রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদায় বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার আরেকজন সিদ্দিকী

নঈম নিজাম

বিদায় বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার আরেকজন সিদ্দিকী

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। একজন বলিষ্ঠ, দক্ষ সংগঠক হিসেবে খ্যাতি ছিল। স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন। নিজের চোখে যা ভুল মনে হতো লুকোছাপা করতেন না।  কথা বলতেন। অনেক সময় বলতে না পারলে লিখতেন। রাজনীতিটা শিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে। তিনি ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শাজাহান সিরাজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল সময় ছিল সেটি। স্বাধীনতা সংগ্রামকে আগুনের মতো ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ বাস্তবায়নে ছাত্রলীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করত। বঙ্গবন্ধুর সহচর চার ছাত্রনেতাকে বলা হতো খলিফা। বঙ্গবন্ধুর সেই চার খলিফা হচ্ছেন- আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ। তাঁদের ওপর ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক নেতাদের আরেকটি গ্রুপ। সবারই নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সিনিয়র-জুনিয়র সব নেতাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও আদেশ দিতেন। তাঁরা তা বাস্তবায়ন করতেন।

নূরে আলম সিদ্দিকীর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার ঘটনায় নাটকীয়তা ছিল। ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। সেবার সিনিয়ররা ভোটাভুটি করে তোফায়েল আহমেদকে সভাপতি, আ স ম আবদুর রবকে সাধারণ সম্পাদক করেন। পরের বার নূরে আলম সিদ্দিকী সভাপতি প্রার্থী হলেন। ছাত্রলীগ নেতৃত্ব নির্বাচনে তখন বিভিন্ন আঞ্চলিকতা ছিল। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতেন। বঙ্গবন্ধু কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। নূরে আলম সিদ্দিকী এলেন ঝিনাইদহ থেকে। তার আগে কুষ্টিয়া থেকে এসে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন আমিনুল হক বাদশা। ছাত্রলীগ নেতারা অভ্যন্তরীণ বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর নজরে আনলেন। ব্যক্তিগতভাবে নূরে আলম সিদ্দিকীকে পছন্দ করতেন বঙ্গবন্ধু। সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ নেতাদের ডাকলেন। এ নিয়ে ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের নায়ক, তখনকার ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ তাঁর স্মৃতি থেকে বলেছেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে বঙ্গবন্ধু কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। কারও নাম বলতেন না কখনো। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম উঠে আসত। ভোটাভুটি হতো। তোফায়েল আহমেদও ভোটাভুটিতে জিতে ছাত্রলীগের সভাপতি হন। নূরে আলম সিদ্দিকীর নাম বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকেই আসে। বঙ্গবন্ধু স্নেহ করতেন বলেই তাঁকে ছাত্রলীগের সভাপতি করেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন শেখ ফজলুল হক মণি। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও বঙ্গবন্ধু বেছে নেন নূরে আলম সিদ্দিকীকে। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ নিয়েই নূরে আলম সিদ্দিকীর রাজনৈতিক উত্থান। বঙ্গবন্ধু ’৭৩ সালের সংসদে নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে আসেন।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন নূরে আলম সিদ্দিকীর একটি বক্তৃতা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের বিরোধিতা করে জাতীয় সংসদে এক ঘণ্টার বেশি বক্তব্য দিয়েছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। এ বক্তৃতা নিয়ে ইতিহাসে অনেক ধরনের ব্যাখ্যা আছে। কেন, কী কারণে তিনি সে সময় ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন তা নিয়ে আছে দলের ভিতরে প্রশ্ন। অনেকে মনে করেন, বঙ্গবন্ধু হয়তো চেয়েছিলেন দলের কেউ একজন বাকশালের সমালোচনা করে বক্তব্য দিক। বঙ্গবন্ধুর অনুমতি ছাড়া বাকশালের বিরোধিতা করে সে সময় এত দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়া নূরে আলম সিদ্দিকীর পক্ষে অসম্ভব ছিল। ইতিহাসের আড়ালে অনেক কিছু থেকে যায়। বাকশাল গঠন, এ নিয়ে দলের ভিতরে সমালোচনার সুযোগদান বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সম্ভব ছিল। আর নূরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন তাঁর আস্থাভাজনদের একজন। বঙ্গবন্ধুর ইশারা ছাড়া তিনি তখন কিছু করেছেন এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বাংলাদেশে ইতিহাসের অংশ মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক অন্যদের মতোই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশ-নির্দেশ বাস্তবায়ন করতেন। কারাভোগ করেছেন স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাগারে ছিলেন। তবে অন্যদের মতো তাঁরও একটা ব্যর্থতা ছিল। সেই ব্যর্থতা ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের পর তিনিও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে তিনি মিজান আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। তবে মিজানুর রহমান চৌধুরী এরশাদের সঙ্গে গেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এক সেকেন্ডের জন্য বিচ্যুত হননি নূরে আলম সিদ্দিকী। রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সরে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন।

হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে লালন করে চলতেন। আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরলেও ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর হাতে নৌকা তুলে দিয়েছিলেন। নৌকার মাঝি হয়ে লড়েছিলেন ভোটে। সেই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। তারপর আবার রাজনীতিতে যাত্রাবিরতি। তাঁর লেখনীতে আওয়ামী লীগের ভুলভ্রান্তি নিয়ে সমালোচনা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সমালোচনাকারীদের জবাব তিনি কঠোর ভাষায় দিতেন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা করতেন না। জাসদের সমালোচনা করতেন। বলতেন, জাসদের ভুলের খেসারতে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছিল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে সংকটে পড়তে হয়েছিল জাসদের কারণেই।

নূরে আলম সিদ্দিকী একজন ভালো বক্তা ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় জুড়ে মাঠ জমিয়ে বক্তব্য দিতে পারতেন। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধতা নিয়ে তাঁর কথা শুনত। বলার স্টাইল ছিল আলাদা। কণ্ঠস্বর, চলনে-বলনে বলিষ্ঠতা ছিল। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন জেনারেল ওসমানী। সেই নির্বাচনে ওসমানীকে সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী প্রচারণায় ওসমানী চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। নূরে আলম সিদ্দিকীও গেলেন ঢাকা থেকে। পরের ঘটনা শুনেছিলাম প্রয়াত জাসদ নেতা মাঈন উদ্দিন খান বাদলের কাছে। বাদল ভাই বললেন, ওসমানীর একটি জনসভা ছিল চট্টগ্রাম শহরে। তারপর যাবেন কাপ্তাই। বিভিন্ন স্থানে পথসভা করতে গিয়ে জনসভায় যেতে বিলম্ব হচ্ছিল। নূরে আলম সিদ্দিকী আর বাদল ভাই চট্টগ্রাম থেকে আগাম টিম হিসেবে গেলেন কাপ্তাই। তাঁরা দেখলেন জনসভা শুরুর কথা বিকাল ৪টায়। তাঁরা পৌঁছেছেন সন্ধ্যা ৭টায়। স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য শেষ। তাঁরা শুধু মাইকে বলছেন, একটু পরই আসবেন প্রধান অতিথি। মানুষ আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। সবাই উঠি উঠি ভাব। রাত ১০টার আগে জেনারেল ওসমানীর পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই। পরিস্থিতি সামলাতে প্রথমে ঘণ্টাখানেক বক্তব্য দিলেন মাঈন উদ্দিন খান বাদল। তারপর নূরে আলম সিদ্দিকীর পালা। তিনি ইংরেজি, বাংলা, আরবি মিলিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন। হাদিস-কোরআনের ব্যাখ্যা দিয়েও ইতিহাস বলছেন। পিনপতন নীরবতা নিয়ে মানুষ শুনছে। পৌনে দুই ঘণ্টা পর কানে কানে বাদল ভাই গিয়ে বললেন, লিডার জেনারেল ওসমানী চলে এসেছেন। পাঁচ মিনিট পর মঞ্চে উঠবেন। তিনি বললেন, আমার তো শেষ হয়নি। বাদল ভাই বললেন, ইতিহাসের অজানা অধ্যায় নিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলার আমল থেকে বলা শুরু করেছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। যখন থামাতে গেলাম তিনি তখন মাত্র ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। জেনারেল ওসমানীর উপস্থিতিতে আরও ২০ মিনিট জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে বক্তৃতা শেষ করলেন। এভাবে সবাই পারেন না।

সিদ্দিকী ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক ছিল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনে নিয়মিত কলাম লিখতেন। বন্ধু প্রয়াত পীর হাবিবুর রহমানসহ অনেকবার সিদ্দিকী ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি তাঁর বাড়িতে। মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। মানবজমিনে তিনি লিখতেন। তিনি খেতে ও খাওয়াতে পছন্দ করতেন। এক দিনের খাওয়ার টেবিলে অনেকের মাঝে ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ২০১৩ সালের দিকের ঘটনা। সুলতান ভাই মাছের বিশাল পেটি খেতে পারছিলেন না। তিনি পাত থেকে মাছের টুকরো তুলে রাখলেন কাঁটা রাখার প্লেটে। সিদ্দিকী ভাই টুকরোটা তুলে নিলেন নিজের পাতে। বললেন, খাবার কখনো অপচয় করতে হয় না। এতে আল্লাহ বেজার হন। সিদ্দিকী ভাই এমনই ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবসায়ী ছিলেন। অর্থবিত্তের অভাব ছিল না। তার পরও জীবনযাপন ছিল সাদামাটা। পুরনো বন্ধুদের দেখা হলে খুনসুটি করতেন। একবার একটি অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদ আর নূরে আলম সিদ্দিকী পাশাপাশি বসলেন। ’৬৮ সালে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদের কাছে ভোটে হেরেছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। তাঁদের পাশে বসলাম আমি। তোফায়েল ভাই সিদ্দিকী ভাইয়ের স্যুট দেখলেন। মজা করে খেপাতে গিয়ে বললেন, এত বড় বিত্তশালী আপনি, ভালো ব্র্যান্ড পরতে পারেন না? স্যুটের কলারে হাত দিয়ে বললেন, এটা কী পরেছেন? সিদ্দিকী ভাই সিরিয়াস হয়ে গেলেন। বললেন, ডানহিল পরেছি। আপনার তো চিনতে পারার কথা। তোফায়েল ভাই হাসতে হাসতে আবার বললেন, আরে ডানহিল কোনো ব্র্যান্ড হলো? বিশ্বে জিংলি, ক্যানালি আরও অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড আছে। ডানহিল আর চলে না। সিদ্দিকী ভাই আবার বললেন, এটাই আমার ব্র্যান্ড। বঙ্গবন্ধুর দুই সহচরের খুনসুটিতে আশপাশের সবাই মজা পাচ্ছিলাম।

সিদ্দিকী ভাই গুলশান আজাদ মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। নুরুল ফজল বুলবুল সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিয়মিত নামাজ রোজা করতেন। এ মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেষবিদায় নিচ্ছেন। মসজিদে প্রবেশের মুখে দেখা হলো নাহিম রাজ্জাক এমপির সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নাহিম প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুর রাজ্জাকের সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর এমপি হয়েছেন। তাঁকে দেখে রাজ্জাক ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। মুক্তিযুদ্ধের আরেকজন সংগঠক আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক ভাই চলে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের আর কয়েকজন মাত্র আছেন। তাঁদের অনেকের শরীর ভালো না। তোফায়েল আহমেদকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। জানাজায় দেখা হলো আ স ম আবদুর রব, আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ডাকসু ভিপি আখতারুজ্জামানসহ অনেকের সঙ্গে। আখতার ভাই আগের মতোই প্রাণোচ্ছল আছেন। জানাজায় বক্তব্য দেন সিদ্দিকী ভাইয়ের দুই সন্তান শমি ও অমি। তাহজীব সিদ্দিকী শমি এখন আওয়ামী লীগের এমপি। বাবার আসন থেকে পরপর দুবার নির্বাচিত হয়েছেন।

জানাজা শেষে নূরে আলম সিদ্দিকীকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হয় সাভারে। সেখানে তিনি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। মৃত্যুর আগে ছেলেদের অছিয়ত করে গেছেন সাভারে মসজিদের পাশেই যেন তাঁকে দাফন করা হয়। কবি নজরুলের জীবনের শেষ আকুতি ছিল মসজিদের পাশে দাফনের। মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় বীরদের একসঙ্গে কবর দেওয়ার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সবুর খান, শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়াদের কবর আছে জাতীয় সংসদ ভবনের চত্বরে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলতে খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে দাফন করে টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগাঁয়ে। খুনিরা জানত না ইতিহাসের মহানায়কের স্মৃতি তাঁর প্রতিষ্ঠিত দেশ থেকে মুছে ফেলা যায় না।  যত দিন যায় ততই ইতিহাস জ্বলে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়া এখন বাংলাদেশের মানুষের তীর্থস্থান। প্রতিদিন সারা দেশ থেকে মানুষ যায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে।  বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান রব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করতে। সত্যিকারের ইতিহাসকে কখনো শেষ করা যায় না। ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে।

 

                লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর