ওঠা আজকের ছাত্রলীগের মাথা থেকে সেই আদর্শের তাজ যেন খসে পড়েছে। একালের ছাত্রলীগ যে পথ ধরে হাঁটছে এ পথ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের পথ নয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে কক্ষচ্যুত পথ ধরে অন্ধকার গলিপথে বোধহীনের মতো হেঁটে যাচ্ছে। অথবা বলা যায়, এ দেশের রাজনীতির আকাশে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল নক্ষত্রের ছাত্রলীগকে ক্ষমতার ছাত্রলীগ অমাবস্যার কালো আঁধারে ডুবিয়ে দিচ্ছে।

আজ ছাত্রলীগের সম্মেলনের নয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘিরে পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, অন্যদিকে দফায় দফায় নেতৃত্বের পদে অভিষিক্তদের হামলা, এমনকি বোনের মতো সহকর্মীর মুখ ফাটিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত করা, গায়ে হাত তোলা ছাড়াও কিডন্যাপ করার মতো চেষ্টার অভিযোগ ছাত্রলীগকে ঘিরে গোটা দেশের মানুষকে চরম ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলেছে। ছাত্রলীগের চরিত্র থেকে যেন শালীনতার পর্দা একদম খুলে গেছে। আদব-কায়দা, নীতিবোধ নির্বাসিত হয়েছে। এর জন্য সারা দেশের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দায়ী নয়। ছাত্রলীগের ক্ষমতা, আধিপত্য ও লোভ-মোহে আচ্ছন্ন উন্নাসিক একটি অংশ ও ব্যর্থ নেতৃত্ব আজকের এ জায়গায় টেনে এনেছে। ছাত্রলীগ এখন পদবাণিজ্য  করে। ছাত্রলীগ এখন কমিটি বাণিজ্য করে। ছাত্রলীগ এখন টেন্ডার-তদবির, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে যায়। সহকর্মী সহকর্মীর গায়ে হাত তুলতে তুলতে ছাত্রলীগ এখন শিক্ষক পেটায়। মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি দেয়। সহকর্মীর আঙ্গুল কেটে নেয়। পদলাভের জন্য রাতভর যেমন অনশন করে, নেতৃত্ব তেমনি সমঝোতা, শান্তি প্রতিষ্ঠা না করে ক্ষমতার দম্ভে সহকর্মী ছাত্রীর গায়ে হাত তোলে। তেমনি পদের জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করে! এতটা নির্লজ্জতার ইতিহাস অতীতে ছাত্রলীগে কখনো দেখা যায়নি। এতটা আদর্শচ্যুত অতীতে কখনো হতে দেখা যায়নি। এতটা মূল্যবোধের নীতি-নৈতিকতা ও চোখের পর্দা নির্বাসিত হতে কখনো দেখা যায়নি। এই ছাত্রলীগ অতীতের যে কোনো সময়ের ছাত্রলীগের চেহারা-চরিত্রের সঙ্গে মেলে না। এখানে নেতৃত্বের, মেধার ও সাংগঠনিক দক্ষতার প্রতিযোগিতা নেই। ত্যাগের মনোভাব নেই। সততার পরীক্ষা নেই। অতীতেও নানা সময় গ্রুপিং, দলাদলিতে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে, কর্মীরা করেছে। নেতারা মীমাংসা করে দিয়েছেন। এখন নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে হামলার কিডন্যাপের অভিযোগ। এভাবে ছাত্রীদের মুখ থেঁতলে রক্ত ঝরানো, কিডন্যাপ করানোর অভিযোগ কখনো ওঠেনি।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে মুহসীন হলে একদল উন্নাসিকের আরেক দল দাম্ভিক নেতৃত্ব ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করলে তারা আর ইতিহাসে ঠাঁই পাননি। সেদিন কেউ ব্রাশফায়ারে মরেছে। কেউ রাজনীতির আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে মরেছে। খুনিরা বহিষ্কৃত হয়েছে। কারাবরণ করেছে। এবার ছাত্রীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার বহিষ্কার কোনোটিই হয়নি। নেতারা সমঝোতা করলেও অপরাধীকে আইনের হাতে কি তুলে দিতে হবে না? সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে না?

আজকের ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং একের পর ঘটে যাওয়া নির্মমতার যেমন অবসান হচ্ছে না, তেমনি দৈত্যের মতো দানবের মূর্তি নিয়ে যারা বিভিন্ন জায়গায় ত্রাস তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করে ছাত্রলীগকে তার আদর্শিক ধারায় ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। সারা দেশে ক্ষমতানির্ভর ছাত্রলীগ একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনে পরিণত হওয়ায় এই দম্ভ উন্নাসিকতা, হঠকারী ও নীতিহীন কর্মকা-ে কলঙ্কিত হচ্ছে। অথচ এখনো ছাত্রলীগের পতাকাতলে বঙ্গবন্ধু অন্তঃপ্রাণ শেখ হাসিনার প্রতি নিবেদিত সংগঠনের প্রতি গভীর ভালোবাসায় আপ্লুত হাজার হাজার মেধাবী, ভদ্র-বিনয়ী ছাত্র জড়িয়ে আছে। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ষাটের দশকে ছাত্রলীগের কর্মী থেকে কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। তার স্বামীও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ভিপি নির্বাচিত হন। ’৭৫-উত্তর দুঃসময়ে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের একবার আহ্বায়ক ও দুবার নির্বাচিত সভাপতি আমার বড় ভাই অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীরের হাত ধরে স্কুলজীবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। সে সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কি কঠিন সাধনা নিয়ে রাজনীতি করেছেন খেয়ে না খেয়ে। নেতারা যেমন ছিলেন আদর্শিক তেমনি কর্মীরা সৎ, নির্লোভ, ত্যাগী। আমরা তিন ভাই ছাত্রলীগ করেছি। এ সংগঠনের প্রতি রয়েছে গভীর আবেগ, অনুভূতি, অহংকার। কিন্তু সাম্প্রতিককালের ক্ষমতানির্ভর ছাত্রলীগ সেই অহংকার কেড়ে নিচ্ছে! আত্মগ্লানিতে জর্জরিত করেছে। ছাত্রীরা সব সময় বোনের মতো ছিল। বন্ধুর মতো তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হতো। আজ রাত গভীরে তাদের নির্যাতন করা হয়!

এ উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবময় ছাত্র সংগঠনের নাম ছাত্রলীগ। পৃথিবীর ইতিহাসে ছাত্রলীগের মতো ত্যাগী গৌরবময় ছাত্র সংগঠন নেই, যারা লড়াই-সংগ্রাম আত্মত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার জন্য দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীনতার নামে ’৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পরই এটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিশ্বের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর এবং মহাকাব্য যুগের রাজনীতিতে মহানায়কের বেশে উঠে আসা চিরসংগ্রামী শেখ মুুজিবুর রহমান তার দূরদর্শিতা দিয়ে শুরুতেই বুঝেছিলেন, এই পাকিস্তান বাঙালির জন্য শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়ন ছাড়া আর কিছুই দেবে না। তার অসীম সাহসিকতায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ছয় মাস আগে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বিলি রুমে নাঈম উদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর প্রতি বছর নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে স্বাধীনতা-উত্তর পর্যন্ত। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম, খালেক নেওয়াজ খান, কামরুজ জামান, এম এ ওয়াদুদ, আবদুল মোমিন তালুকদার, এম এ আউয়াল, রফিক উল্লাহ চৌধুরী, আজহার আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মণি, কে এম ওবায়দুর রহমান, সিরাজুল আলম খান, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর রাজ্জাক, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, শেখ শহীদুল ইসলাম, এম এ রশীদ, মনিরুল হক চৌধুরী, শফিউল আলম প্রধান (তিনি বহিষ্কৃত হলে ভারপ্রাপ্ত হন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন)। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর এম এ আউয়ালকে আহ্বায়ক করা হয়। পরবর্তী সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের ও বাহালুল মজনুন চুন্নু। পরবর্তীতে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, মোহাম্মদ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহে আলম (কার্যকরী সভাপতি), অসীম কুমার উকিল, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, ইকবালুর রহীম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদুল হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দায় চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সাইফুর রহমান সোহাগ, এস এম জাকির হোসাইন, বর্তমানে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস। ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।’ ১৯৭৩ সালের ১৯ আগস্ট ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গভীর স্নেহ নিয়ে সেদিনের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগের জন্মের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ’৪৭ সালে কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোস্টেলে ছাত্রলীগ গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কীভাবে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জিন্নাহর ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’  ঘোষণার বিরুদ্ধে যখন কথা বলা পাপের মতো তখন তিনি তার সতীর্থদের নিয়ে কীভাবে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন তার চিত্রটি তুলে ধরেন। ’৪৮ সালের ১ মার্চে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদকে নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে সকাল ৯টায় তিনি গ্রেফতার হয়ে যান। তার সহকর্মীরা গ্রেফতার হন। আর ঘন ঘন আন্দোলন শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘সেই দিন দুঃখের দিন ছিল। রাস্তায় আমরা বেরোতে পারতাম না। বাপ আমাদের বেরোতে দিত না। আর্থিক সাহায্য করে কেউ আমাদের দেখত না। রাত জেগে জেগে মোমবাতি জ্বেলে জ্বেলে আমাদের আন্দোলন করতে হয়েছিল। বাঙালির বড় দুর্দিন তখন।’ তিনি সেদিন আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি করার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কী করলাম, রাতে চিন্তা করে তা ভেবে নিতে হবে; দিনে কি ভালো করলাম, কি মন্দ করলাম। তোমরা আমার ছোট ভাই। তোমরা আমার ছেলের মতো। তোমরা আত্মসমালোচনা কর। আত্মশুদ্ধি লাভ কর। তারপর রাস্তায় বের হও। মানুষ তোমাদের কথা শুনবে। মানুষ তোমার পাশে আসবে। মানুষ তোমাকে শ্রদ্ধা করবে এবং মানুষ উৎসাহী হয়ে তোমার সঙ্গে কাজে যোগ দেবে।’ আজকের ছাত্রলীগের জন্যও এ তার অমর বাণী।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ বঙ্গবন্ধুর সব আবেদন নিবেদন উপেক্ষা করে ক্ষমতার দম্ভে উন্নাসিক হয়েছিলেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কারাগার থেকে আজকের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভাপতি ও বাহালুল মজনুন চুন্নু ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা ও আত্মসংযমের পথে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনা, মননশীলতায় ও মেধায় ছাত্রলীগকে সারা দেশে সুসংগঠিত, শক্তিশালী করেছিলেন। সেদিন ফজলুর রহমানের মতো অসাধারণ বক্তা, রবিউল আলম মুক্তাদির চৌধুরীর মতো অনলবর্ষী বক্তা, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মুকুল বোসের মতো নির্যাতিত সংগঠক, খ ম জাহাঙ্গীরের মতো নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা সংগঠনই দাঁড় করাননি, অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতা খেয়ে না খেয়ে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকলেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগঠনকে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনপ্রিয় করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্রসমাজকে টানতে গিয়ে উত্তরবঙ্গে প্রয়াত বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা, রাকসু জিএস জাহাঙ্গীর কবীর রানা, দক্ষিণে জাহাঙ্গীর কবীর নানক, অকালপ্রয়াত শহীদ খান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবদুল মান্নান ও প্রদীপ করের মতো বাকসুজয়ী ও চট্টগ্রামে জমির চৌধুরীর মতো চাকসুজয়ী মোরশেদ আলম সুজনের মতো ছাত্রনেতারা উঠে এসেছিলেন। আদর্শের পথে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে নিজেদের ক্যারিশমা দিয়ে সংগঠন করেছেন।

বাঘা সিদ্দিকীর প্রতিরোধযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সুলতান মনসুররা সিলেট থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সংগঠকের ভূমিকায় উঠে এসেছিলেন। সেদিন ছাত্রলীগ খুনি মোশতাককে জনসভা করতে দেয়নি। সেনাশাসক জিয়াকে টিএসসিতে প্রতিরোধ করে দেয়। তাদের পূর্বসূরিরা যেমন ষাটে আইয়ুব খানকে জনসভায় জুতো মেরেছিলেন, তেমনি সাহসিকতা দেখিয়েছেন আদর্শের জন্য। আজকের ছাত্রলীগ আইয়ুব-ইয়াহিয়ার মার্শাল ল জমানার অন্ধকার যুগ দেখেনি। আজকের ছাত্রলীগ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন সময়কে অবলোকন করেনি। আজকের ছাত্রলীগ মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরিবার-পরিজনসহ বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা- দেখেনি। সেই হত্যাকা-ের পর কি অন্ধকার দুঃসময় নেমে এসেছিল, কি কঠিন সংগ্রাম ও বৈরী স্রোতের বিপরীতে তাদের পূর্বসূরিদের লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে তা উপলব্ধি করেনি। আজকের ছাত্রলীগ সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের দমন-পীড়ন ও তাদের বিরুদ্ধে কঠিন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চিত্রপট দেখেনি। এমনকি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, কীভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলায় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কীভাবে দলের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন, জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছেন তার বিন্দুমাত্র বোঝার ক্ষমতা হয়নি। ওয়ান-ইলেভেনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে দলকে ক্ষমতায় আনা শেখ হাসিনার ১০ বছরের শাসনামলই শুধু দেখছে। রাজনীতির উত্থান-পতন জোয়ার-ভাটা দুঃসময় তাদের অনুভূতিতে নেই। আদর্শিক মূল্যবোধের কঠিন পথ তাদের কাছে অচেনা। পূর্বসূরিরা অর্থকষ্টে সাংগঠনিক সফরে যোগাযোগের দুর্বিষহ যাতনা সহ্য করেছেন; সেটি আজকের ছাত্রলীগ ভাবতেও পারছে না। জাতীয় রাজনীতির মূল্যবোধহীন অসুস্থ সংস্কৃতির অর্থবিত্তের মোহ ও ক্ষমতার দম্ভই শুধু বুঝতে পারছে। এই ছাত্রলীগকে সব বিতর্কিত কর্মকা- থেকে বের করে আদর্শের পথ দেখানো গণসংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব। যারা হেলিকপ্টার ভাড়া করে ছাত্রলীগের নেতাদের সাংগঠনিক সফরে নিয়ে যান, নিজেদের আধিপত্যের জন্য কমিটি বাণিজ্যের হাত বাড়ান, তাদের বিরুদ্ধেও গণসংগঠনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার অতীতের মতো ছোট করে নিয়ে আসতে গঠনতন্ত্রেও সংশোধন জরুরি। বিবাহিত অছাত্র ঠিকাদার বা ব্যবসায়ী যাতে সংগঠনের কোথাও কোনো শাখায় ঠাঁই পেতে না পারে তা যেমন মনিটর করা জরুরি, তেমনি ছাত্রলীগের যেখানেই সংঘাত আধিপত্যের লড়াই কিংবা লোভ মোহের বাণিজ্যিক পথে হাঁটতে দেখামাত্র সেখানেই কঠিন-কঠোর শাস্তির খড়্গ নামানো জরুরি। যে নেতৃত্ব বা কর্মী ছাত্রলীগের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব ও অহংকারের উত্তরাধিকারিত্ব বহন না করে তা ধুলোয় মিশিয়ে দেবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মনিটরিং শক্তিশালী করা জরুরি। একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা যাতে ছাত্রলীগকে কোথাও ব্যবহার করতে না পারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সেটি যেমন দেখা জরুরি, তেমনি নীতিহীন লোভী দুর্নীতিগ্রস্ত গণসংগঠনের মাঠ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অনিবার্য। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো, এই নীতি ছাত্রলীগের ব্যাপারে গ্রহণের জন্য সময় হাতছানি দিচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ছাত্রলীগ গৌরবের ইতিহাস রচনাই করেনি, সংগ্রামের পথ ধরে প্রতিটি আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে সাহস ও নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্য কুড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহচ্ছায়ায় বিকশিত ছাত্রলীগ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনকেই তীব্র করে সাফল্য এনে দেয়নি, ছাত্রলীগ পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করে গণআন্দোলনকেই বেগবান করেনি, আওয়ামী লীগকেও শক্তিশালী করেছে। ’৫৪-এ যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছে। লৌহমানব খ্যাত সামরিক একনায়ক আইয়ুব খানের সামরিক বাহিনী ও তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দীর্ঘ সংগ্রামে ’৬২-এর ছাত্রআন্দোলনের ইতিহাস গড়েছে। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফাকে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দিয়েছে। শহীদ শ্রমিক মনু মিয়ার গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ কাঁধে নিয়ে তাদের শপথে অবিচল থেকেছে। ৭ জুনকে ইতিহাসে ছয় দফা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই ছাত্রলীগ শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রসংগঠনগুলোকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ করে ডাকসু বিজয়ী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহাপ্রলয় বা গণজাগরণ ঘটিয়ে আসাদের রক্তমাখা শার্ট ও শহীদ মতিউরের রক্তছোঁয়া শপথ নিয়ে আইয়ুব খানের পতনই ঘটায়নি, ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে জননায়কের বেশে মুক্ত করে এনে লাখো লাখো মানুষের সংবর্ধনায় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। ছাত্রলীগ আইয়ুবের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যালট লড়াই করেছে। ’৭০-এর জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও তার ইমেজে স্বাধীনতার মহামন্ত্রে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে জনগণকে উত্তাল করেছে। ’৭১-এর গণহত্যার নায়ক পাকিস্তানের কুখ্যাত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করলে জনগণকে বিক্ষোভে বিস্ফোরিত করেছে মহান মুজিবের নির্দেশে। ছাত্রলীগ ও তাদের বিজয়ী ডাকসু নেতৃত্ব মিলে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছে। পল্টনে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ছাত্রলীগ পাকিস্তান দিবসে সারা বাংলায় ঘরে ঘরে ক্যান্টনমেন্ট আর বঙ্গভবন ছাড়া স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছে। ’৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমদকে স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস করে যে প্রস্তুতি শুরু করেছিল, সেটি ’৭১-এর অগ্নিঝরা মার্চে এসে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে। মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের জন্য, আদর্শের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন। দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। সামরিক শাসকদের, গণতান্ত্রিক সরকারের পুলিশি নির্যাতনের, প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছেন। কত শহীদের রক্তে লেখা ছাত্রলীগের ইতিহাস।

ছাত্রলীগ জাতীয় রাজনীতিতে অসংখ্য জাতীয় নেতার জন্ম দিয়েছে। অসংখ্য মেধাবী বিজ্ঞানী, আমলা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিকের জন্ম দিয়েছে। ছাত্রলীগ সারা দেশে অসংখ্য গণমুখী আদর্শিক স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর যোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদের জন্ম দিয়েছে। তারা মেধায় সাংগঠনিক দক্ষতায় বাগ্মিতায় সততায় আদর্শিকতায় আদব-কায়দায় এবং সাহসিকতায় গুণাবলি নিয়ে নিজস্ব ক্যারিশমায় নেত্বত্ব দিয়ে ছাত্রলীগের গৌরবের ইতিহাস রচনা করেছেন। সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশে ছাত্রলীগ গণতন্ত্রের দীর্ঘ সংগ্রামে অনবদ্য ইতিহাস রচনা করেছে। আজকের ছাত্রলীগ যেন তা জানে না। আগে ছাত্রলীগের নেতারা নেতা তৈরি করতেন। আদর্শিক কর্মী তৈরি করতেন। একালে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব বেআদবিতে সংগঠনকে ডুবিয়ে দেয়।

ছাত্রলীগের দীর্ঘ ইতিহাসে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে আলোকিত নেতৃত্ব দিয়েছে সমাজে। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে উঠে এসে ’৭১-এর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর অন্যতম চার প্রধান হয়েছিলেন ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলার বাণীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রখর মেধাবী শেখ ফজলুল হক মণি। স্বাধীনতার আগুন ছড়িয়ে দিতে তারুণ্যের হৃদয়ে বাস করা সেই সময়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান, ছাত্রলীগের দুবারের সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অসাধারণ সংগঠক ও গণমানুষের নেতা আবদুর রাজ্জাক। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা হয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি বাগ্মিতায় ঢেউ খেলানো দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও সাবেক এমপি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাবেক ডাকসু ভিপি ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম আবদুর রব, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল কুদ্দুস মাখন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর আদর্শিক মতবিরোধ কিংবা নেতৃত্বের লড়াইয়ে ছাত্রলীগে নানা ভাঙন এলেও মেধায় মননে প্রজ্ঞায় জাতীয় রাজনীতি থেকে ছাত্ররাজনীতি হয়ে সমাজে আলো জ্বালিয়েছেন; সেই ছাত্ররাজনীতির গৌরবের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে। অনেকে যোগ্যতা থাকার পরও ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। কিন্তু সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে আলোকিত নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জাতীয় রাজনীতি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন অসংখ্য নেতার নাম লিখে শেষ করা যাবে না। যেটি মহাকালের ইতিহাস হয়ে যাবে। কিন্তু বিশেষ করে গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতানির্ভর ছাত্রলীগ দিনে দিনে আজকে বিতর্কের যে শেষ তলানিতে এসেছে তা একদম তার বর্ণাঢ্য গৌরবের অতীতকে কলঙ্কিত করছে। এই ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শের গৌরব বহন করে না। এই ছাত্রলীগ সংগঠনের ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পারে কিন্তু জানে না কীভাবে আইয়ুবের সন্ত্রাসীদের মোস্তফা মহসীন মন্টু ও কামরুল আলম খান খসরুদের মতো প্রতিরোধ করা যায়। যুদ্ধে বীরত্ব দেখানো যায় জীবন বাজি রেখে। পিতৃহত্যার প্রতিবাদে যুদ্ধে গিয়ে বিশ্বজিৎ নন্দীর মতো ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সাহস রাখা যায়। বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের টিম গঠন করে নতুন করে প্রকৃত আদর্শিক ছাত্রলীগ কর্মী নেতাদের নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ছাত্রলীগ ঢেলে সাজানো উচিত। ডাকসুর মতোন, সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্রুত শুরু করা উচিত। প্রতি বছর এসব নির্বাচন যেমন হওয়া উচিত তেমনি দুই বছর পরপর ছাত্রলীগের সম্মেলন তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে হওয়া উচিত। ওবায়দুল কাদের যেমন দীর্ঘদিন ছাত্রলীগ দক্ষতার সঙ্গে দেখভাল করেছেন নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর, তেমনি কাউকে তার মতো অন্য সাবেকদের নিয়ে দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে হবে।

                লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর