শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় মহাপাপ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় মহাপাপ

বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনৈতিক জাগরণে অফুরন্ত মুক্তা ছড়ানো মহান এক মনীষী ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.)। অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর একটি মূল্যবান উক্তি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলতেন, ‘অপচয় রোধ ও অপব্যয় নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির মেরুদন্ড’। বস্তুত অপচয় ও অপব্যয় দরিদ্রতা টেনে আনে। এ কারণে অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা ব্যাহত হয়। মানুষ ধাবিত হয় নৈতিক অবক্ষয় ও ধ্বংসের পথে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন সংকট সৃষ্টি করে, যার মাশুল দিতে হয় সবাইকে। তাই একটি স্বাবলম্বী পরিবার ও উন্নয়নশীল জাতি গঠনে অপচয় রোধ এবং অপব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। জরুরি আয় ও ব্যয়ের যথাযথ প্রয়োগ। বৈধভাবে বেশি সম্পদ উপার্জন ও প্রয়োজনমাফিক তা ব্যয় করার ক্ষেত্রে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ইসলাম অপচয় ও অপব্যয় কোনোভাবেই সমর্থন দেয় না। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় ব্যয় করার নাম অপচয়, যা আরবিতে ‘ইসরাফ’ বলা হয়। অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে সম্পদের অপব্যবহারকে অপব্যয় বলে, যা আরবিতে ‘তাবজির’ বলা হয়। ইসলামের আলোকে দুটিই নিষিদ্ধ অপকর্ম ও মহাপাপ। ইহ ও পরকালে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৭) উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ অপব্যয়কারীকে ঘৃণিত শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাই অপব্যয় করা অত্যন্ত ঘৃণিত হিসেবে প্রমাণ হয়। এভাবে অপচয় রোধে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১) প্র্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করা যেমন অপচয় তেমনি অপ্রয়োজনে নষ্ট করাও অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত। অপচয়ের একটি স্পষ্ট উদাহরণ পানির ব্যবহার। পানির অন্য নাম জীবন। অথচ এ পানি ব্যবহারেও রয়েছে অপচয় ও উদাসীনতা। চলমান বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পাগলা ঘোড়ার মতো এগিয়ে যাচ্ছে। লাগাম ধরার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবু নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়ে বিলাসীদের অপচয় রোধ হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না অপব্যয় উদাসীনতা। মহানবী (সা.) পানি নষ্ট না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা স্থির পানিতে প্রস্রাব কোরো না, নাপাক বস্তু ফেলো না, কেননা তা তোমরা ব্যবহার করবে।’ (আবু দাউদ) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে তিনি বারণ করেছেন। এমনকি প্রবহমান সাগরের পানিতে অজু করার সময়ও তিনি পানি অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ)। উল্লেখ্য, ইসলামের আলোকে অপচয় ও অপব্যয় যেভাবে বর্জনীয় তেমনিভাবে কৃপণতাও গর্হিত। কোরআন-হাদিসে কৃপণতাকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বরং এ দুয়ের মধ্যপন্থা ও মাঝামাঝি অবস্থা হলো ইমানদার মানুষের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না। বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৭)

 

                লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর