স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জন্মলগ্নে যে দেশটি নির্দয়ভাবে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে, অভিহিত হয়েছে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে, সে দেশের সুবর্ণ সম্ভাবনা এখন বিশ্বের নামিদামি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আলোচ্য বিষয়। ৪৯ বছর আগে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটির চেয়েও কম। ৪৯ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৯ কোটিরও বেশি। এ সময়ে ঘরবাড়ি, স্থাপনা এবং রাস্তাঘাট কলকারখানা নির্মাণে বিপুল কৃষিজমি ব্যবহৃত হয়েছে। তারপরও যে দেশটি শত শত বছর ধরে খাদ্য ঘাটতির দেশ বলে বিবেচিত হতো, সে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বাধীনতার পরও অন্তত দুই যুগ ধরে যে দেশের মানুষ বিদেশি পুরনো পোশাকের ওপর নির্ভরশীল ছিল সে দেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম এবং উৎপাদনে দ্বিতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, আম উৎপাদনে সপ্তম, জনশক্তিতে অষ্টম, বাইসাইকেল রপ্তানিতে অষ্টম, আউটসোর্র্সিংয়ে অষ্টম, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে অষ্টম, মৌসুমি ফল উৎপাদনে দশম স্থানে রয়েছে। এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় করোনাভাইরাস মহামারী। মহামারী প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য আকাশচুম্বী। নানা অব্যবস্থাপনা ও ঘাটতির পরও মহামারী মোকাবিলায় বিশ্বের ২০তম সফল দেশের তালিকায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে একটি র্যাংকিংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ডাটা মিডিয়া ব্লুমবার্গ বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী ২০তম ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্থানের স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪০তম অর্থনীতির দেশ। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দেড় দশক পর বাংলাদেশ ২৫তম স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হবে। ৪৯ বছরে বাংলাদেশের সাফল্য অবশ্যই গর্বের। তবে সুখী সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তা অর্জনে নিরন্তর এগিয়ে যেতে হবে। আত্মপ্রসাদের কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়।