রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অতি উৎসাহী ও ক্ষমতাবানদের ইগোর বলি আওয়ামী লীগ

নঈম নিজাম

অতি উৎসাহী ও ক্ষমতাবানদের ইগোর বলি আওয়ামী লীগ

আমার এক বন্ধু এসএমএস পাঠালেন। তিনি লিখলেন, ‘অক্ষম নির্বাচন কমিশন। ভার নেওয়ার ক্ষমতা নেই। একটি উপনির্বাচনই সারা দিন টেনে নিতে পারল না। এদের দিয়ে জাতীয় নির্বাচন করতে গেলে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। কারণ তারা সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে না।’ তাঁকে শওগাত আলী সাগরের একটি লেখা পাঠালাম। সাগর আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করতেন। ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে সফল ছিলেন। কাজ করেছেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে। এখন কানাডা থাকেন। লেখালেখি করেন। সাগর লিখেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই- কমিশন গাইবান্ধাকে মাগুরা হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। গাইবান্ধায় স্থানীয় প্রশাসন কেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করল না, তারা আসলে কার বা কাদের নির্দেশ অনুসরণ করেছে, সেটি নিয়ে কথা বলা দরকার। বর্তমান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে বলেছেন নির্বাচন কমিশন এককভাবে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। এটি একটি সমন্বিত উদ্যোগের ব্যাপার এবং অবশ্যই মাঠপ্রশাসনের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাইবান্ধা নির্বাচনে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে প্রশাসন তার ভূমিকা পালন করেনি, নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে এবং তাদের সিদ্ধান্তকে সরকার পছন্দ করেনি- সেটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, আমরা যারা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বা সক্ষমতা দেখতে চাই- তাদের গাইবান্ধা ইস্যুতে অন্তত নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন দেওয়া দরকার।’ শওগাত আলী সাগরের কথায় যুক্তি আছে। আবার আমার এসএমএস পাঠানো বন্ধুর কথাও উড়িয়ে দিতে পারি না। ভোট নিয়ে ক্ষমতার নানামুখী গালগল্প চলছে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পরস্পরবিরোধী এ অবস্থান মোটেও ভালো বার্তা দেয় না। বরং অনেক কিছুকে নিয়ে যায় অনিশ্চয়তায়। সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে এক থাকতে হবে। কাজ করতে হবে পরস্পরকে সহায়ক শক্তি হিসেবে। আলাদা অবস্থানের সুযোগ নেই। লড়াই করেও লাভ নেই।

দেশে একটা ক্ষমতার লড়াই চলছে। ঘরে-বাইরে সবাই ক্ষমতাবান। ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে চলছে চ্যালেঞ্জ-পাল্টা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশন ও সিভিল প্রশাসন এ লড়াইয়ের বাইরে থাকে কী করে? গাইবান্ধার উপনির্বাচন ছিল বর্তমান ইসির অ্যাসিড টেস্ট। আর মাঠপ্রশাসনের আলাদা করে ক্ষমতা দেখানোর দিন। মাঝখান থেকে বিপাকে পড়ল রাজনৈতিক দলগুলো। এ নির্বাচনে হারলে বা জিতলে আওয়ামী লীগের কিছু যেত আসত না। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরও সতর্কতার দরকার ছিল সবার। নির্বাচন কমিশন এখন আস্থা ফেরানো ও ইমেজ বাড়ানোর লড়াইতে ব্যস্ত। এ লড়াইয়ে কে বলি হলো, কে বিপাকে পড়ল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। শতভাগ সুষ্ঠু ভোট সম্পন্নে তারা সহায়তা চেয়েছিল প্রশাসনের। প্রশাসন সে সহায়তা দেয়নি। তারা বসে ছিল ইগো নিয়ে। নিজেদের ভিতরে সমস্যা শরীয়তপুরে একজন ইসির সঙ্গে এসপির সাক্ষাৎ করতে না যাওয়া নিয়ে শুরু। ডালপালা বেড়ে যায় চট্টগ্রামে ডিসিকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব না দেওয়া নিয়ে। সবকিছুর বাতাস আছড়ে পড়ে ইসির সঙ্গে ডিসি-এসপিদের বৈঠকে। একজন ইসির বক্তব্যের সময় হট্টগোল করতে থাকেন ডিসি-এসপিরা। অতীতে এমন পরিবেশ কেউ দেখেননি। ইসি ও প্রশাসনের টানাপোড়েনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছিল গাইবান্ধার উপনির্বাচনে। ব্যস, যে-যার ক্ষমতা দেখিয়ে দিলেন। সবকিছু সামাল দিতে প্রশাসনের পর্যাপ্ত সহায়তা পায়নি ইসি। ভোটের দিন অভিযোগের পাহাড় জমা হলো। ঢাকায় বসে করা পর্যবেক্ষণে অনিয়ম দেখে ইসি স্থগিত করল ভোট। তাজ্জব বনে গেল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলো স্বস্তি ব্যক্ত করল। বিএনপি প্রতিক্রিয়া জানাল সতর্কতা নিয়ে। এখন আলোচনা হচ্ছে কার লাভ, কার ক্ষতি হলো? ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছি। স্পিকার তাঁর সামনে রাখা হাতুড়ি পিটিয়ে বলতেন, ‘আমার মনে হয়, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে; হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে।’ অনেক দিন পর গাইবান্ধার উপনির্বাচন দেখে মনে হলো, প্রশাসন ও ইসি জয়যুক্ত হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন ভোটাররা। আর বিতর্কে পড়েছে আওয়ামী লীগ।

ভোট বিতর্ক আমাদের দেশে নতুন নয়। মাগুরা উপনির্বাচন এখনো এ দেশের ভোটের সেরা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে আসে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করেছিল বিএনপি। সেই ভোটে সংসদে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের। সংসদকে পরিণত করা হয়েছিল তামাশায়। প্রতিবাদে এক দফা আন্দোলনে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশের মানুষ। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সমর্থন জানান। গঠিত হয় ‘জনতার মঞ্চ’। সেই মঞ্চে যোগ দেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। কঠোর আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত সেই পার্লামেন্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। ক্ষমতা ছেড়ে ভোট দিতে বাধ্য হয় বিএনপি। আওয়ামী লীগ সব সময় ভোটের দল। আন্দোলন আর ভোটের ঐতিহ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে। এ অবস্থানকে খাটো করার চক্রান্ত অনেক দিন থেকেই চলছে। আর সে কাজটি নিখুঁতভাবে করছে ঘরের লোকেরাই। তাদের অতি উৎসাহে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের বাস্তবতা ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে। মাঠেঘাটে ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তার পরও প্রশাসনের অতি উৎসাহী হতে হবে কেন? আওয়ামী লীগের মাঠের নেতা-কর্মীদের অবস্থানকে তারা পাত্তা দেননি। তাদের মতামত শোনেননি। অথচ এখন দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হচ্ছে। এর দরকার ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে লড়াইটা তিনি শুরু করেন। সে লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর সে জয়ে প্রশ্ন কেন আসবে? ২০১৮ সালে তিনি ছিলেন একক জনপ্রিয় নেত্রী। বাংলাদেশের সব পেশাজীবী, মিডিয়া, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। অতীতে কোনো সরকার ও দলীয় প্রধান এত সমর্থন পাননি। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বঙ্গবন্ধু কনভেনশনে অনুষ্ঠান করে উন্নয়ন সাফল্যের পক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দেন। তাঁরা বলেছিলেন, এমন চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ অতীতে কেউ তৈরি করেনি। শেখ হাসিনাই ব্যবসাবান্ধব অর্থনীতি তৈরি করেছেন। বিনিয়োগ করতে গিয়ে এখন কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। শিল্পায়নের স্বার্থেই তাঁরা শেখ হাসিনাকে চান। এফবিসিসিআইর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা এ অবস্থান নিয়েছিলেন। সারা দেশে তৈরি হয়েছিল গণজোয়ার। সেই জোয়ারে কারা ভাটার টান তৈরি করেছিল? বিএনপি ছিল তখন ছন্নছাড়া, হামলা, মামলায় কাবু। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তখন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। মির্জা ফখরুল ইসলাম শত প্রতিবন্ধকতায়। বিএনপির অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল মামলার কারণে। জনপ্রিয় প্রার্থীরা ভোটে দাঁড়াতেই পারেননি। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় যাননি সভা-সমাবেশ আর ভোটের প্রচারণায়। আবার কেউ পরিস্থিতি এড়াতে চলে গিয়েছিলেন বিদেশে চিকিৎসায়। অনেকে ছিলেন কারাগারে। সেই নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হলে কোনো সমস্যা ছিল না। নিরপেক্ষ ভোটেও আওয়ামী লীগ তার জোটসহ ক্ষমতায় আসত আড়াই শ আসন নিয়ে। জোট বাদ দিলেও আসন সংখ্যা কমত না। সব সময়ই আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করেন অতি উৎসাহীরা। ২০১৮ সালে তারা নেমেছিলেন নিজেদের শোডাউনে। প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার সেই প্রতিযোগিতার খেসারত এখন আওয়ামী লীগ দিচ্ছে।

