জাতি এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ পালন করছে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন শেখ মুজিবকে আদর করে ‘খোকা’ বলে ডাকতেন। সেই খোকা নিজের ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের কারণে সবার কাছে মুজিব ভাই, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির পিতা হন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবেও স্বীকৃতি পান। শেখ মুজিবকে যেসব উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে তা তিনি নিজের বহুমুখী প্রতিভা, মানবিক গুণ, বিশাল ব্যক্তিত্ব, উদারতা, বিচক্ষণতা ও সম্মোহনী নেতৃত্ব (charismatic leadership) ও বাঙালিদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ও গভীর ভালোবাসার প্রতিদানেই অর্জন করেছেন। তিনি কোনো খেতাব পাওয়ার আশায় আজীবন আন্দোলন, সংগ্রাম ও পরম ত্যাগ স্বীকার করেননি। কোনো ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রদর্শন, তদবির বা লবিং করে কোনো খেতাব পাননি। তিনি নিজেও জানতেন না, জনগণ তাঁকে ভালোবেসে এসব উপাধিতে ভূষিত করবে। বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকেও এসব খেতাব পাননি। পেয়েছেন তাঁর প্রিয় জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তাদের কাছ থেকে।
বাঙালির অধিকার আদায় ও পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকদের শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকেই ভাষা আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বিচক্ষণতার সঙ্গে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। আর্থিক সুবিধা ও প্রধানমন্ত্রী পদের প্রস্তাবও বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন। বাঙালির অধিকার আদায় ও মুক্তি অর্জনের প্রশ্নে তিনি কোনো আপসের মনোভাব কখনো দেখাননি। জেল-জুলুম ও ফাঁসির হুমকিও তাঁকে দমাতে পারেনি। এ কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথম থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়েন। তাঁকে দেশরক্ষা আইনে বারবার জেলে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়- প্রায় সাড়ে ১৩ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আসামি বানিয়ে বিচার শুরু করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুসহ সব আসামিকে বিনাশর্তে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ’৬৯-এ রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাবেশে জনগণের পক্ষে তৎকালীন ডাকসু সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সমাবেশে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানায়। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে জেল-জুলুম দিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করে। কিন্তু শাসকদের রক্তচক্ষুকে বঙ্গবন্ধু পরোয়া করেননি। জেল-জুলুম-অত্যাচার তাঁকে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ঘটাতে পারেনি। সব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি আদায়ের জন্য তিনি আপসহীন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সব সুখ-শান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বাঙালিদের শোষণের নাগপাশ থেকে রক্ষা করে তাদের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য জনগণকে অধিকারসচেতন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে বংলার আনাচে-কানাচে, গ্রাম-গঞ্জ-শহরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বঙ্গবন্ধুর পদচারণ হয়নি। তিনি নিজ চোখে গরিব-দুঃখীদের করুণ অবস্থা অবলোকন করেছেন এবং তাদের কষ্টের কথা শুনেছেন। বাংলার গরিব-দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত-হতভাগা মানুষের দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্ট দেখে বঙ্গবন্ধু বেদনায় আবেগপ্রবণ হয়ে যেতেন। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করে ভাগ্যের পরিবর্তন করে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি তাঁর জীবনের সব অস্তিত্ব দিয়ে বাঙালিদের ভালোবেসেছিলেন। তিনি একজন খাঁটি বাঙালি ছিলেন এবং বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। ’৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জনতা কর্তৃক শেখ মুজিবকে প্রদত্ত ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি তাঁর যথার্থ প্রাপ্য ছিল। জনগণ বঙ্গবন্ধুকে চিনতে ভুল করেনি। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন বঙ্গভূমির বঙ্গবাসীর অকৃত্রিম বন্ধু। তাই তিনি বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ ও বাঙালি এ পৃথিবীর বুকে যত দিন বেঁচে থাকবে শেখ মুজিব তত দিন ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে বাঙালির মনের মণিকোঠায় শ্রদ্ধার সঙ্গে ভেসে থাকবেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি-
বঙ্গবন্ধুকে এ স্বীকৃতি কোনো সরকার, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেযনি। এ স্বীকৃতি বিশে^র বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রায় ২৫ কোটি বাঙালির রায়ে এসেছে। বিবিসি রেডিও পৃথিবীতে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ ও প্রতিবেদন পরিবেশনে বিশ^বাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য প্রথম কাতারের একটি বেতারমাধ্যম। সেই বিবিসি বাংলা পরিষেবা ২০০৪ সালে বিশ্বব্যাপী বাঙালির মধ্যে ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শিরোনামে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত একটি জরিপ চালায়। সে জরিপে পৃথিবীব্যাপী বাঙালির সুচিন্তিত মতামত ও রায়ে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পান। বিবিসি তাদের নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই ২০০৪ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তিই বিশ্বে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির মর্যাদা তুলে ধরা এবং বাঙালির জন্য পৃথক স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেননি। কেবল বঙ্গবন্ধুই এ স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করে গিয়েছেন। তাই তিনিই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালিরা সঠিক রায়ই দিয়েছে। এখানে লক্ষণীয়, বিবিসি জরিপের মান, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিতর্কমুক্ত করতে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছিল। ফলে জরিপের ভোটদান ও ফলাফলে বাঙালির প্রকৃত মতামত বা রায় প্রতিফলিত হয়েছে। ২০০৪ সালে বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ এ জরিপের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিল না। সম্পৃক্ত থাকার সুযোগও ছিল না। কাজেই বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জরিপে শতভাগ স্বচ্ছতা ছিল তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ ছিল না। সে জরিপেই সারা বিশে^র বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী লোকের সুচিন্তিত ও নিরপেক্ষ রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ স্বীকৃতি প্রমাণ করে গুটিকতক কুলাঙ্গার ছাড়া বিশ^ব্যাপী সব বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে, তাঁকে ভালোবাসে এবং মর্যাদার শীর্ষে রাখে।১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ১৬২টি। এর মধ্যে ১৬০টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয় লাভ করেন। ১০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর এ নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য ব্রিটেনের ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকা বঙ্গবন্ধুকে পূর্ব বাংলার ‘মুকুটবিহীন সম্রাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। ’৭০ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ইয়াহিয়া সরকার বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা করছিল। ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ, ’৭১ জাতীয় পরিষদের বৈঠক ডেকেও ভুট্টোর কথায় তা স্থগিত করলে পূর্ব বাংলার লোক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ২ মার্চ ঢাকা ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়। ৩ মার্চ ছাত্র-জনতা পল্টন ময়দানে সভা করে। সে সভায় বঙ্গবন্ধু শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তান থেকে মুক্ত হতে উন্মুখ হয়ে ছিল। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের বুঝতে বাকি ছিল না যে বাংলার স্বাধীনতাই একমাত্র সমাধান। স্বাধীন বাংলাদেশ তখন শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল। ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও তরুণ নেতারা বিলম্ব না করে স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রখর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তাঁর অসাধারণ বিচক্ষতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বিশ^বাসী হৃদয়ঙ্গম করেছে। পল্টনের সেই উত্তাল-উদ্দাম জনসমুদ্রে ছাত্র নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির জনক’ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘সর্বাধিনায়ক’ ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থপতি। বঙ্গবন্ধুই বিশ^ মানচিত্রে বাংলাদেশের স্থান দিয়ে বিশ^দরবারে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কাজেই পল্টনের ছাত্র-জনতার সভায় বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা আখ্যায়িত করা ছিল একটি যুগান্তকারী ও নির্ভুল সিদ্ধান্ত। তখন জনতার স্লোগান ছিল- ‘এক নেতা, এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। সেই ৩ মার্চ, ’৭১ থেকেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির জাতির পিতা। জনগণই তাঁকে তাঁর মহান অবদানের জন্য ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অসীম অবদানের স্বীকৃতি দিতে চায় না। তারা ইতিহাস বিকৃতির নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। ৭ মাচের্র ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিও-টিভিতে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করেছিল। এখনো বিএনপি-জামায়াতের নেতারা দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কোনো একক ব্যক্তি ও দলের নেতৃত্বে হয়নি।’ স্বাধীনতাবিরোধী এ মহলের বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধ একেবারে লোপ পেয়েছে। জাতির কাছে মিথ্যা কথা বলতে এবং নিজের সুবিধাবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী কুৎসিত রূপটি জনগণের কাছে তুলে ধরতে এ মহলটির লজ্জাবোধও হয় না। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ একক ব্যক্তি ও একক দলের নেতৃত্বেই হয়েছে। সেই ব্যক্তিটি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা। আর স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এতে কারও বিন্দুমাত্র বিতর্ক বা সন্দেহ থাকার কথা নয়। বঙ্গবন্ধুর সিনিয়র এবং সমকালীন অনেক নেতাই ছিলেন যেমন- এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী প্রমুখ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর বলিষ্ঠ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে তাঁদের ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাঙালির জন্য পৃথক স্বাধীন ভূখন্ডের স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য জনগণকে যেভাবে ধাপে ধাপে আত্মসচেতনতায় প্রস্তুত করে তাদের মধ্যে জাগরণ ও স্বাধীনতার জন্য উন্মুখতা সৃষ্টি করেছিলেন তা অন্য কোনো নেতা করতে পারেননি। এখানেই বঙ্গবন্ধু ব্যতিক্রম। এ কথা বললে অতি উক্তি হবে না যে, বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক ও বুদ্ধিজীবী অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর ‘কাঁদো প্রিয় দেশ’ বইতে লিখেছেন- ‘দুর্নীতি, স্বজাতিপোষণ ইত্যাদি কলঙ্ক তার (বঙ্গবন্ধু) গায়ে লাগবে না। লাগবে অতিদর্প। একা একাই তিনি একটি দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।’ লেখক বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু যে একা একাই একটি দেশ স্বাধীন করেছেন সেই দর্প বা অতিদর্প তাঁর থাকতেই পারে।
পৃথিবীর সব দেশেই স্বাধীনতা সংগ্রাম এক ব্যক্তির নেতৃত্বে হয়। যিনি ওই জাতির পিতা হন। কোনো দেশে কোনো জাতির পিতা একাধিক থাকেন না। একজনই থাকেন। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে স্বাধীনতাবিরোধীদের এসব আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের উচিত কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। জনগণের উচিত এসব মিথ্যাবাদী ইতিহাস বিকৃতকারীকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কট করা। ঘৃণা করা। বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়, মহানুভবতা, মানবতাবোধ, সততা, উদারতা, দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, কঠিন নৈতিকতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণাবলি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা, অন্যের মতামতকে সম্মান দেওয়ার মানসিকতা, কথা ও কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা ইত্যাদি থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়তে আমরা সবাই আত্মনিয়োগ করি- এটাই হোক মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।
সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ।