রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সম্পত্তির হকদারের হক মারা হারাম

আবদুর রশিদ

বহু মানুষ আছে যারা হকদারের হক মেরে খায়, অথচ তা তাদের জন্য হারাম। যেহেতু মহান আল্লাহ প্রত্যেক হকদারকে তার ন্যায়সংগত হক প্রদান করেছেন। সুতরাং মহান আল্লাহর সেই ভাগ-বণ্টন বিধানে কারও হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। বৈধ নয় অন্যের হক আত্মসাৎ। যেমন শুদ্ধ নয় সে হক হকদারকে ফেরত না দিয়ে করা তওবা। অনেকে নিজের বোনকে বাবা-মার মিরাস থেকে বঞ্চিত করে। কেউ করে বাবা-মাকে হাত করে নিজ ভাইকে বঞ্চিত। কেউ কেউ যাবতীয় সম্পত্তি নিজের মেয়ের নামে লিখে দিয়ে মেয়ের চাচাকে বঞ্চিত করে। আমাদের দেশে অনেক সময় বাবার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার দেওয়া হয় না। দিলেও অনেক কম দেওয়া হয়। অথচ বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার আল কোরআনের সুরা নিসার ১১ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ বিশেষভাবে আদেশ দিচ্ছেন, দুই মেয়ের সমান অংশ এক ছেলে পাবে।’

এ সুরার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে বিস্তারিত উল্লেখ হয়েছে কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের কোন সদস্য কত অংশ পাবে। আল্লাহ সম্পত্তি সুন্দরভাবে ভাগ করে দেওয়ার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। এখানে লক্ষণীয়, নারী যেমন তার বাবার রেখে যাওয়া জায়গা-জমিতে অংশ পাবে, তেমনি অস্থাবর সম্পত্তিতেও পাবে। বাবার রেখে যাওয়া নগদ টাকা-পয়সা, ঘরের আসবাবপত্র, দোকানের মাল, বিভিন্ন জিনিসেও অংশ পাবে। বাবার বাড়ির ভিটিতেও অংশ পাবে।

মহান আল্লাহ মিরাস ভাগ-বণ্টনের ব্যাপারে বলেন, ‘এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। এবং যে আল্লাহ ও রসুলের অনুগত হয়ে চলবে আল্লাহ তাকে বেহেশতে স্থান দান করবেন, যার নিচে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এ মহান সাফল্য। পক্ষান্তরে যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্য হবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ সুরা নিসা, আয়াত ১৩-১৪। কোনো পাপের কারণে অথবা অবাধ্য হওয়ার জন্য নিজ ছেলেকে ত্যাজ্য করে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা বৈধ নয়। ছেলে যদি কাফির হয়ে যায় তাহলে ইসলাম অনুসারে সে এমনিই মিরাস থেকে বঞ্চিত হবে। তার জন্য দলিল বা উইলপত্র লেখার প্রয়োজন নেই। মরার আগে মিরাস ভাগ করে লিখে দেওয়া কারও জন্য উচিত নয়। কারণ ভাগ-বণ্টনের পর যদি কোনো ওয়ারিশ মারা যায় তাহলে হিসাবে জটিলতা বা বিভ্রাট সৃষ্টি হতে পারে। এমনও হতে পারে, একদিন এমন আসবে যেদিন ওয়ারিশরা তাকে ঘর থেকে বের করে দেবে। তার মরার পর ওয়ারিশদের মাঝে ঝগড়া হওয়ার আশঙ্কা হলেও, তাদের ভুলের জন্য সে জিজ্ঞাসিত হবে না। সুতরাং উত্তম হলো নিজের মাল হাতছাড়া না করা এবং আল্লাহর ভাগ-বণ্টনের ওপর ভরসা রাখা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্যের হক আদায়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তৌফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর