মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

আয়কর রিটার্ন : যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে

তপন কুমার ঘোষ

আয়কর রিটার্ন : যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে

ঘনিয়ে এসেছে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ডেডলাইন বা শেষ সময়। আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে করদাতার বার্ষিক আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্যাবলি উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। ১ জুলাই ২০২১-২২ আয়বর্ষের (করবর্ষ ২০২২-২৩) রিটার্ন জমা শুরু হয়েছে। আয়কর রিটার্ন জরিমানা ছাড়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। উল্লেখ্য, যিনি আগে কখনই রিটার্ন দাখিল করেননি তিনি আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ২০২১-২২ আয়বর্ষের রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। যাদের করযোগ্য আয় আছে এবং যাদের রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তারাই রিটার্ন দাখিল করবেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে যেসব সেবার জন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেবাপ্রত্যাশীরা সেসব সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এ ছাড়া আগের মতো জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে। কর রেয়াতের হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে। ফলে প্রদেয় করের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তবে সময়ের আবেদন করে অনুমোদিত বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে জরিমানা আরোপিত হবে না, বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে।

রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র উপস্থাপন : অর্থ আইন, ২০২২ অনুসারে মোট ৩৮ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আগে টিআইএন দাখিল করলেই হতো। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে, ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করলে, ৫ লাখ টাকার বেশি পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে ও ক্রেডিট কার্ড পেতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হবে। কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হতে হলে, ট্রেড সংস্থার সদস্যপদ নিতে ও সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে ও মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া আরও কিছু সেবা আছে যা পেতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে। রিটার্ন দাখিলের সময় যে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র কর কার্যালয় থেকে দেওয়া হয় অথবা কর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকে আমানতের ওপর সুদের টাকা পরিশোধের সময় অতিরিক্ত হারে উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি পেতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র ব্যাংক শাখায় জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালান্স সম্পন্ন ব্যাংক হিসাব খোলা ও বহাল রাখতেও রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র লাগবে।

করমুক্ত আয়সীমা : এবার করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই ৩ লাখ টাকা থাকছে। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা, নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) করদাতাদের ক্ষেত্রে এ সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা। আর গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের বার্ষিক আয়ের পৌনে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে না।

করের হার : এ বছর করহার অপরিবর্তিত আছে। গত বছরের মতো এবারও সাধারণ করদাতাদের মোট আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে, এর পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে এবং তৎপরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে। পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ২০ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।

কর রেয়াতের হারে পরিবর্তন : এ বছর বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হিসাবনিকাশে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কতিপয় নির্দিষ্ট খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ, চাঁদা ও দানের পরিমাণ অথবা করযোগ্য মোট আয়ের ২০ শতাংশ অথবা ১ কোটি টাকা- এ তিনটি অঙ্কের মধ্যে যেটি কম সেটি হবে রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অঙ্ক। এ অঙ্কের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। রেয়াত পেতে হলে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিনিয়োগ, চাঁদা বা দানের প্রমাণপত্র রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

ন্যূনতম কর : ন্যূনতম কর অপরিবর্তিত আছে। করমুক্ত সীমার ঊর্ধ্বের আয়ের ক্ষেত্রে প্রদেয় ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ এলাকাভেদে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। উল্লেখ্য, করমুক্ত সীমার ঊর্ধ্বে আয় আছে এমন করদাতার প্রদেয় আয়করের পরিমাণ তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ থেকে কম হলে অথবা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত বাদ দেওয়ার পর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ ন্যূনতম আয়করের কম, শূন্য বা ঋণাত্মক হলেও করদাতাকে তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়কর পরিশোধ করতে হবে।

করমেলা : এ বছরও করমেলা হচ্ছে না। নিজ নিজ কর অঞ্চল কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে হবে। তবে নভেম্বরজুড়ে সেবা মাস পালন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবারও আয়কর নির্দেশিকা (২০২২-২৩) ও আয়কর পরিপত্র (২০২২-২৩) প্রকাশ করেছে। এগুলো বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা আছে।

লেখক : সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, জনতা ব্যাংক লিমিটেড

সর্বশেষ খবর