গাইবান্ধা উপনির্বাচনের পর নানামুখী আলোচনা শুনছি। চলছে কথার ফুলঝুরি। অনেক দিন আগে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলাম আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে। সময়টা ১৯৯১ সাল। ষড়যন্ত্রের কাছে ভোটে পরাজয়ের পর অনেকে ভেবেছিলেন শেখ হাসিনা ভেঙে পড়বেন। দলের ভিতরে তাঁর বিরুদ্ধশক্তি তখন সক্রিয়। ড. কামাল হোসেন নিজে পরাজিত হয়ে অন্যের দোষ খুঁজে বের করার থিউরিতে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের অগ্রযাত্রা থামানোই ছিল তাঁর কাজ। সে পরিস্থিতিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ালেন শেখ হাসিনা। দলকে সংগঠিত করতে ঘুরতে থাকলেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। তখন এত মিডিয়া ছিল না। বেসরকারি কোনো টিভি ছিল না। পত্রিকার সংখ্যা হাতে গোনা। আমরা হাতে গোনা কয়েকজন সংবাদকর্মী হতাম সফরসঙ্গী। নেত্রীর মিডিয়া দেখতেন মৃণালকান্তি দা। তিনি আড্ডা-আসরে আমাদের জমিয়ে রাখতেন। সেই কঠিনতম সময়ে শেখ হাসিনা গাইবান্ধা গেলেন। দুই ফজলে রাব্বি তখন ছিলেন জাতীয় পার্টির এমপি। বৃহত্তর রংপুরে ছিল জাতীয় পার্টির একক অবস্থান। এরশাদ কারাগারে। রংপুরের মানুষ এরশাদের পাশে দাঁড়াতে সব আসনে লাঙ্গলে ভোট দেন। (শুধু একটি আসনে আওয়ামী লীগ জিতেছিল) শেখ হাসিনা গাইবান্ধার নদী-ভাঙন-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। বক্তব্য দেন একাধিক জনসভায়। তিনি তখন বলেছিলেন, আগামী দিনে ক্ষমতায় এসে এ অঞ্চলকে বদলে দেবেন। দূর করবেন দারিদ্র্য। তিনি কথা রেখেছিলেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। মঙ্গা দূর করতে কাজ শুরু করেন বৃহত্তর রংপুরে। সে কাজের ধারাবাহিকতা এখনো বহাল রেখেছেন। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় ১৪ বছর। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্লোগান নিয়ে উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই ভোট প্রশ্নবিদ্ধ কেন হবে?

চারদিকে এখন নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিশ্বমন্দার এই সময়ে স্বাভাবিক স্থিতিশীলতার জন্যই সবাইকে হতে হবে ধৈর্যশীল। কোনো ষড়যন্ত্রে পা দেওয়া যাবে না। জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে ঘাটে ঘাটে এক শ একটা চোরবালির ফাঁদ পেতে রাখা হচ্ছে। সে ফাঁদে পা রাখা যাবে না। এখন আওয়ামী লীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ভিলেন বানাচ্ছে। নিজেরাই নেমেছে নিজেদের বিরুদ্ধে। বন্ধ করতে হবে এই কাদা ছোড়াছুড়ি। সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানোর কথা। কিন্তু সরিষার ভিতরে ভূত ঢুকলে সমস্যা। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতিযোগিতা থাকবে। এ প্রতিযোগিতা নোংরামি, অসভ্যতায় রূপ দিতে হবে কেন? সরকারি দফতরের গোপন নথি দেশ-বিদেশে পাচার হচ্ছে। গোপন নথির অডিও-ভিডিও কীভাবে যায়? মন্ত্রী, উপদেষ্টার অডিও টেপ কারা মিডিয়াকে দেন? বিদেশি সংবাদ সংস্থার কাছে পাঠান? প্রশ্ন অনেক, জবাব নেই। কার কী ভূমিকা তা-ও বুঝি না। আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি এখনই নেওয়া উচিত। কোনো ভোটকে হালকা করে দেখার অবকাশ নেই।

করোনার পর যুদ্ধের বাজারে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। ক্ষুধা, দারিদ্র্য বৃদ্ধির শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা। যুদ্ধ মানে নিরীহ মানুষের বিপত্তি। এ কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকের প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি শ্রীলঙ্কা হতে চলেছে? কটা ব্যাংক দেউলিয়া হলো? ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা যাচ্ছে না বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি। কোথায় যাচ্ছি আমরা? গুজবে কান দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের তুলনা করে লাভ নেই। এ দেশের অর্থনীতি শুধু সরকারনির্ভরতায় নেই। গ্রামে যাই নিয়মিত। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়। দেখা হয়। গ্রামের একটি খড়ের ঘরে বাস করেন একজন কৃষক। তিনিও জিডিপিতে অবদান রাখেন। কৃষক কাজ করেন খেতখামারে। তার স্ত্রী কুঁড়েঘরে গাভি, হাঁস-মুরগি পালন করেন। বাড়ির আঙিনায় শাকসবজি লাগান। চেষ্টা করেন নিজের চাহিদা মেটাতে। পারলে বাজারে কিছু বিক্রি করেন। এ দেশের মাটিতে বিচি ফেললেই উৎপাদন হয়। পুকুরে একবার তেলাপিয়া চাষ করলে বাকি জীবন চলে যায়। রিজার্ভের হিসাব-নিকাশ রাষ্ট্রনায়করা করবেন। সমাধানও তাদের করতে হবে। শ্রীলঙ্কার মতো সবকিছু তছনছ হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। আমাদের বেসরকারি খাত শক্তিশালী। এত কিছুর পরও শিল্পায়ন থেমে নেই। বিনিয়োগ হচ্ছে। কৃষি খাত নিজস্ব গতিতে চলছে। দরকার শুধু ধারাবাহিকতার। সেই ধারাবাহিকতার একজনই নায়ক আছেন। তিনি জানেন কখন কীভাবে সংকট দূর করতে হয়। অনেক কঠিন সময় মোকাবিলা করে তিনি আজকের অবস্থানে। সবকিছু সামাল দিতে না পারলে আজকের অবস্থানে থাকতে পারতেন না। রাখতে পারতেন না ধারাবাহিকতা। অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করি- তিনি পারছেন, তিনি পারবেন।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর