শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রণদা প্রসাদ সাহা ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন অসাম্প্রদায়িক দুই মহামানব

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

রণদা প্রসাদ সাহা ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন অসাম্প্রদায়িক দুই মহামানব

কোনো ভ্রমণ সব সময় কেবল ভ্রমণ নয়। এর সঙ্গে অনিবার্যভাবে যুক্ত হয় অনেক ভাবনা, স্মৃতিচারণা, ফেলে আসা কিছু অনন্য মানুষের জীবনছবি। আচ্ছন্ন করে কিছু কিছু মানুষের দর্শন, মানবিকতা। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ভ্রমণ মনে করিয়ে দেয় বেশ ক বছর আগে কলকাতা ভ্রমণের কথা। ভ্রমণ দুটির কথা মনে করতে গিয়ে দুজন মানুষের কথাই সামনে আসছে। মানুষকে ভালোবেসে তাদের কল্যাণে সারাটা জীবন নিবিষ্ট থেকেছেন এমন দুই মানুষকে মূর্ত করতেই আজকের কলমকে সচল করছি।

৪ মার্চ ২০২২ শুক্রবার গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত রণদা প্রসাদ সাহা যিনি আর পি সাহা নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন তাঁর স্মৃতিবিজড়িত অনন্য স্থাপনাগুলো পরিদর্শনে। সেখান থেকে ঘুরে আসার পর থেকে রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর কীর্তি সম্পর্কেও কিছু লেখার ইচ্ছা হয়। মনে পড়ে, আমি যখন হুগলির ইমামবাড়ায় গিয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীনের জীবন ও কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করছিলাম তখন গৌতম দাস নামে হাজী মুহম্মদ মুহসীন ট্রাস্টের একজন কর্মচারী আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা হাজী মুহম্মদ মুহসীনকে কোনো সুনির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ হিসেবে গণ্য করি না। আমাদের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন দেবতা বা অবতার। সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর ছিল অপরিসীম দয়া এবং তাদের জন্য তিনি দান করেছেন তাঁর জীবনের সর্বস্ব।’ ঠিক একইভাবে ভারতেশ্বরী হোমসের সাবেক অধ্যক্ষ প্রতিভা মুৎসুদ্দি বলছিলেন রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে।

২০১৬ সালের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে মূলত চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতায় গিয়েছিলাম। সঙ্গে আমার স্ত্রীও ছিলেন। আমার শাশুড়ির পিতার কর্মস্থল ছিল কলকাতা। পেশায় তিনি ছিলেন শিক্ষক। আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। ১৯৪৭ -পূর্ব সময় বাঙালি বর্ধিষ্ণু পরিবারের অনেকেই চাকরি বা ব্যবসা সূত্রে কলকাতায় থাকতেন। শাশুড়ির পিতামহ ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট স্কুল ইন্সপেক্টর। তাঁর কর্মস্থল ছিল কলকাতা, বাসা ইলিয়ট রোডে। পরে তাঁরা হুগলি ও কলকাতা মিলিয়েই থাকতেন। তবে তাঁদের আদিনিবাস এই বাংলার যশোরে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজনৈতিক কারণে দেশান্তরের সময় অনেকের মতো আমার শাশুড়ির বাবাও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন।

কলকাতায় ২০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার অনেকটা সময় ডাক্তার সাহেবদের ওখানে কাটিয়ে সন্ধ্যায় রুমে ফিরে এসে ঠিক করলাম পরদিন হুগলি যাব বেড়াতে। লক্ষ্য করলাম আমার এ সিদ্ধান্তে আমার স্ত্রীও খুশিতে বেশ উচ্ছ্বসিত। তিনি ভাবছিলেন এ ভ্রমণে তাঁর নানার পুরনো কিছু স্মৃতি যদি খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর ২১ তারিখ শুক্রবার সল্টলেকের বিজন ভবন থেকে রওনা হয়ে হুগলি পৌঁছলাম। তখন বেলা ১১টা কি সাড়ে ১১টা। দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে হুগলি নদীর তীরে সেই স্থানে এসে দাঁড়াই যেখানে বসে কবি বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন দেশমাতৃকার বন্দনার গান ‘বন্দে মাতরম’, যা ছিল স্বদেশি আন্দোলনের সময় স্বাধীনতাসংগ্রামীদের অনুপ্রেরণাদায়ী এক শক্তিশালী মন্ত্র। নানাশ্বশুরের ফেলে আসা দ্বিতল বাড়ি ও শাশুড়ির ছোটকালের স্কুল ‘চুঁচুড়া বালিকা বিদ্যামন্দির’ দেখে দুপুর ১টায় গেলাম হাজী মুহম্মদ মুহসীনের পূর্বপুরুষের স্থাপিত ইমামবাড়ায়। সেখানে জুমার নামাজ আদায় করি। ঘণ্টাখানেক সময় সেখানে কাটাই।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন জন্মেছিলেন ১৭৩০ অথবা ১৭৩২ সালে। তিনি ১৮১২ সালে ইন্তেকাল করেন। জীবনের এই দীর্ঘ সময়ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আর্তদরিদ্র মানুষের পরিচর্যা করেছেন। দুই হাত প্রশস্ত করে দান করেছেন অজস্র টাকা ও সম্পদ; যে কাহিনি এখনো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। এই মহান মানুষ সম্পর্কে কিছুু কথা লেখার ইচ্ছা জন্মে হুগলি থেকে আসার পরই। আমার একটি বইয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সম্পর্কে একটি প্রবন্ধও লিখেছিলাম ২০২০ সালে। আজ আবার ইচ্ছা হলো রণদা প্রসাদ সাহা ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন- এ দুজনকে নিয়ে লিখতে।

মির্জাপুরে পৌঁছার পর রণদা প্রসাদ সাহার দৌহিত্র রাজীব প্রসাদ সাহা আমাদের মির্জাপুরের সমস্ত কমপ্লেক্স ঘুরিয়ে দেখান। সেখানে রয়েছে কুমুদিনী হাসপাতাল, মেয়েদের স্কুল ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী মহিলা মেডিকেল কলেজ, নার্সদের উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য কুমুদিনী নার্সেস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ অনেক স্থাপনা। আমরা প্রতিটি স্থাপনাই ঘুরে ঘুরে দেখি। রাজীব প্রসাদ সাহা ও তাঁর মা শ্রীমতী সাহা (রণদা প্রসাদ সাহার পুত্রবধূ) আমাদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। রণদা প্রসাদ সাহা জন্মেছিলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীনের জন্মের ১৬৪ বা ১৬৫ বছর পর। অর্থাৎ ১৮৯৬ সালে। এঁরা কেউ কাউকে দেখেননি। রণদা প্রসাদ সাহা হয়তো বা হাজী মুহম্মদ মুহসীনের নাম শুনেছিলেন। তাঁর কর্মকান্ড সম্পর্কে জেনে তিনি নানা মানবিক কর্মে জড়িত হতে উৎসাহিত হয়েছিলেন কি না তা জানি না। হাজী মুহসীন ও রণদা প্রসাদ দুজন দুই বাংলার মানুষ। একজন পশ্চিম বাংলার, অন্যজন পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ। এ পৃথিবীতে অনেক ধর্মযাজক মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘবের জন্য তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন গড়ে তোলার জন্য নিজেদের সংসারজীবন ত্যাগ করে সারা জীবন মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন। সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনে অনেক মানুষ রাজনৈতিক সংগ্রামে নিযুক্ত হন। তা-ও মানুষেরই কল্যাণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সারা জীবন ব্যয় করেছিলেন মানুষের কল্যাণে, রাজনীতি করেছেন মানুষের জন্য। পশ্চাৎপদ কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি অসংঘটিত বাঙালি সমাজকে একত্রিত করে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি দিয়ে গেছেন আমাদের স্বাধীনতা।

সামাজিক নির্যাতন, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে তৎকালীন বাংলায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো অনেক ব্যক্তিত্ব। ত্যাগেই আনন্দ আর মানবসেবাই যে একজন মানুষের ধর্ম ও ব্রত হতে পারে তা প্রমাণ করেছেন রণদা প্রসাদ সাহা। বাল্যকালে অল্প বয়সে মাতৃহারা স্নেহবঞ্চিত এই বালক মামাবাড়ি আশ্রয় গ্রহণ করেন। কৈশোরের প্রারম্ভেই গোপনে মামাবাড়ি পরিত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান। স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির বেশি পড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি এমন প্রতিভার অধিকারী ছিলেন যা স্কুলের আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে করে তোলে এক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি, আধুনিক মানুষ।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁকে বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে অযোদ্ধা সৈনিক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যুদ্ধ চলাকালে তাঁর কোর ইরাকের মেসোপটেমিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। জানা যায়, সেখানে তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নিকান্ডকবলিত একটি ফিল্ড হাসপাতালের যুদ্ধাহত সৈনিকদের রক্ষা করেছিলেন। তাঁর বীরত্বের ও মানবসেবার এ দুঃসাহসী বিরল দৃষ্টান্ত তাঁকে সামান্য থেকে অসামান্য করে তোলে। তাঁর এ সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বিশেষ পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত করে।

সৈনিক জীবনের শৃঙ্খলা, শ্রমশীলতা ও সৎসাহস আজীবন রণদা প্রসাদ সাহার চলার পথে সহায় হয়। যুদ্ধ শেষে তিনি যুদ্ধফেরত সৈনিক হিসেবে রেলের টিকিট কাউন্টারে চাকরি পান এবং ১৯৩২ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত থাকেন। যুদ্ধের সময় নিজের আয় থেকে জমানো সামান্য অর্থ নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। অল্প সময়ের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা ও অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতাবলে যৌবনেই তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হন। কলকাতা শহরে কয়লা সাপ্লাই দেওয়ার ছোট ব্যবসা অবলম্বন করে তিনি গড়ে তোলেন প্রভূত পুঁজি। তারপর ১৯৩৪ সালে বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানির অন্যতম মালিক হন এবং কিছু সময়ের মধ্যে পুরো কোম্পানিটি কিনে নেন। নারায়ণগঞ্জে শুরু করেন পাটের ব্যবসা। অতি অল্প বয়সে বিনা চিকিৎসায় তাঁর মা কুমুদিনী দেবীর মৃত্যু তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। এ কারণে তিনি গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য নিজের গ্রাম মির্জাপুরে ১৯৩৮ সালে তাঁর পিতামহীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন শোভাসুন্দরী দাতব্য ডিসপেনসারি। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। পরিচালনা করেন ২ শতাধিক লঙ্গরখানা। ১৯৪৩ সালেই তিনি টাঙ্গাইলে মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী কলেজ। ১৯৪৪ সালে বাংলার গভর্নরের আবেদনে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ রেড ক্রসকে তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দান করেন যখন সোনার মূল্য ছিল ভরিপ্রতি মাত্র ৩৫ টাকা।

১৯৪৪ সালে মির্জাপুরে তিনি তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ৫০ বেডের কুমুদিনী হাসপাতাল। এর যাত্রা হয় মাত্র ১০-১২ জন প্রসূতি রোগী নিয়ে। আজ সম্ভবত এ হাসপাতালটি ১ হাজার বেডের জেনারেল হাসপাতালে সম্প্রসারিত হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু খ্যাতনামা চিকিৎসাবিদ সেবাদানে যুক্ত থেকে এ হাসপাতালটিকে একটি আদর্শ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে গেছেন।

এবারে আসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে তাঁর অবদানের কথায়। দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৫ সালেই মাত্র ৫৫ জন ছাত্রী নিয়ে তিনি মির্জাপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস নামে একটি নারী বিদ্যাশিক্ষালয় তাঁর প্রপিতামহীর নামে। কিছুদিন পর ভারতেশ্বরী হোমস হয়ে ওঠে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের এক অগ্রগণ্য আবাসিক নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে এখন শত শত ছাত্রী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করে। এর জন্য ছাত্রীদের সব ব্যয় কুমুদিনী ট্রাস্টের পক্ষ থেকেই বহন করা হয়। কুমুদিনী হাসপাতালও পরিণত হয় একটি বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে।

ভারতেশ্বরী হোমস ও কুমুদিনী হাসপাতালই রণদা প্রসাদ সাহার মহত্তম কীর্তি। তিনি আরও অনেক কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ও জনহিতকর কাজে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেন। তিনি তাঁর সব সেবাকর্ম চিরস্থায়ী করার মানসে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি দিয়ে ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন ভিন্ন ধর্মের হলেও কর্মভাবনা তুলনা করে বলা যায় এক অর্থে তিনি ছিলেন রণদা প্রসাদ সাহার পূর্বসূরি। তবে তাঁদের উভয়েরই ধর্ম ছিল একটি- ‘মানবধর্ম’। আগেই উল্লেখ করেছি, হাজী মুহম্মদ মুহসীন মৃত্যুবরণ করেন ১৮১২ সালে, উনবিংশ শতকের শুরুতে। ভারতে বাণিজ্যের নানাবিধ সুযোগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যেসব দুঃসাহসিক উদ্যোক্তা এখানে আসতেন, তাঁদেরই একজন পারস্যের ইস্পাহান শহরের একটি বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্য আগা ফজলুল্লাহ। এ দেশে এসে তিনি তৎকালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে থাকতে শুরু করেন। কিছুদিন পর তিনি তাঁর পুত্র ফয়জুল্লাহকে মুর্শিদাবাদের ব্যবসার দয়িত্ব দিয়ে হুগলিতে এসে তাঁর ব্যবসার কাজ শুরু করেন। হুগলি তখন বঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে তাঁর ব্যবসার প্রভূত উন্নতি ও বিস্তার ঘটে। তখন তাঁর পুত্র ফয়জুল্লাহও এখানে এসে তাঁর ব্যবসায় যোগ দিলেন। সে সময় হুগলিতে আগা মোতাহার নামে আর একজন অতি উচ্চ মর্যাদাবান ইরানি বাস করতেন। তিনি বিখ্যাত সম্রাট আওরঙ্গজেবের অন্যতম প্রিয় সভাসদ ছিলেন। আগা মোতাহার সম্রাটের বিশেষ আনুকূল্যে মূল্যবান ভূসম্পত্তি অর্জনের সৌভাগ্য পেয়েছিলেন। এ বিস্তৃত ভূসম্পত্তি যথাযথ ও লাভজনকভাবে পরিচালনার জন্য তিনি হুগলিতে বসবাস করতে মনস্থ করেছিলেন।

ফজলুল্লাহ ও মোতাহারের পরিবার দুটি বন্ধুত্বের বন্ধনে যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। আগা মোতাহার ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। রেখে যান তাঁর বিধবা স্ত্রী এবং একমাত্র কন্যা মুন্নুজান খানমকে। এ কন্যাকেই তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে গিয়েছিলেন। অল্প কিছুদিন পর আগা মোতাহারের বিধবা স্ত্রী তাঁর মৃত স্বামীর স্বদেশি বন্ধুর পুত্র ফয়জুল্লাহকে বিয়ে করেন। এঁদের দুজনের সন্তান দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন তাঁর মৃত্যুর ছয় বছর আগে একটি ওয়াক্ফ দলিল সৃষ্টি করে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত তাঁর প্রায় সমস্ত ভূসম্পত্তি কয়েকটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং দান-খয়রাত মূলক কাজের জন্য উৎসর্গ করে যান। তিনি তাঁর এ দলিলে ‘মুরাসিম’ (প্রচলিত প্রথা) ও ‘মুশারিফ্-এ-হাস্নাহ্’ (পরোপকার মূলক কাজের জন্য ব্যয়) এ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। সুস্পষ্টতই তাঁর ওয়াক্ফ বা উৎসর্গীকৃত সম্পদের ব্যবহারের জন্য দুই ধরনের কাজের নির্দেশ করেছেন। কিছু প্রথাগত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় এবং বাকি অংশ জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয়। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের পক্ষে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান ছিল খুবই স্বাভাবিক। কারণ তাঁর ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তিনি দুনিয়া ও আখিরাত এ উভয় জগতের প্রতি কর্তব্যকেই গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন।

হাজী মুহসীন তাঁর বিপুল সম্পদের বার্ষিক আয়ের ৩৩.৩% শতাংশ রেখেছেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির জন্য আর বাকি ৬৬.৭% শতাংশ আয় নির্ধারিত রেখে গেছেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কহীন জনহিতকর সেক্যুলার কাজের জন্য। তাঁর মৃত্যুর পর ওয়াক্ফ দলিলে প্রদত্ত তাঁরই নির্দেশনা অনুযায়ী ১৮৩৬ সালে হুগলির চুঁচুড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি মুহসীন কলেজ। হাজী মুহসীনের ওয়াক্ফ সম্পত্তির আয় থেকে একপর্যায়ে ‘মুহসীন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ নামের একটি তহবিল গঠিত হয়। এ ফান্ডের টাকা দিয়েই মুহসীন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটির নাম প্রথমে ছিল ‘কলেজ অব মুহম্মদ মুহসীন’ পরে হুগলি কলেজ এবং তারপর হুগলি মুহসীন কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠার আগে ও পরের কালপর্বে বাংলা তথা ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ অব মুহম্মদ মুহসীন বা ‘হুগলি মুহসীন কলেজ’-এর এক অনন্যসাধারণ ভূমিকা রয়েছে।

১৮৩৬ সালের আগে সারা বাংলায় তথা ভারতবর্ষে যেসব কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে তার কোনোটিতেই সব ধর্মের মানুষের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার ছিল না। ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে ১৮১৬ সালের ২৭ আগস্ট একটি সাধারণ সভায় কলেজের জন্য যে নিয়মাবলি তৈরি হয় তার প্রথমটি হলো, The primary object of this institution is, the tution of the sons of respectable Hindus.. ১৮১৮ ও ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত যথাক্রমে শ্রীরামপুর কলেজ ও বিশপ্স কলেজ শুধু খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের শিক্ষালাভের জন্যই সীমিত ছিল। ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজে শুধু উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ছাত্রদের ভর্তির অনুমতি দেওয়া হতো। ১৮৩৬ সালে লা মার্টিনিয়ার স্কুল শুরু করা হয়েছিল কলকাতার খ্রিস্টান অধিবাসীর সন্তানদের শিক্ষালাভের জন্য। কিন্তু হাজী মুহম্মদ মুহসীন এনডাওমেন্ট ফান্ডের অর্থে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত কলেজ অব মুহম্মদ মুহসীন হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সব ধর্ম ও শ্রেণির ছাত্রদের শিক্ষালাভের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ধর্মবৈষম্যের কোনো স্থান ছিল না এখানে। তবে তখনকার সামাজিক অবস্থায় ছাত্রের অধিকাংশই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তবে কিছু মুসলিম ও কিছু খ্রিস্টান ছাত্রওএ কলেজে অধ্যয়ন করতেন। পরবর্তীকালেও এ চিত্রের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যা হোক, ১৮৪১ সালে ঢাকা কলেজ, ১৮৪৬ সালে কৃষ্ণনগর কলেজ, ১৮৫৮ সালে কটকের র‌্যাডেনশ কলেজ, ১৮৬৯ সালে চিটাগং কলেজ ও ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ স্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ব ভারতে সব ধর্ম ও শ্রেণির ছাত্রদের ইংরেজি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের গঠনপাঠনের জন্য ‘কলেজ অব মুহসীনই’ ছিল একমাত্র অসাম্প্রদায়িক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিসে সংরক্ষিত ‘মুজফ্ফরনামা’ (ফারসি পা-ুলিপি নম্বর ৪০৭৫) নামক একটি ইতিহাসগ্রন্থে মুহসীনের সমসাময়িক লেখক করম আলি উল্লেখ করেছেন, ১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় সৈয়দ মহম্মদ রেজা খান, মুন্সী শরাফত মহম্মদ খান ও অন্যান্য ধনীর মতো হুগলির হাজী মুহম্মদ মুহসীনও বিপন্ন দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ-তহবিলে উদারহস্তে অর্থ দান করেছিলেন। মুজফ্ফরনামার অনেক রচনায় লেখকরা লিখেছেন যে, মুহসীন তাঁর জীবদ্দশাতেই মুসাফিরখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষই এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা ও সাহায্য লাভ করেছেন। হাজী মুহসীন ছিলেন একজন মানবতাবাদী মহাপুরুষ।

মানবিক কর্মের মাধ্যমে তিনি শুধু ধর্মীয় বা আত্মিক ও মানসিক উৎকর্ষতা অর্জনই করেননি, তিনি শরীরচর্চা, কুস্তি, অসি চালনা এবং খেলাধুলার শিক্ষায়ও আগ্রহী ছিলেন। হয়তো এজন্যই দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারীও ছিলেন তিনি। তা ছাড়া হাজী মুহসীন বাল্যকালে তাঁর বৈপিত্রেয় বোন মুন্নুজানের সঙ্গে ওস্তাদ ‘ভোলানাথ’ নামে এক শিক্ষকের কাছে সংগীতবিদ্যা ও সেতার বাদ্য শিখেছিলেন। তাই এটি বলতেই হয় যে, এ সার্বিক উদার শিক্ষাক্রম হাজী মুহসীনের সূক্ষ্ম মানসিক ও মানবিক বৃত্তিগুলোর স্বচ্ছ বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। গড়ে উঠেছিলেন তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে।

সেকালের হাজী মুহম্মদ মুহসীন ও একালের রণদা প্রসাদ সাহা এ দুজন মানুষের জীবন ও কর্মের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, তাঁরা দুজনই ছিলেন যাঁর যাঁর ধর্মবিশ্বাসে অটল।  তার পরও দুজনের মধ্যেই একটি অদ্ভুত মিল পরিলক্ষিত হয়। তাঁরা দুজনই ছিলেন সব ধর্মবিশ্বাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র। মানবকল্যাণে তাঁরা তাঁদের সম্পদ দান করেছেন অকাতরে। এঁদের দুজনের মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সম্পদ আহরণ করেছেন পিতা ও ভগ্নির রেখে যাওয়া ও নিজ উপার্জিত অর্থবিত্ত থেকে আর রণদা প্রসাদ সাহার সম্পদ সোপার্জিত। নিজে যা আয় করেছেন তা-ই দিয়ে গেছেন মানবকল্যাণে। কোনোরকম সাম্প্রদায়িক চিন্তা এ দুজনের ধ্যানজ্ঞানের কাছাকাছিও আসতে পারেনি কখনো। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক। তিনি আজ থেকে ২১০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। হাজী মুহসীন যদি ১৯৭১ সালে বেঁচে থাকতেন আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা হতেন তাহলে তাঁকেও হয়তো বা রণদা প্রসাদ সাহার মতো নির্মম ভাগ্য বরণ করতে হতো তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে মানবসেবা, সংস্কৃতিমনা অসাম্প্রদায়িক মানুষ ইসলামের শত্র“ বলে বিবেচিত হতো।

১৯৭১-এর ২৫ মাার্চ। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মার্চের শুরু থেকেই রাজনৈতিক ডামাডোল। এর মাঝে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সাহসী কাব্যিক ভাষণের মধ্যেই দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল স্বাধীনতার ডাক, মুক্তির ডাক। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল সারা বাংলায়। বাংলার মাটি রঞ্জিত হলো বাঙালির রক্তে। এ জনযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে গোটা জাতি। রণদা প্রসাদ সাহাও যে এতে যোগ দেবেন তা তো খুবই স্বাভাবিক। জানা যায়, তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় এগিয়ে এসেছিলেন। মার্চে শুরু হলো দেশত্যাগের হিড়িক। হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশই নিজ নিবাস ছেড়ে চলে যায় ভারতে। রণদা প্রসাদ সাহাকেও দেশত্যাগ করার জন্য শুভাকাক্সক্ষীরা অনুরোধ করেন। বলেন, মানবকল্যাণের জন্য তাঁর মতো মানুষের বেঁচে থাকার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা সেভাবে দেখলেন না। তিনি দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না বলে সংকল্প করলেন। তিনি বলতেন, ‘আমাকে কেউ মারবে না’।

রণদা প্রসাদ সাহা জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে চাইলে ১৯৪৭ সালেই যেতে পারতেন, দেশ বিভাগের পরই। সেখানেও তাঁর সম্মান প্রাপ্তিতে কোনো ঘাটতি হতো না। কিন্তু তিনি এখানেই থেকে গেলেন। নিজের জন্মভূমি পূর্ববঙ্গে আজকের বাংলাদেশে। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার জন্যই তাঁর এমন অটল সিদ্ধান্ত। এ এক অনন্য দেশপ্রেম। কিন্তু এ দেশপ্রেমের মূল্য তাঁকে দিতে হয়েছে বর্বরদের হাত জীবন উৎসর্গ করে।

১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল টিক্কা খানের আদেশে তৎকালীন গভর্নর হাউসে গিয়েছিলেন রণদা প্রসাদ, সঙ্গে ছিলেন পুত্র রবি। মিটিং শেষে নিজের গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হলেন। খানিকটা পথ এগোতেই হানাদার বাহিনী পিতা-পুত্রকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। নানা ইন্টারোগেশনের পর ৫ মে তাঁরা ছাড়া পান। ৭ মে সকালে রণদা প্রসাদ সাহা মির্জাপুরে সবার কাছ থেকে যথারীতি বিদায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন পুত্র রবি। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে এমনই স্বাভাবিক আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন তিনি। দুপুরের দিকে মির্জাপুরের স্থানীয় শান্তি কমিটির লোকজন টাঙ্গাইল থেকে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী নিয়ে আসে। দুপুরবেলায় গোটা মির্জাপুর গ্রাম হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে। বাড়িতে বাড়িতে আগুন, লুটতরাজ ও নরহত্যার বর্বর উল্লাসে তারা মেতে ওঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ পৈশাচিক কর্মকান্ড। নিরীহ মানুষের আর্তচিৎকারে মির্জাপুরের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একই দিনে নারায়ণগঞ্জে হানাদার বাহিনীর দোসররা রাত ১১টা ৩০ মিনিটে রণদা প্রসাদ ও ভবানী প্রসাদকে (রবি) ধরে নিয়ে যায়। তার পর থেকে তাঁদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। তাঁর পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধবরা এখনো তাঁর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর রায়ে (আইসিটি-বিডি কেস নম্বর-০১/২০১৮ : রায়ের তারিখ : ২৭ জুন ২০১৯ : চিফ প্রসিকিউটর বনাম মাহবুবুর রহমান) এসব নির্মম সত্য উঠে এসেছে। সেখানে বিচারকালে সাক্ষ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ রণদা প্রসাদ সাহার পুত্রবধূ শ্রীমতী সাহা, দৌহিত্র রাজীব প্রসাদ সাহা। তাঁদের বর্ণনা শুনলে যে কোনো সভ্য ও মানবিক মানুষের হৃদয় ভারী হয়ে উঠবে। রণদা প্রসাদ সাহা কেবল একজন মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন মানবতার মূর্তপ্রতীক। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার কর্ম ও মানবতা নিয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায়ের ৪২০ অনুচ্ছেদে এ পর্যবেক্ষণ দেয় যে, Danabeer [Philanthropist] RP Saha thus belonged to mankind, civilization, not only to any particular religion or race. He was an incomparable architect of creating and mounting the school of humanity meant to respond to the need necessary for a developed society, by his immense and continuing noble deeds. RP Saha was not a mere human being. He himself was an institution which was not built in a day. His life was full of struggle and the struggle was not meant for the wellbeing and happiness of his own, but for the humanity, for the mankind and for the well being of the society.

হাজী মুহম্মদ মুহসীন ছিলেন অকৃতদার। অবর্তমানে তাঁর রক্তের উত্তরসূরি হয়তো কেউ নেই। কিন্তু তাঁর কর্ম বেঁচে রয়েছে তাদের মাধ্যমে যারা তাঁর আদর্শ অর্থাৎ সেবা ও মানবতাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। আজ আর পি সাহা বা রণদা প্রসাদ সাহাও নেই। সম্পদের পাশাপাশি বিসর্জন দিয়েছেন নিজ জীবনকেও। তবে আছে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি তাঁর পৌত্র রাজীব প্রসাদ সাহা। প্রত্যাশা রইল রাজীব তাঁর পিতামহের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলো এগিয়ে নেবেন। ৭ মে দানবীর রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার অন্তর্ধান দিবস। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাঁকে ও তাঁর পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে পরপারে শান্তিতে রাখেন।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন ও রণদা প্রসাদ সাহা দুজনই ছিলেন মানবতাবাদী, প্রগতিশীল ও আধুনিক মানসিকতা সম্পন্ন বিশুদ্ধ মানুষ। দুজনেরই নিরলস ত্যাগ ও দানে আজও বাংলার বহু মানুষের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। তাঁদের রেখে যাওয়া মানবতার পরশ এখনো সবাই অনুভব করি। এ দুই মহামানবের স্মৃতির প্রতি জানাই আমার অনিমেষ শ্রদ্ধা।

               

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ, ঢাকা।

সূত্র :

১। রণদা প্রসাদ সাহা স্মারকগ্রন্থ

২। হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মৃত্যুশতবর্ষ

৩। ৮ মার্চ ১৯১৩ সালে স্যার আশুতোষ মুখার্জির বক্তৃতা

সর্বশেষ খবর