বোমার সঙ্গে বসবাস পুরান ঢাকার অধিবাসীদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে-কোনো সময় তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এযাবৎ বড় তিনটি দুর্ঘটনার পরও কর্তাব্যক্তিদের সংবিৎ ফেরেনি। শত মানুষের প্রাণহানিকেও তারা সম্ভবত বেশি কিছু মনে করছেন না। হয়তো এ কারণে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি জনপদ থেকে কেমিক্যাল গোডাউনগুলো সরানো হচ্ছে না। ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক পরিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়ে পুরান ঢাকায় ১ হাজার ৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা তৈরি করে। বাসাবাড়িতে গড়ে ওঠা এসব গোডাউন কেমিক্যালভর্তি ড্রামে ঠাসা। ড্রামগুলো যেন একেকটি ভয়াবহ বোমা। এসব বোমার সঙ্গেই বসবাস পুরান ঢাকাবাসীর। আবাসিক ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যেসব বিস্ফোরক-জাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচা ও মজুদ করা হয় সেগুলো পরিমাণ ও মজুদের প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে অতি, মধ্যম ও কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। অতি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক হলো- টলুইন, ইথাইল অ্যাসিটেট, পলি প্রোপাইলিন, অ্যাডহেসিভ, পলিইথিলিন ডাই ইথাইলিন, রাবার সলিউশন, এলপিজি, ন্যাচারাল ডি-ওপি গ্যাস, বিভিন্ন দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ। মিটফোর্ড, চকবাজার, আরমানিটোলা, ইসলামবাগে এসব অতি ঝুঁকিপূর্র্ণ রাসায়নিক ও বিস্ফোরক দ্রব্যের কারখানা, গোডাউন ও দোকান রয়েছে। মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক হলো- পারফিউমারি, পলিদানা, থিনার, কস্টিক সোডা, টেক্সটাইল ডাই, লিকুইড পারমিন, প্রোপেন, তারপিন, মেশিনওয়েল, সোডিয়াম সালফেট, বরিক অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, বিভিন্ন কালার ফ্লেভার, রিয়াজিন, কেরোসিন, ডিজেল ইত্যাদি। কম ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকগুলো হলো- রেজিন প্লাস্টিক, দ্রাবক সালফিউরিক অ্যাসিড, গাম, লিকুইড আঠা, রং কেমিক্যাল, ল্যাব কেমিক্যাল, ফুড ফ্লেভার, ডিটারজেন্ট, পারফিউমার, ওয়াশিং এজেন্ট, প্যারফিন, ইটিপি, গ্লিসারিন, সোডা কেমিক্যাল, মনোপিস্টার, মিথিলিন ইত্যাদি। নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো বিপর্যয় না চাইলে রাসায়নিক গুদামগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো হেলাফেলা থাকা উচিত নয়।