শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাস ও শেখ হাসিনার বাস্তব কর্মকৌশল

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু

করোনাভাইরাস ও শেখ হাসিনার বাস্তব কর্মকৌশল

কভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস এখন বিশ্ব মহামারী। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২১০টি দেশ ও অঞ্চল। চীন থেকে ইতালি, যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র- কোথাও বাদ যায়নি ফ্লু জাতীয় এ ভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবা। গোটা বিশ^ ঘুরে গত ৮ মার্চ শনাক্ত হয় বাংলাদেশে। ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার ছুঁইছুঁই। স্বীকার করতেই হবে, কঠিন এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার যেভাবে লড়াই করে যাচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে তৃতীয় বিশে^র জন্য তো বটেই, উন্নত অনেক রাষ্ট্রের জন্যও অনুকরণীয় উদাহরণ। ছোট্ট একটি বিষয় টানলেই এ বক্তব্যের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে।

কভিড-১৯-এ পৃথিবীর তাবড় তাবড় দেশ যেখানে সংক্রমণ সংখ্যা ও তাদের অর্থনীতি নিয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছে; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে বাংলার দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের মতো দেশ যখন বেসরকারি খাতের কর্মীদের যথাক্রমে ৮০% ও ৬০% ভাগ বেতন প্রদানের কথা জানিয়েছেন; বাংলাদেশ তখন আপৎকালীন ৫ হাজার কোটি বরাদ্দের মাধ্যমে সব গার্মেন্ট শ্রমিকের বেতন ১০০% দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর আরও চারটি খাতে ঘোষণা করেন ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ। সব মিলিয়ে পাঁচটি প্যাকেজে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৯২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তার পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয়সংক্রান্ত পরিকল্পনাও সর্বত্র প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

এ তো গেল আর্থিক প্রণোদনা; আরও কী কী কারণে করোনা-সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা অনন্য ও অন্যান্য রাষ্ট্রের জন্য উদাহরণ- সে ব্যাখ্যায় পরে আসব; তার আগে জানি, এই জাতীয় মহামারী দমনে সরকার তথা মানুষের হাতে কতটুকু ক্ষমতা থাকে?

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ফ্লু জাতীয় ভাইরাসের ধরনটাই এমন। এর নিয়ন্ত্রণ মানুষের হাতে নেই। তবে কালান্তরে মানুষ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে পেয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত মহামারীতে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় অতিমারী ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা। করোনাভাইরাস আবিষ্কারের ঠিক ১০০ বছর আগে তথা ১৯১৯ সালে এসেছিল এ ভাইরাস। সে সময় গোটা বিশে^ ছড়িয়ে পড়া এ রোগে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অগণিত। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সে সময় সাধারণ মানুষকে মাস্ক পরাতে আইন পাস করতে বাধ্য হয়েছিল অনেক দেশের সরকার। গুটিকয় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল দীর্ঘদিনের জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে রাখে না, ভাইরাসজনিত রোগ সবচেয়ে বেশি ছিল প্রাচীনকালে। প্রায় ৫০০ বছর আগে গোটা মধ্য-আমেরিকাকে আক্রান্ত করা রোগের নাম ছিল গুটিবসন্ত। যাতে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ তথা ৫০ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়। একুশ শতাব্দীতে করোনার আগে এসেছিল সার্স তথা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ভাইরাস। এর উৎপত্তিও ছিল চীনে। এক জাতীয় বিড়াল থেকে সংক্রমিত হয় ভাইরাসটি। তবে এটি বাদুড়ের দেহেও পাওয়া গিয়েছিল। ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল- এই সময়ে মোট দুবার এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যদিও মৃত্যুর সংখ্যা ওই অর্থে ছড়ায়নি। এর বাইরেও প্লেগ, অ্যানথ্রাক্স, কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জলাতঙ্ক, সার্স, ইবোলা ইত্যাদি মহামারীতে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

বর্তমান যুগের পরিবহনব্যবস্থাকে ধরা হয় সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধান। স্বভাবতই একটি ভাইরাস আবিষ্কার হওয়ার পর তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মরণঘাতী কভিড-১৯ ভাইরাসও তাই। ইতিমধ্যেই এ ভাইরাস ২১০টি দেশের ২৫ লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। প্রাণ কেড়ে নিয়েছে প্রায় পৌনে ২ লাখ। অর্থাৎ মরণঘাতী করোনা গোটা বিশে^ই নিয়ন্ত্রণের বাইরে; এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশ সর্বোচ্চ পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র। করোনা ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়; চাইলেই এটাকে মাঠে নেমে দমন সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ রাষ্ট্রপ্রধানের দূরদর্শী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। সেই মানদন্ড বিবেচনায় কোথায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে করোনা আসার আগেই জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি হয়েছিল। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং ওসিসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি; জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনসহ ১১ সদস্যের আর একটি কমিটি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে সভাপতি হয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি, এডিবি, ইউনিসেফ, ইউএসএআইডি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিনিধিসহ ৩১ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলো যখন যেখানে যে উদ্যোগ প্রয়োজন, তা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করছে।

দুই. বৈশ্বিক এইমহামারী বাংলাদেশ থেকে দূর করতে বীরচিত্তে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা। প্রায় প্রতিনিয়ত ভিডিও কনফারেন্স করছেন মন্ত্রিপরিষদ, বিভাগ, জেলা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ ছাড়া ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে স্থগিত করেছেন বিশ^নেতাদের নিয়ে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান; যা শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের আবেগের অনুষ্ঠান তো বটেই, গোটা বাঙালি জাতির কাছেও প্রাণের উৎসব ছিল। বাতিল করেছেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন, বাঙালির পয়লা বৈশাখ। ছোটখাটো আরও অনেক আনুষ্ঠানিকতা তো রয়েছেই।

২৫ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো করোনা ইস্যুতে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন দেশে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯। অথচ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ওই বক্তৃতার দুই-তৃতীয়াংশই ছিল কভিড-১৯ সমস্যা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে। সেদিনই তিনি আহ্বান জানান, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ওইদিন বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ ও ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি। যা আজও চলছে। ৫০ লাখ কার্ডধারীর সংখ্যা বাড়িয়ে আরও ৫০ লাখ কার্ডধারী অর্থাৎ ১ কোটি মানুষকে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে।

রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সেদিন ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। যা দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা বলা হয়। রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয় দুই মাস থেকে ছয় মাস। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা বাড়ানো হয় চার থেকে ছয় মাস। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানোর কথা বলা হয়। এর বাইরেও বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করার কথাও তিনি বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ১৩ এপ্রিল। এদিন করোনা আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক, দিনমজুর, মধ্যবিত্তসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কৃষি খাত- সব ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রণোদনা ঘোষণা করেন। চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী- যারা মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে সামনে থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য তিনি বিশেষ সম্মানির কথা জানান। বরাদ্দ দেন ১০০ কোটি টাকা। চিকিৎসক, নার্স ছাড়াও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারীর জন্য বিশেষ বিমার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে তা ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ লাখ করা হবে। স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমা বাবদ বরাদ্দ রাখেন ৭৫০ কোটি টাকা।

বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে- (১) স্বল্প-আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ। যার মূল্যমান ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। (২) শহরাঞ্চলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএসের আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কার্যক্রম চালু। আগামী তিন মাস ধরে চলা এ কার্যক্রমের আওতায় ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। এজন্য ভর্তুকি দেওয়া হবে ২৫১ কোটি টাকা। (৩) দিনমজুর, রিকশা বা ভ্যানচালক, মোটরশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষ যারা দীর্ঘ ছুটি বা আংশিক লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন; তাদের নামের তালিকা ব্যাংক হিসাবসহ দ্রুত তৈরির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এককালীন নগদ অর্থ সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। এ খাতে বরাদ্দ হয় ৭৬০ কোটি টাকা। (৪) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত ‘বয়স্ক ভাতা’ ও ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০ উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করার কথা বলা হয়। বাজেটে এর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৮১৫ কোটি টাকা। এবং (৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন। এ বাবদ সর্বমোট বরাদ্দ হয় ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।

শিল্প খাতে যেসব আর্থিক প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে : ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা। করোনা দুর্যোগকালীন অসহায়, দিনমজুর, নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এমন গোছানো চমৎকার প্রণোদনা প্যাকেজ বিশে^র আর কটি দেশে ঘোষিত হয়েছে; তা নিশ্চয়ই ভাববার বিষয়।

তিন. বাস্তবিক অর্থে সংক্রামক রোগ কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্র নয়। যখন এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করে, তখন সেটাকে মহামারী বলে। বাংলাদেশে তা দ্রুত বাড়ছে। তার পরও গোটা বিশে^র সঙ্গের তুলনা করলে আমাদের মৃত্যুর হার এখনো অনেক কম। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সসহ জননেত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী নির্দেশনায় তা এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে। বলতেই হয়, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি (শেখ হাসিনা) যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিটি বিভাগ ও জেলার স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আগলে রেখেছেন; তা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত প্রশংসনীয়, অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রনেতা এভাবে নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। ব্যক্তি শেখ হাসিনা নিজেই তৃণমূল পর্যন্ত সম্পৃক্ত আছেন। মুহূর্তে সমস্যা জানা ও সমাধানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আপৎকালে প্রশাসন পরিচালনায় এটা একটি অভিনব দৃষ্টান্ত।

তাই বলে শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতর বা রোগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না, ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, এই মহাদুর্যোগের সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে না পারলে এ দেশ গর্বের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তাই যে যার অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব কাজ করতে হবে। বিত্তশালীদের উচিত সরকারকে এ মুহূর্তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। বিরোধিতার অন্তঃসারশূন্য রাজনীতি পরিহার করে দেশনেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে পাশে দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে। আমরা সত্যিই ভাগ্যবান জাতি। কারণ, তৃতীয় বিশে^র ক্ষুদ্র একটা রাষ্ট্র হয়েও আমরা সৎ ও সততার চর্চাকারী দুজন ‘সাহসী রাজনীতিবিদ’ পেয়েছি। প্রথমে পেয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরবর্তীতে তাঁর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির কষ্ট-দুর্দশা লাঘবে দুজনের কেউই পিছপা হতে শেখেননি। হয়তো এ কারণেই ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বঙ্গবন্ধুকে সাহসী নেতা আখ্যা দিয়ে লিখেছিলেন, ‘আই স্যালুট দ্য ব্রেভ লিডার অব অল টাইমস’। আর জননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল শেখ হাসিনার জন্য বলেছিলেন, ‘পরম প্রত্যাশায় আছি, শেখ হাসিনা মৃত্যুর ভয়ে পশ্চাদপদ হননি। সাহসের সঙ্গে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন আর ঘাতক মূষিক গোপন থেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হওয়ার আশঙ্কায় কৃমি কিট হয়ে আত্মগোপন করেছে।’ বঙ্গবন্ধু মনোবল হারাতেন না; সেই মনোবল কন্যাও হারান না। বিশ^জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের আস্থার জায়গা ঠিক এখানেই। ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে নিরস্ত্রের এই যুদ্ধে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ধৈর্য, ত্যাগ ও সাহসের সঙ্গে নেওয়া তাঁর নানা পদক্ষেপ নিশ্চয়ই বাঙালি জাতিকে মসৃণ পথে ফিরিয়ে আনবে। আর সেই সময়ে সবচেয়ে বেশি সুফল বয়ে আনবে প্রধানমন্ত্রীর আজকের ঘোষিত নানা প্রণোদনা প্যাকেজ। অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে আবারও চালকের আসনে বসবে বাংলাদেশ।

শেষ করব প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি বলা দুটি বাক্য দিয়ে। বাঙালি বীরের জাতি। অতীতে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক বাঙালি জাতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। কারণ, এ দেশের মানুষ আশ্চর্য সহনশীল। তারা নয় মাসের মধ্যে যুদ্ধ জয় করেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, এ জাতিকে কউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরাও বলি, বাঙালিকে দাবায়ে রাখা সত্যিই অসম্ভব।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর