এ আধুনিক যুগের নগর জীবনে বাঙালির বর্ষবরণের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে পান্তা-ইলিশ। বাঙালিত্বের সঙ্গে যে মাছের সম্পর্ক নিবিড় সেই ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল ৬৫ দিন। শুধু ধরা নয়, ওই সময়ে বেচাকেনাও ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯ মে মধ্যরাত থেকে কার্যকর ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার ইতি ঘটেছে ২৩ জুলাই। গতকালই শুরু হয়েছে ইলিশ ধরা। পদ্মা, মেঘনাসহ দেশের সব বড় বড় নদ-নদীতে চলছে ইলিশ ধরার উৎসব। দীর্ঘ ৬৫ দিন বেকার থাকার পর আবারও সাগরে নেমেছেন জেলেরা। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছেন তারা। দীর্ঘদিন সাগরে মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকার পর এবার সুফল মিলবে এমনই আশা করা হচ্ছে। এ বছর ৬ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ ধরার টার্গেট নিয়েছেন সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীলরা। এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে জেলেরা মাছ ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, উপকরণ এবং খাদ্যসামগ্রী ট্রলারে ওঠানো শুরু করেছেন নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ১০ বছর আগে দেশের ২১ উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫ থেকে ১৩০ উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ইলিশের অভয়াশ্রম। গত বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা হয়েছিল এবার অন্তত ১ লাখ টন বেশি ইলিশ ধরা হবে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। বলা হয় মাছের রাজা ইলিশ। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ইরান, মালয়েশিয়াসহ আরও অনেক দেশে পাওয়া যায় এ মাছ। তবে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। পদ্মার ইলিশের কোনো তুলনা নেই। এমনকি বাংলাদেশের উপকূলভাগে যে ইলিশ ধরা পড়ে তার স্বাদও অনন্য। ইলিশের ডিম পাড়া মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রেখে গত এক দশকে ইলিশের উৎপাদন অন্তত দ্বিগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে আরও কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের মানুষ আরও বেশি খেতে পারবে তাদের প্রিয় মাছ। ইলিশ ধরার মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরার অভিযান সফল হোক।