১২ রবিউল আউয়াল সোমবার ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের সুবহে সাদিকে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ পৃথিবীতে শুভাগমনের আনন্দকেই ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ বলা হয়। যাঁর নুরের আলোয় সারা পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল। তাঁর ওপরই নাজিল হয়েছে আসমানি গ্রন্থ আল কোরআন। তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের আলো হয়ে। হজরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তখন থেকে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবীকুলের সর্বশেষ নবী, যখন আদম (আ.) মাটির সঙ্গে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদের আরও জানাচ্ছি, আমি হাবিব আমার পিতা নবী হজরত ইবরাহিমের (আ.) দোয়ার ফসল এবং নবী হজরত ঈসা (আ.)-এর সুসংবাদ, আর আমার মাতা (আমিনার) স্বপ্ন। নবীদের মায়েরা এভাবেই স্বপ্ন দেখতেন।’ ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মা তাঁকে প্রসবের সময় এমন এক নুর প্রকাশ পেতে দেখলেন যার আলোয় সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখা যাচ্ছিল।’ ইবনু হিব্বান, আল মুসতাদরাক, তাবারানি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের উৎসব আল কোরআন দ্বারা স্বীকৃত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রসুল! আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়াপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দ প্রকাশ কর। এটি উত্তম সে সমুদয় থেকে যা তারা সঞ্চয় করেছে।’ দেখুন সুরা ইউনুস, আয়াত ৫৮। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, এখানে ফজল ও রহমত দ্বারা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন উদ্দেশ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সোমবার রোজা পালনের মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালন করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সোমবার রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’ মুসলিম। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, হাদিসে কি মিলাদুন্নবীর কথা আছে? জি, আমরা দেখতে পাই তিরমিজি দ্বিতীয় খ-ের ২০৩ পৃষ্ঠায় ‘মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ নামে একটি অধ্যায়ই রয়েছে। অনুরূপভাবে ইমাম বায়হাকি (রহ.)-এর দালায়েলুন নবুয়ত প্রথম খ-ের ৪৯ পৃষ্ঠায় ‘ফি মিলাদে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ শীর্ষক একটি অধ্যায়ও রয়েছে। সাহাবিরাও মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হজরত আমির আনসারি (রা.)-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে সন্তানাদি এবং আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের ঘটনাগুলো শোনাচ্ছেন এবং বলছেন এ দিবস অর্থাৎ এ দিবসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমিনে তাশরিফ এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে খুশি হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার জন্য রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং সব ফেরেশতা ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমার মতো এরূপ কাজ করবে, সেও নাজাত লাভ করবে। দেখুন আত তানবির ফি মাওলিদিল বাশির ওয়ান নাজির, সুবুলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তফা; জালালুদ্দিন সুয়ুতি, হাকিকতে মুহাম্মদী মিলাদে আহমদী।
লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।