মানব পাচার বাংলাদেশের সুনামের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। কিছু মানুষের সীমাহীন লোভের কারণে বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশকে মানুষ পাচারের অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানব পাচারের যেসব ঘটনা ঘটে তার একটা অতি ক্ষুদ্র ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়। তবে প্রথাগত দীর্ঘসূত্রতায় অপরাধীদের শাস্তি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ভুক্তভোগীরা। দেশে এ মুহূর্তে মানব পাচারের ৬ হাজারের বেশি মামলা ঝুলে আছে। যার বিচার চলছে বছরের পর বছর ধরে। সম্প্রতি পাচারের সময় বঙ্গোপসাগর থেকে ২০১ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার হয়েছেন। এ ছাড়া পাচারের শিকার ১৬ বাংলাদেশি ৩০ মার্চ গ্রিস থেকে ফিরেছেন। চলতি বছরের গত তিন মাসে ৪০০-এর বেশি ফিরেছেন শুধু লিবিয়া থেকে। এদিকে মানি লন্ডারিংয়ের এক মামলার চার্জশিট থেকে অভিযুক্ত শীর্ষ একজন মানব পাচারকারীর নাম বাদ দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে আটটি রুট ব্যবহার করে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষদের প্রতিবেশী দেশে পাচার করা হচ্ছে। মামলার শাস্তি না হওয়ার জন্যই মানব পাচার বন্ধ হচ্ছে না। শুধু ভারতে প্রতি বছর হাজারের বেশি মানব পাচার হয়। আর মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে পাসপোর্টের মাধ্যমে পাচার ঘটছে অহরহ। তবে সীমান্তের যেসব রুট দিয়ে পাচার হয় সেসব রুট লোকচক্ষুর আড়ালে লোভনীয় অর্থের বিনিময়ে অলিখিত বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব অপকর্মে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের লোকজনও জড়িত। মানব পাচার রোধে প্রথমে দরকার জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক প্রতিরোধ। মামলা হলে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখে অপরাধীদের সাহস বাড়ানোর প্রবণতায় বাদ সাধতে হবে। মানব পাচারের যে কোনো ঘটনায় কথায় নয়, কাজের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। এমনটি সম্ভব হলে মানব পাচারের অপরাধ শূন্য না হোক, সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।