বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রক্ত দিয়ে লেখা চিঠিতে সিন্ধু জয়

রক্ত দিয়ে লেখা চিঠিতে সিন্ধু জয়

শ্রীলঙ্কার বন্দর থেকে কিছু আরব পরিবারকে ফিরিয়ে আনার জন্য ৭১১ সালে সম্রাট ওলিদের পক্ষ থেকে জাহাজ পাঠানো হয়। সেই জাহাজে সিংহলের রাজার জন্য বেশ কিছু আরবি ঘোড়া পাঠানো হয়েছিল। সিংহলের রাজা আরবদের উত্থানের গল্প শুনে বিস্মিত হওয়ার পাশাপাশি আরব ঘোড়া পেয়ে আরও খুশি হলেন। তিনিও খলিফাকে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু উপহার সামগ্রী আরবদের দিলেন। এ ছাড়া সিংহলে উৎপাদিত মসলার বাজার আরবে সৃষ্টি করতে চাইলেন। কারণ তিনি জানেন আরবের বাজারে ভারতীয়

উপমহাদেশের মসলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তখন ইঞ্জিনচালিত জাহাজ ছিল না। পানি, খাবার নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ থামাতে হতো। এরকমই একটা বন্দর ছিল দেবল বন্দর যা পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত। সিংহল থেকে ছেড়ে আসা আরবের জাহাজ দেবল বন্দরে নোঙর করতেই জাহাজে ডাকাত দল হামলা করল। জাহাজে অনেক মহিলা ছিল। ডাকাত দল সহজেই জাহাজ লুটপাট করল। বেশির ভাগ মহিলা জাহাজ থেকে লাফ দিয়ে তীরে ওঠার চেষ্টা করল। কেউ বাঁচল, কেউ ডুবে মরল, কেউ তীরে ডাকাত দলের হাতে বন্দি হলো। সিংহলে বড় হওয়া একজন আরব মেয়ে পালাতে পেরেছিল। তার স্বামী ডাকাত দলের হাতে বন্দি হয়েছিল। মেয়েটা স্বামীর সন্ধানে সিন্ধুর রাজধানীতে গিয়ে খোঁজ করে জানতে পারল তার স্বামী কারাগারে বন্দি। রাজা দাহিরের কাছে গেলে নিরাপত্তাহানির ভয়ে অগত্যা সে বনে আশ্রয় নিল। জাহাজ থেকে বেশ কিছু পুরুষও পালিয়েছিল। তাদের সঙ্গে মেয়েটা দেখা করল। মেয়েটি তার রক্ত দিয়ে আরবের উমাইয়া শাসক খলিফা ওলিদের ডান হাত বসরার গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে একটা চিঠি লিখল। সেই চিঠির কারণে গোটা উপমহাদেশের ইতিহাস বদলে যায়। হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সিংহলের সেই মেয়ের রক্তে লেখা চিঠি দেওয়া হলো। চিঠি পড়ে তার কঠিন হৃদয় গলে গেল। চিঠিতে রাজা দাহিরের কারাগারে আরব বন্দিদের অসহায়ত্বের কথা বলা হয়েছে। শেষ লাইনে লেখা আছে ‘দূতের মুখে মুসলমান শিশু ও নারীদের বিপদের কথা শুনে আমার দৃঢ় বিশ্বাস বসরার শাসনকর্তা স্বীয় সৈন্য বাহিনীর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সৈনিককে অশ্ব প্রস্তুত করার আদেশ দিয়েছেন।  সংবাদ বাহককে আমার এ পত্র দেখানোর প্রয়োজন হবে না। হাজ্জাজ এ চিঠি পেয়ে তার ভ্রাতুষ্পুত্র মুহম্মদ বিন কাশিমের নেতৃত্বে সিন্ধুতে অভিযান পাঠান। আরব সৈন্যরা সিন্ধু জয় করে। ভারতবর্ষের একাংশে প্রতিষ্ঠিত হয় আরব তথা মুসলিম শাসন।

সর্বশেষ খবর