বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি দরকার

মেজর (অব.) আখতার

বিএনপিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি দরকার

রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত হলো রাজনীতি। যারাই যখন ক্ষমতায় গেছে বা ক্ষমতায় থেকেছে বা ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত হয়েছে এর সবকিছুর পেছনে কাজ করেছে রাজনীতি। রাজনীতি কোনটি কখন সঠিক তার কোনো নির্দিষ্ট গন্ডি নেই। সফল বা ব্যর্থ না হওয়া পর্যন্ত রাজনীতির মূল্যায়ন হয় না। রাজনীতি একটি চলমান অতি গতিশীল কর্মকান্ড যার কোনো বিরতি নেই। তাই সময়ের মুখোমুখি জনগণের ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষার ওপর নির্ভর করে রাজনীতির প্রকাশ ও প্রয়োগ। অনেক বড় বড় অতি জনপ্রিয় এবং দুর্দান্ত প্রভাবশালী নেতাও যেমন রাজনীতির মারপ্যাঁচে জনগণের ভাষা বুঝতে না পেরে কুপোকাত হয়েছেন, তেমনি অনেক সময় অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি বা দল জনগণের নীরব ও পরোক্ষ সমর্থনে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। বিশ্ব থেকে আমাদের উদাহরণ নেওয়ার দরকার নেই। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বা ৭ নভেম্বর আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে দুটি পরিষ্কার উদাহরণ। ১৪ আগস্ট রাতেও জনগণ ভাবেনি যে আগত ভোরে জাতির জন্য একটি কলঙ্কজনক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটবে। এখন যে যা-ই বলুক চরম বাস্তবতা হলো, সেদিন ঘটনাটি ঘটেছে এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও চরম সত্য কলঙ্কময় সেই ঘটনার প্রতিবাদ জনগণ করতে সাহসও পায়নি। কেন জনগণ সেদিন প্রতিবাদ করতে পারেনি নিশ্চয় তার পেছনে বাস্তব কারণ ছিল।

আবার ’৭৫-এর নভেম্বরের শুরুতে যখন রাতের অন্ধকারে সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল তখন এবং ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের নামে যখন ক্ষমতার পরিবর্তন হয় তখন জনগণ কোনো প্রতিবাদ না করে নীরবই ছিল। ৩ নভেম্বর ক্ষমতার পালাবদল হয়েছিল জনগণের প্রত্যাশার বাইরে এবং নতুন ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসীর ধারণা ছিল না। এ সুযোগে ভারতবিদ্বেষী এক নতুন রাজনীতির অঙ্কুর গজায় ভারতেরই সর্বাত্মক সহযোগিতায় স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে। জনগণ নীরবে দেখে সেই ভারতবিদ্বেষী রাজনীতির নবউত্থান যাকে অনেকে পাকিস্তানের তথা স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তির নতুন আবির্ভাব মনে করে। এ রাজনীতির সেই ভুল ভাঙাতে ক্ষমতায় চলে আসেন স্বাধীনতার পক্ষের তথা মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত এক নেতা। এসব পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেছে রাজনীতি। রাজনীতির ভুল চালে কেউ হয়েছে কুপোকাত আবার সময়ের সঠিক রাজনীতির সফলতার সুযোগ নিয়ে হয়ে গেছেন মহানায়ক। এভাবেই ৫০ বছর ধরে চলে আসছে রাজনীতির বিবর্তন স্বাধীন বাংলাদেশে। তাই সময়ের বিবর্তনে সঠিক এবং ভুল রাজনীতির উত্থান-পতনের ইতিহাসই বাংলাদেশের রাজনীতির গত ৫০ বছরের ইতিহাস বলা যায়।

রাজনীতি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতি দ্রুতমান একটি প্রক্রিয়া। যারা এর সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারেননি তারাই রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে গেছেন। রাজনীতিতে ভুলের জন্য চরম খেসারত দিতে হয়। ক্ষমতায় থেকে সবাই নিজেদের চালকে দাম্ভিকতার সঙ্গে চালান। কারণ তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে এবং চারপাশ ঘিরে রাখে অতি স্তাবক ও মোসাহেবরা। ফলে দাম্ভিকতাপূর্ণ চাল জনগণকে দূরে সরিয়ে দেয়। যে চালে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের আশাবাদ তৈরি করতে না পারলে তা ক্ষমতাসীনদের চোখে যতই জনকল্যাণকামী বা জনস্বার্থে হোক কিন্তু তা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। সারা বিশ্বে সাম্যবাদ বা কমিউনিজমের কোনো স্থান না থাকলেও চীন, কিউবা বা উত্তর কোরিয়া এখনো সময়োপযোগী রাজনীতি হিসেবে তার প্রভাব অব্যাহত রেখেছে। ’৭৫-এর আগস্টের আগে বাংলাদেশে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো শাসক দলের কাছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা তথা নব্য সাম্যবাদ বা বামপন্থি রাজনীতি তথা বাকশালি রাজনীতি সঠিক ছিল কিন্তু এজন্য জনগণকে আগেভাগে প্রস্তুত করা হয়নি। যার সুযোগ নিয়েছিল শাসক দলেরই ডানপন্থি অংশ এবং সুবিধাভোগীরা। সেদিনের সংঘাতটি ছিল মূলত দলের ভিতরেই ডান ও বামদের মধ্যে এবং উভয়েই ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি। সেদিন দলের ভিতরের ডানপন্থিরা চরম রক্তপাতের মাধ্যমে দলের ভিতরের বামদের পরাজিত করে কিন্তু চরমভাবে রক্ত দিতে হয় পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ দলের শীর্ষ নেতাকে। তবে জনগণ যে ওই হত্যাকান্ডকে সমর্থন করেনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় পরবর্তীতে যখন হত্যাকারীদের বিচার ও ফাঁসি হয় তখন জনগণ কোনো প্রতিবাদ করেনি। তা ছাড়া সময়ের বিবর্তনে জনগণেরও পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতির গ্রহণযোগ্য মূল স্তম্ভ হলো মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ১৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরে আবারও শুরু হয় নতুন সংঘাত ক্ষমতাসীন ডানদের মধ্যে। জাতি নীরবে দেখল আবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মধ্যেই পরস্পরবিরোধী সংঘাত। এ সংঘাতে ভারতের পক্ষের এবং বিপক্ষের রাজনীতি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং পরাজিত হয় ভারতের পক্ষের রাজনীতি। এর সঙ্গে যোগ হলো নতুন উপসর্গ স্বাধীনতাবিরোধী। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে স্বাধীনতাবিরোধী তথা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো পক্ষ থাকতে পারে না। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো যাদের স্বাধীনতাবিরোধী বলা হচ্ছে তারাও এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা নিজেদের এ পরিচয়কে অস্বীকারও করছে না। উল্টো বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মূল পক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে তারা তাদের সম্পর্ক তৈরি করে। এখানেই শুরু হয় রাজনীতির নতুন মোড়। প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি হবে নাকি বিপক্ষের? এ প্রশ্নটিই হয়ে যায় তৎকালীন চলমান রাজনীতির মুখ্য অবস্থান। ৭ নভেম্বর-উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি চমকপ্রদ হলো বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বারবার বিজয়ী রাজনৈতিক দল হয়েও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে আপস করতে গিয়ে বারবার নিজেদের বিপর্যয় ডেকে এনেছে যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো অব্যাহত।

৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতা বিপ্লবের সরকার তার পথ চলতে গিয়ে মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মতো প্রগতিশীল নেতাকে বাদ দিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী শাহ আজিজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করে। যা আজও জনগণ মেনে নিতে পারেনি। তারপর আবার স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে পাকিস্তান প্রত্যাগত একজন অফিসার যার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গঠিত স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারক-বাহক সেনাবাহিনীর প্রধান বানানোও জনগণ ভালো চোখে দেখেনি। সেদিন সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুল করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং পাকিস্তানের মূল মদদদাতাকে দেশে আসার সুযোগ দিয়ে। সব ভুলের চরম মূল্য দিতে হয় ৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বীরউত্তম ও সেক্টর কমান্ডার রাষ্ট্রপতিকে। তবে জনগণ সেই হত্যাকে মেনে নেয়নি। যার ফলে অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ফাঁসি দেওয়া সম্ভব হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, সময় ও অবস্থার সুযোগে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দাবিদার ও স্বাধীনতার পরে দেশে প্রত্যাগত পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি অতি স্থূল কারণ দেখিয়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাত্তারের কাছ থেকে বন্দুকের নলে বিনা রক্তপাতে স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার শক্তিই ক্ষমতা নিয়ে নেয়। কিন্তু মূল হোতা ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী।

১৯৮২ থেকে ’৯০। বাংলাদেশের রাজনীতির এক কালো কলঙ্কময় অধ্যায়। যদিও জনগণের সর্বাত্মক আন্দোলনে ও দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে কলঙ্কময় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৯১ সালে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রা হয়। সে যাত্রায় শনি আবার প্রভাব ফেলে দেশের ভিতরের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করা পক্ষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের মাধ্যমে। সেদিন কিন্তু স্বাধীনতার সরাসরি বিরোধীর সমর্থন ছাড়াও ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় যেতে পারত। ক্ষমতাসীন মূল দলের ছিল ১৪২টি সংসদীয় আসন এবং সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও ৯টি আসনের। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতের বাইরে আরও ১৪টি আসন ছিল যাদের মধ্য থেকে নয়জনকে নিয়ে একটি অপবাদমুক্ত সরকার গঠন অতি সহজেই করা যেত। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে চটজলদি করতে গিয়ে ভুল রাজনীতির ফাঁদে পা ফেলে দিয়েছিল সেদিন ক্ষমতার প্রতি অতি আগ্রহীরা। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সেই সমর্থনকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের চরম বিশ্বাসঘাতকতায় জনগণের নির্বাচিত সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে জনগণের আস্থাহীনতার কারণে আগাম নির্বাচন দিয়েও সে সরকার তিন মাস টিকতে পারেনি। একেই বলে ভুল চাল এবং তার খেসারত! পাঁচ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছিল সেদিন দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশ্বাসী সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটি।

’৯৬-এর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০০১ সালে নির্বাচনে চরম ভরাডুবি হয়। বিগত সরকারের ব্যর্থতার সুযোগে আবারও ক্ষমতায় আসে জাতীয়তাবাদী শক্তি কিন্তু সঙ্গে নিয়ে আসে আবারও কপাল পোড়া অলক্ষী উটকো ঝামেলা। ফলে ব্যর্থ হয় সময়মতো নির্বাচন করতে, যার ফলে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। জনগণ কখনই স্বাধীনতাবিরোধীদের যেমন ক্ষমতায় দেখতে চায় না, তেমনি সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষিত সমাজ, আলেম-ওলামা কেউই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে ন্যূনতম রাজি নয়। এর বলিষ্ঠ প্রমাণ যখন একের পর এক স্বাধীনতাবিরোধীর ফাঁসি কার্যকর হলো তখন তাদের দলের বাইরে কেউ টুঁশব্দটিও করেনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ অভিমান করে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। সে অভিমান দেশের জন্য কাল হয়ে গেছে। সময় কারও জন্য বসে থাকে না। সময়ের সুযোগে ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতার পক্ষশক্তিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে জাতীয়তাবাদীরা আবারও ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এবং স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেবে। এ প্রচারণার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদের বেকায়দায় ফেলে দিয়ে বিভিন্ন অপবাদে জর্জরিত করছে এবং জাতীয়তাবাদী দলে তাদের কোণঠাসা করে ফেলছে। সরকার আজ অত্যন্ত সুকৌশলে এবং চমৎকার পারদর্শিতায় দেশকে দুই ভাগ করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি পক্ষ, অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতার তথা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের পক্ষ। তাই আজকে সব সরকারি মহল বিশেষ করে পুলিশ বিএনপির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের জনগণকে স্বাধীনতার পক্ষ ও ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসী জনগণের একটি অংশকে একক নেতৃত্বে সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছেন এবং এর প্রভাব রাষ্ট্রে ও প্রশাসনে ফেলতে পেরেছেন। এ বিবেচনায় বিচার বিভাগ থেকে নিয়ে পুলিশ, প্রশাসন, বেসামরিক চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং দেশের সামরিক বাহিনীও তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সূক্ষ চালে তাঁর বিপক্ষের সব আওয়ামীবিরোধী যারা ঐক্যবদ্ধ নয় তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বলে তকমা এঁটে দিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বিরাট শক্তি হলো দেশের ইসলাম তথা ধর্মবিশ্বাসী বিপুল জনগোষ্ঠী। কিন্তু জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি সক্রিয় অংশ বিশেষ করে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের উগ্রধর্মীয় অনুসারীদের কারণে ইসলামে বিশ্বাসী দেশের তাবৎ জনগণ তথা আলেম-ওলামা, মাদরাসায় শিক্ষিত নতুন প্রজন্মসহ জাতীয়দাবাদে বিশ্বাসীরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। জনগণ গোলাম আযমপন্থি মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের মেনে নিতে পারছে না। যার পুরোপুরি সুযোগ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি অত্যন্ত সূক্ষ চালে তাঁর বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছেন না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিএনপির রাজনীতির মোড় ঘোরাতে হবে। জামায়াতের গোলাম আযমের অনুসারী ও চিহ্নিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বাদ দিয়ে মধ্যপন্থি, উদার ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ আধুনিক মুসলমানদের নিয়ে একটি উদার গণতান্ত্রিক, ইসলামী মনোভাবাপন্ন ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মধ্যপন্থি রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এ আন্দোলনে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে এবং আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিএনপির সর্বজনগ্রহণযোগ্য তারেক রহমানকে অবশ্যই প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে যাতে সে আন্দোলন-সংগ্রাম সফল হয়। মনে রাখতে হবে, আজকের এ সরকারকে জনগণের দাবি মানতে বাধ্য করার জন্য আমাদের সবাইকে সবার আগে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। বৃহত্তর কিছু পেতে হলে ক্ষুদ্র কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। সফলতা সময়ই নিয়ে আসবে।

লেখক: সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর