মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আশ শাহরুল হারাম পবিত্র মহররম মাস

আবদুর রশিদ

হিজরি সন ইসলামী সন। ইসলামের নানা ইবাদত-বন্দেগি হিজরি মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। হিজরি ১২ মাসের মধ্যে পবিত্রতার চাদরে ঢাকা চারটি মাস। আশ শাহরুল হারাম এ চারটি মাসের অন্যতম মহররম। ইসলামী বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনে মহররমকে প্রথম মাসের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ মাসের ১০ তারিখ বা আশুরার দিনটি নানা দিক থেকে তাৎপর্যের দাবিদার। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে অসংখ্য নবী-রসুলের স্মৃতি ধারণ করছে এ দিনটি। বিভিন্ন নবী-রসুলের শরিয়তে এ দিনটি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে রসুল (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করলে মুসলমানদের কাছে এ দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে ওঠে। সব নবী-রসুল আশুরার দিনটিকে ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১১ বার পড়বে, আল্লাহ তার ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার জন্য একটি নুরের মিম্বার তৈরি করবেন।’ (নুজহাতুল মাজালিশ)

আশুরার দিনের নফল রোজাকে রমজানের ফরজ রোজার পর সবচেয়ে মর্যাদা দেওয়া হয়। রসুল (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখতেন। মুমিনদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন চার রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং তাতে প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ৫০ বার পড়বে আল্লাহ তার বিগত ৫০ ও আগত ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। বেহেশতে তার জন্য এক হাজার নুরের প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’

হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আশাবাদী যে আশুরার রোজার উসিলায় আল্লাহ অতীতের এক বছরের ছোটবড় সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) চারটি আমল কখনো ছাড়েননি। যথা- ১. আশুরার রোজা ২. জিলহজের প্রথম ১০ দিনের রোজা ৩. প্রতি মাসে তিনটি রোজা ৪. ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখবে, তার বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে এর সঙ্গে ৯ অথবা ১১ তারিখে রোজা রাখাও মুস্তাহাব।’

হজরত শিবলি (রা.) প্রথম থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত চার রাকাত নামাজ পড়তেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১৫ বার পড়তেন এবং সালামের পর এর সওয়াব ইমাম হোসাইন (রা.)-এর রুহে প্রেরণ করতেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন ইমাম হোসাইন (রা.) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, জনাব! আমার অপরাধ কী? উত্তরে বলেন, অপরাধ নয়, আমার চোখ দুটি তোমার অনুগ্রহে লজ্জিত। কিয়ামত দিবসে যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিনিময় তোমাকে শোধ করতে পারব না ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার দিকে তাকাব না। জাওয়াহেরে গায়বি। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। বলা যায়, সে দিনই ইসলামী আদর্শ প্রকৃত প্রাণশক্তি অর্জন করেছে। সুতরাং কারবালার স্মৃতি মুসলিম হৃদয়ে কেবল শোকের আবহই জাগায় না; বরং সাধনা ও সাফল্যের এক নতুন উদ্দীপনাও জাগিয়ে তোলে। আল্লাহ আমাদের আশুরার ফজিলত বোঝার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর