রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হতশ্রী রেলওয়ে

এ অকাম্য অবস্থার অবসান কাম্য

এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা দেশের রেল যোগাযোগের হতশ্রী অবস্থা তুলে ধরেছে। রেল যোগাযোগকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নেওয়া হয় এক সেনাশাসকের আমলে। বাস মালিকদের আবদার রক্ষায় রেল যোগাযোগকে সংকুচিত করার ভুল পথে পা বাড়ান তিনি। ১৯৮৫ সালে রেলে লোক নিয়োগ বন্ধ করা হয়। তার পর থেকে জনশক্তি সমস্যায় ভুগছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ ৬৮ ভাগ ইঞ্জিন ও ৪৬ ভাগ মেয়াদ ফুরানো বগি নিয়েই চলছে বিপজ্জনক ট্রেনযাত্রা। এ ছাড়া ৪৫ ভাগ পণ্যবাহী ওয়াগন ও ৭১ ভাগ রিলিফ ট্রেনের মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। রেলপথগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। রেললাইনে পর্যাপ্ত পাথর থাকার কথা থাকলেও তা নেই। রেললাইনের ক্লিপগুলোও খুলে নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও কাঠের স্লিপারগুলো উধাও। ভাঙাচোরা স্লিপারগুলোকে বাঁশ দিয়ে জোড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি রেলব্রিজের মধ্যেও রেললাইনের মূল লোহার পাত না থাকায় বাঁশ দিয়ে জোড়া লাগিয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের রেলওয়ের ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার লাইনের মধ্য ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার লাইন ও ৩ হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় ব্রিজের মধ্যে ৬ শতাধিক ব্রিজ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এই মৃত্যুফাঁদের লাইন ও ব্রিজের ওপর দিয়েই প্রতিদিন চলছে হাজার হাজার যাত্রীবোঝাই ট্রেন। তা ছাড়া অধিকাংশ স্টেশনের সিগন্যাল-ব্যবস্থাও সেকেলে। লাইনের অধিকাংশ সিøপার ভাঙা-ফাটা কিংবা ক্ষয়ে যাওয়া। লোকবলস্বল্পতায় এরই মধ্যে ১৬০টি রেলস্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ৪০ হাজার ২৬৫ জন, কর্মরত আছেন ২৫ হাজার ১৮৯ জন। হতাশার মধ্যে আশার কথা হলো, রেলওয়েকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। লোকবলও বাড়ানো হচ্ছে। বন্ধ রেলপথ চালুর পাশাপাশি নতুন রেলপথ তৈরির চেষ্টা চলছে। রেলওয়ের উন্নয়নে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ৪৫টি উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করে ১৪০টি ইঞ্জিন কেনা হচ্ছে। আমরা আশা করব রেলওয়েকে সুষ্ঠু ধারায় আনতে এসব উদ্যোগ সফল হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর