মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ কি পরাশক্তির রেসলিং রিং হতে যাচ্ছে

মহিউদ্দিন খান মোহন

বাংলাদেশ কি পরাশক্তির রেসলিং রিং হতে যাচ্ছে

কয়েকদিন আগে মতিঝিলের অফিসপাড়ায় এক বন্ধুর অফিসে কথা হচ্ছিল। বন্ধুটি আবার বিএনপির উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতা। আলাপ প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাইলাম তাদের দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? যদি সরকার তাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে তারা শেষ পর্যন্ত কী করবেন? তিনি বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, সরকারকে দাবি মানতে আমরা বাধ্য করব। এই সামনের ঈদের পরই দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে। তখন সরকারের গদি ত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। তাকে বললাম, আপনার কথাগুলো শুনতে বেশ ভালো এবং উদ্দীপনাময়; বিশেষ করে আমরা যারা বিএনপির শুভাকাক্সক্ষী তাদের আশান্বিত হওয়ার মতো। কিন্তু এ পর্যন্ত যেভাবে অপনারা আন্দোলন টেনে নিয়ে এসেছেন, তাতে কি আপনি নিশ্চিত যে আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাতে পারবেন? তিনি বললেন, ‘চারদিকের চাপে’ সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হবে। তাকে বললাম, ধরুন সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গদিতে বসে থাকল, এদিকে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হয়ে গেল, তখন আপনারা কী করবেন? তখন তো আন্দোলনও করতে পারবেন না, নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে পারবেন না। একটু গম্ভীর হয়ে তিনি বললেন, তখন কী হবে তার সিদ্ধান্ত হাইকমান্ড নেবে। তারা নিশ্চয়ই তা ভেবে রেখেছে। সবশেষে মুচকি হেসে বললেন, সাংবাদিক সাহেব, একটু সবুর করুন খেলা দেখতে পাবেন। এবার একটা কিছু হবে।

বিএনপি নেতাদের এই ‘একটা কিছু হবে’ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই সচেতন মহল ধন্দে আছে। এই ‘একটা কিছু’ যে কী, তা তারা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না বা বলেন না। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিএনপির যে কোনো নেতাকে জিজ্ঞেস করলেই বলেন, একটা কিছু হবে। কিন্তু সেই একটা কিছুর স্বরূপ তারা বলতে পারেন না। এমনকি কীভাবে তা সম্ভবপর হবে তা-ও বলতে পারেন না। আসলে এই ‘একটা কিছু’ একটি বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্বাসের ওপর ভর করেই বিগত প্রায় ১৫টি বছর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সরকারের নির্যাতন সহ্য করে চলেছেন, মামলার আসামি হয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জীবনের মূল্যবান সময় ক্ষয় করছেন। তারা বিশ্বাস করেন শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসের ওপর- ‘একটা কিছু হবে’। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে।

দেশের রাজনীতির প্রধান নিয়ামক দুই দলের এ অবস্থান সৃষ্টি করেছে অনিশ্চয়তা; যা জনমনে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’- এ প্রবাদ স্মরণে এনে অনেকেই বলছেন, শেষ পর্যন্ত দেশ ও গণতন্ত্রের কপালে কী আছে তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন। কেননা দূর এবং নিকট অতীতে দেশের এ দুই বড় দলের একগুঁয়েমির পরিণামের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সবারই মনে আছে। তাই দেশবাসী চাচ্ছে, দুই দল বিভেদের রেললাইনের মতো সমান্তরালে না থেকে নদীর মতো সমঝোতার মোহনায় এসে মিলিত হোক। কিন্তু এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনগণের প্রত্যাশাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিয়েছে, তেমন নজির কম।

এদিকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এখন দুই শিবিরে বিভক্ত। তারা এখন পক্ষাবলম্বন করছে বিবদমান দুই পক্ষের। আমাদের রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানো যদিও নতুন কোনো ব্যাপার নয়, তবে এবার তারা অনেকটাই ঘোমটা খুলে নেমেছে। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষিত হওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। আর সেই ভিসানীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থানকে আরেক পরাশক্তি চীনের প্রকাশ্য সমর্থন রাজনৈতিক সচেতন মহলে নতুন করে হিসাবনিকাশের অবকাশ সৃষ্টি করেছে।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় সরকার রাজি’ বলে মন্তব্য করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছিলেন। অনেকেই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন এই ভেবে যে, শেষ পর্যন্ত হয়তো সরকার ও বিরোধী পক্ষের সুমতি হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমির হোসেন আমুর বক্তব্য, তাঁর দলের স্বীকৃতি পায়নি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে, জাতিসংঘকে এখানে ইন্টারফেয়ার করত হবে।’ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আমির হোসেন আমুর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। এটা সরকার, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের বক্তব্য নয়।’ অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত বলে নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ নিয়ে একেকবার একেক কথা বলছে। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রশ্ন রেখেছেন, কে সঠিক- আমির হোসেন আমু, নাকি ওবায়দুল কাদের?’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৮ জুন ২০২৩)। এসব কথাবার্তার মধ্য দিয়েই আমির হোসেন আমুর বক্তব্য ইথারে মিলিয়ে গেছে, এখন আর তা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। তা ছাড়া একদিন পরই তিনি নিজে আগের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে বলেছেন, ‘আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি। কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ ফলে আমির হোসেন আমুর ওই তোলপাড় করা মন্তব্য শেষ পর্যন্ত কথার কথায় পর্যবসিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন বা নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সরকারপ্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপির সঙ্গে কোনোরকম সমঝোতা তো দূরের কথা, আলোচনায়ই আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়, তা প্রায় সবারই অনুমানের বাইরে।

মার্কিন ভিসানীতি ঘোষিত হওয়ার পর বিরোধী শিবিরে যে উল্লাস লক্ষ করা গেছে, তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। কেননা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী বা বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের তারা ভিসা দেবে না। তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছে। কিন্তু কীভাবে সে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বা করা যাবে সে সম্পর্কে কিছু বলেনি। একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হলো যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। এর কারণ অবোধ্য নয় কারও কাছেই। কেননা বিষয়টি বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন ও পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত; যা একান্তই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাইরের দেশ হিসেবে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করলেও সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটি সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এর ব্যত্যয় হলে তা হবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। আর এই কূটনৈতিক শিষ্টাচারকেই ক্ষমতাসীন দল তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করছে। তারা বোঝাতে চাইছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে, তবে তা অবশ্যই বিদ্যমান সংবিধানের আওতায়। কিন্তু বিএনপি তাতে বিশ্বাস বা আস্থা কোনোটাই রাখতে পারছে না। এখানে বিএনপিকে দোষারোপ করার অবকাশ কম। কেননা, ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনের দৃষ্টান্ত তাদের কাছে মজুদ রয়েছে। মূলত এসব কারণে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকেই সব সমস্যার উৎপত্তি। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিদেশি শক্তির তৎপরতা সচেতন ব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুলেছে। অতীতে বিদেশি শক্তি এ দেশের রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামালেও এবারের মতো তা প্রকট ছিল না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেছে। পাশাপাশি সরকার তথা আওয়ামী লীগের প্রতি চীনের সরাসরি সমর্থন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্বরাজনীতির দুই পরাশক্তি চীন ও আমেরিকার এই মুখোমুখি অবস্থান বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত কোন পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনীতিসচেতন মহল। যারা ভাবছে আমেরিকার ভূমিকা তাদের পক্ষে বা আমেরিকা তাদের পক্ষে কাজ করছে, তারা ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কারণ পৃথিবীর ইতিহাস বলে, আমেরিকা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কখনই কোনো কথা বলেনি, কাজ করেনি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়জন কংগ্রেসম্যান ৪ জুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এক চিঠিতে বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ করা এবং জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ঠিক এক সপ্তাহ পর ১২ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের ছয় সদস্য একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে। এসব তৎপরতাকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়াস বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি অভিজ্ঞ মহল।

নতুন ভিসানীতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর মার্কিন চাপ সৃষ্টির প্রয়াসের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর উচ্চারণকে সমর্থন জানিয়ে চীনের বিবৃতি রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। লক্ষণীয় হলো, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হলেও এর আগে এ দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রকাশ্যে কোনো পক্ষে অবস্থান নেয়নি। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হওয়া চীন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রশ্নে এবার আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিল। এটাকে বিএনপি নেতৃত্ব তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে স্বীকার করবে কি না জানি না, তবে তারা যে কূটনৈতিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে, তা অস্বীকার করা যাবে না। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। শেষবার সরকারে থাকার সময়ে যে ব্যক্তির কারণে চীন বিএনপির প্রতি বৈরী হয়ে ওঠে, সেই ব্যক্তিই এখন দলটির কূটনৈতিক উইংয়ের প্রধান। ফলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পরিবর্তে দিন দিন তা আরও শীতল হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারত এখনো পর্যন্ত নীরব রয়েছে। তবে তাদের এ নীরবতা কতক্ষণ স্থায়ী হবে বলা যায় না। কেননা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে যে ইস্যু সৃষ্টি করেছে, তাতে ভারতের চুপ করে থাকার উপায় নেই। বিশেষত বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে একটা ভূমিকা নিতেই হবে। তারা কি আন্তর্জাতিক মিত্র আমেরিকার সহযোগী হবে, নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সহযোগী হবে সেটাই প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে পরাশক্তিগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দৃষ্টিকটু তৎপর হয়ে উঠেছে, তাতে অনেকের মনেই শঙ্কা জাগছে, বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পরাশক্তিগুলোর রেসলিং রিংয়ে পরিণত হবে না তো?

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

সর্বশেষ খবর