শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সত্য খুঁজে পাওয়া এত সহজ নয়

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

সত্য খুঁজে পাওয়া এত সহজ নয়

এক. পৃথিবীতে কিছু কিছু সত্য আছে, খুব অদ্ভুত সেগুলোর প্রকৃতি। হয়তো সেই সত্যগুলো মেনে নিতে মন চায় না। খুব কষ্ট হয়, বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, তারপরও মেনে নিতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আহা, সত্যটা যদি মিথ্যা হয়ে যেত, যেটা ঘটে গেছে সেটা যদি না ঘটত, হয়তো সেটাই ভালো হতো। কিন্তু সময়কে পেছনে টেনে সত্যকে বদলাতে না পারার মতো সত্য তো আর কিছু নেই। সত্য ঘটে গেলে মিথ্যা হয়ে যায় না, মিথ্যা বদলে গিয়ে হয়তো কখনো কখনো সত্য হয়ে যায়।  যদিও সময়টা এখন সত্য-মিথ্যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষ কতটুকু সত্য জানতে পারে পৃথিবীর। যেভাবে সত্যকে দেখানো হয়, মানুষ সেভাবেই দেখে। হয়তো সেখানে সত্য অসহায় হয়ে যায়, মিথ্যা হয়ে যায়, মিথ্যা দাপট দেখাতে দেখাতে সত্য হয়ে যায়। মানুষ মিথ্যাকে সত্যের মতো দেখে, সত্যকে মিথ্যার মতো দেখে। খুব সহজ সরল হয় সাধারণ মানুষ, সেই সরলতাকে পুঁজি করে পর্দার অন্তরালে থাকা শক্তিধরেরা তাদের মতো করে সত্য বানায়, মিথ্যা বানায়। শক্তির ওপর শক্তি থাকে, কখনো সেগুলো দৃশ্যমান সূর্যের আলোর মতো হয় না, বরং অন্ধকারে কালো বিড়ালকে খোঁজার মতো একটা অস্থির অবস্থা হয়। সত্যকে খুঁজতে খুঁজতে মানুষ সত্যের ভিতরে সত্য কি কখনো খুঁজে পায়। সত্য খুঁজে পাওয়া এত সহজ নয়, মানুষ হয়তো কোনো একটা জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কিন্তু সেটা কতটা সত্য তা কখনো বিচার করতে পারে না। নিজের মতো করে জানা সহজ, দেখা সহজ, বিচার করা খুব কঠিন।

খুব অদ্ভুত মানুষের মনস্তত্ত্ব। মানুষ সারা জীবন সত্য সত্য বলে চিৎকার করলেও মিথ্যা মানুষকে প্রলুব্ধ করে, মিথ্যা মানুষকে তার দিকে টানে। যখন পরীক্ষার সময় আসে তখন মিথ্যার পক্ষে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, সত্যের পক্ষে মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত কমতে কমতে ক্ষয়িষ্ণু হতে থাকে। মিথ্যার দল সব সময় ভারী ও শক্তিশালী হয়, সত্যের দল হালকা ও দুর্বল হয়। মানুষ তারপরও বিশ্বাস করে সত্য একদিন না একদিন জিতবেই, তবে সেটা ঘড়ির কাঁটাকে মানে না, ক্যালেন্ডারের তারিখকে মানে না। সেই সময়টা কখন আসবে কেউ জানে না। হয়তো সময়ের পর সময় গড়িয়ে যাবে, সভ্যতার পর সভ্যতা পেরিয়ে যাবে, মহাকাল মহাকালকে ছাড়িয়ে যাবে, তারপর হয়তো কোনো একদিন আসবে। কাউকে বলে-কয়ে আসবে না, নিজের মতো করে আসবে। তখন হয়তো মানুষ জানতেও পারবে না মিথ্যার কাছে একদিন দাঁড়াতে না পারা এ সত্যটার জন্ম হয়েছিল অনেক বছর আগেই। যার হাত ধরে সত্যের জন্ম হয়েছিল তার কথাও হয়তো কেউ জানবে না কোনো দিন। কিন্তু একজন তো ছিল, যে সে সময়টাতে একা হয়ে পড়েছিল, আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, পৃথিবীতে সত্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে মরণপণ লড়াই করেছিল। কেউ হয়তো মনেও করবে না তাকে, কিন্তু সে তো একদিন ছিল। যে সত্যের জন্য লড়ে সে তার নিজের নাম ছড়ানোর জন্য লড়ে না, ত্যাগের জন্য লড়ে, ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর জন্য লড়ে না, ইতিহাস গড়ার জন্য লড়ে। সত্য খুব কঠিন, সত্যের কাছে আপন-পর বলে কিছু নেই। মিথ্যা যখন চিৎকার করে হাসে, সত্য তখন লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। এই জমে থাকা কান্না সত্যকে কঠিন বানায়। মানুষ কখনো কখনো সত্য মিথ্যার সঙ্গে, মিথ্যা সত্যের সঙ্গে মেশাতে গিয়ে অর্ধ সত্য, অর্ধ মিথ্যার জন্ম দেয়। সত্য ভালো, মিথ্যা মন্দ, অর্ধ সত্য, অর্ধ মিথ্যা খুব ভয়ংকর।

সত্য কখনো কখনো বিশ্বাসকে আঘাত করে, বিশ্বাসকে ভেঙে দেয়। বিশ্বাস একটা নদীর মতো, কখনো ভাঙে, কখনো গড়ে। সত্য সেই ভাঙা-গড়ার খেলা দেখতে দেখতে কখনো কখনো বোবা হয়ে যায়, তবে সত্যকে মরতে দেয় না। একটা কাচের আয়না ভেঙে গেল, কাচের টুকরোগুলো খন্ডিত সত্য নাকি খন্ডিত মিথ্যা কেউ জানে না, জানবে না কোনো দিন।

দুই. আকাশটাকে মাঝে মাঝে ছাতা মনে হয়। মাথার ওপর আকাশের ছাতা, ভাবতেই একটা অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হয়। আকাশের ছাতাটা অদ্ভুত, সেটা মানুষকে বৃষ্টিতে ভেজাতে ভালোবাসে। অথচ মানুষ বৃষ্টিকে ঠেকাতে কাপড়ের ছাতার নিচে আশ্রয় নেয়। মানুষের বানানো ছাতা বৃষ্টিকে প্রতিরোধ করতে লড়াই করে, আকাশ যখন ছাতা হয় বৃষ্টি তখন মানুষের সারা শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এক ধরনের অসহায় আত্মসমর্পণের মতো। এমন আত্মসমর্পণে লজ্জা থাকে না বরং নিজের ভিতরের অণুু-পরমাণুগুলো উপলব্ধি করার আত্মসম্মান থাকে।

বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ আছে। অনুভূতি আছে। আবেগ আছে। নিজেকে লুকিয়ে নিজেকে খোঁজার এক ধরনের তাড়না আছে। অনেকটা কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের মতো। যেমন তিনি বলেছেন, আমি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসি, কারণ তখন কেউ আমার কান্না দেখতে পায় না। আকাশের ছাতা আমাদের কষ্ট লুকাতে দেয়, কাঁদতেও দেয়। খুব কঠিন বাস্তবতার ভিতর দিয়ে আমাদের নিয়ে যেতে যেতে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ তৈরি করে দেয়।

যাদের ইট, পাথর, কংক্রিটের মতো শক্ত ছাদ নেই, তাদের কাছে আকাশ একটা মাথা গোঁজার ছাদের মতো। ইট, পাথর, কংক্রিটের ছাদের একটা সীমারেখা আছে, আকাশ যাদের মাথার ওপরের ছাদ, সেই ছাদের কোনো সীমারেখা নেই। সে ছাদের নিচে বসবাস করে রাতদিনকে প্রাণভরে উপভোগ করা যায়। দিনে সূর্যের তাপে পোড়া যায়, রাতের তারা ঝুলানো চাঁদের আকাশ দেখতে দেখতে দুঃখ ভুলে সুখের স্বপ্নে গড়াগড়ি খেতে খেতে ঘুমানো যায়। হয়তো সেই স্বপ্ন সফল হবে না কোনো দিন, ব্যর্থও হবে না। ভেঙে যাবে হয়তো কোনো দিন, ধ্বংস হবে না। অদ্ভুত এক জীবনের খেলা হবে সেটা, যেখানে জয়-পরাজয় থাকবে না। আকাশের মতো উদার একটা মন থাকবে, মনের ভিতর চিন্তা থাকবে, চিন্তার ভিতর মহাজীবন থাকবে, মহাজীবনের ভিতর মানুষ থাকবে।

যেদিন ঝড় ওঠে, পাগল হয় বাতাস, বৃষ্টিরা প্রচক, মানুষ খুঁজে আকাশকে, লড়াইটাও হয় লড়াইয়ের মতো। সুকান্তের হে মহাজীবন তারপরও মনে করিয়ে দেয় কঠিন বাস্তবতাকে এভাবেই ‘প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা- কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়ঃ পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ আকাশের নিচে সোনার পালঙ্ক নেই, ফোমের বিছানা নেই, মাটির বিছানা আছে, কাদামাটির মমতা আছে। মাটির বিছানায় বিশ্বাস থাকে, মন থাকে, সোনার পালঙ্কে বিশ্বাসঘাতকতা থাকে, অভিনয় থাকে। চারপাশে সেখানে দেয়াল থাকে না, এসির বাতাস থাকে না, দিগন্ত রেখায় ঘেঁষা প্রকৃতি থাকে, প্রকৃতির বাতাস থাকে। নিঃশ্বাস নেওয়া যায় প্রাণভরে।

জীবনের আনন্দকে ভোগবাদিতা গলা টিপে হত্যা করে, সব হারিয়ে যাদের ঠাঁই হয় আকাশের নিচে, প্রকৃতির বুকে, মাটির কাছে, তাদের প্রতিদিন নতুন করে জন্ম হয় সবার অজ্ঞাতেই।

তিন. হয়তো মানুষের জীবনে অনেক দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, না বলা অনেক কথা থাকে, জীবনে হেরে যাওয়ার গল্প থাকে, আঘাত থাকে, স্বপ্নগুলো চোখের সামনে ভেঙে পড়ার দুঃস্বপ্ন থাকে, নীরবে নিভৃতে পৃথিবীর আনন্দযজ্ঞ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ট্র্যাজেডি থাকে। তারপরও জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়, জীবন খাতায় থেমে যাওয়া কলমটাকে আবার সচল করে একটু একটু করে লিখতে লিখতে ভেঙে যাওয়া স্বপ্নটাকে আরও অনেক বড় করে দেখার মতো দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে হয়। থেমে যাওয়া মানে জীবন নয়, সমস্যার সমাধান নয়। থেমে যাওয়া মানে নিজেকে নতুন করে চেনা, নিজের ভিতর থেকে যে মানুষটা একদিন হোঁচট খেয়ে মাটিতে পরে গিয়েছিল সেই মানুষটা যাতে সেই মাটিকে আঁকড়ে ধরে আবার নতুন করে দাঁড়াতে পারে, সেই সাহসের জন্ম দেওয়া। জীবন যখন বিশ্বাসের পতন দেখে তখন কাঁদো কাঁদো যে মুখটা সবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আকাশটাকে মেঘে ঢেকে যেতে দেখেছিল, থেমে যাওয়া সে মানুষটার ভিতর আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেওয়া যেন সেখানে থেকে কালো মেঘ সরাতে সরাতে সূর্যের মতো করে সে মানুষটা আবার নতুন করে জ্বলে উঠতে পারে।

সব সময় মনে রাখতে হবে, যেখানে মানুষকে থেমে যেতে হয়, সেখান থেকেই শুরু হতে পারে নতুন করে যাত্রার প্রস্তুতি। সেই যাত্রা কোনো ভ্রমণ নয়, সে যাত্রা এমন এক মহাযাত্রা হবে যা জীবনকে জয় করতে করতে মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষের জন্ম দেবে, মানুষের ভিতরের সব গ্লানি মুছে দিয়ে মানুষকে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগাবে। মানুষের জীবনে যত কাঁটা বিছানো থাকবে ততই জীবন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হবে, হয়তো সে অভিজ্ঞতা সুখকর হবে না, তারপরও সেখান থেকে মানুষ যে বার্তা পাবে, সেই বার্তাই মানুষকে চিনিয়ে দেবে অন্ধকারের ভিতরে ডুবতে ডুবতে এক টুকরো আলোর জন্য কতটা লড়াই করতে হয়, লড়াই করে নিজেকে জয় করতে হয়। নিজের সঙ্গে নিজে লড়তে পারলেই জীবনের অলিগলিতে পা ফেলে ফেলে জীবনের অগণিত পথ খোলা যায়। তখন জীবনের ভিতর মানুষ ঢুকে জীবনের নতুন থিওরির জন্ম দেয়, সে থিওরি বইয়ের পাতায় মলাটবন্দি থাকে না বরং পরাধীনতা ভেঙে পৃথিবীকেই বই বানিয়ে ফেলে।

মানুষ যখন পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে তখন মানুষকে পৃথিবীর আর কেউ পরাভূত করতে পারে না। মানুষকে ধ্বংস করা যায়, পরাভূত করা যায় না-এই সত্যটা তখন সবার পেছনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে হয় না, বরং সেটা পেছন থেকে ফুলের সুবাস ছড়াতে ছড়াতে সামনে দাঁড়ানো সব মানুষকে বুঝিয়ে দেয়, কেউ একজন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, যে জীবনকে বদলে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারে। সে মানুষটা কোনো অসাধারণ বা বিখ্যাত মানুষ নয়, আপনার আমার মতো খেটে খাওয়া সাধারণ একজন মানুষ।

চার. আমি যতই মানুষকে বিশ্বাস করেছি, ততই ঠকেছি। ঠকছি জেনেও বিশ্বাস করে যাচ্ছি, কারণ তারা এখন আমার কাছে মানুষ নয়, অভিনেতা। যদিও আমি বুঝতে পারছি তারা আমাকে ঠকাচ্ছে, তারপরও মুখে হাসিটা ধরে রেখে আমাকেও অভিনয় করে দেখাতে হচ্ছে তাদের কাছে যে, আমি ঠকছি সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। সে অর্থে আমিও তো অভিনেতা।

পৃথিবীটা বুঝি এমনই কেউ অভিনয় করে মানুষকে কাঁদায়, কেউ অভিনয় করে নিজের কান্নাকে লুকায়। কেউ সত্যের জন্য অভিনয় করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে, কেউ মিথ্যার জন্য অভিনয় করে সত্যের মৃত্যু ঘটায়। কেউ সংসারের সুখের জন্য নিজের সবটুকু তিলে তিলে ক্ষয় করে তার চেয়ে সুখী পৃথিবীতে আর কেউ নেই, এমন অভিনয় করে যায়, কেউ সংসারের সবাইকে বঞ্চিত করে তার চেয়ে স্বার্থহীন মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই, এমন অভিনয় করে যায়।

কারও কারও অভিনয় মানুষকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে দেয়, কারও কারও অভিনয় মানুষকে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখায়। কারও কারও অভিনয় মানুষের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেয়, কারও কারও অভিনয় মানুষকে স্বপ্ন গড়ার পথ তৈরি করে দেয়। পৃথিবীর সবাই অভিনেতা, তবে সব অভিনেতার মধ্যে মানুষ থাকে না, কারও কারোর মধ্যে মানুষ থাকে। তবে সেটা চেনা খুব কঠিন, কারণ নিজের ছায়াকেও যে এখন আর চেনা যায় না।

মার্ক রাফালোর বলতেন, ‘আমি অভিনেতা হয়েছি আর অভিনয় করতে গিয়ে আমি আর আমি হতে পারিনি।’ খুব কঠিন একটা দর্শনের কথা। বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে এসে যে যার মতো অভিনয় করতে গিয়ে হয়তো একদিন আমার আমিটাকেই আর চিনতে পারে না। নিজের দিকে তখন তাকাতে গেলে মনে হয় আমি কি সেই আমি, যে একদিন আমার ভিতরে আমি হয়েই বেঁচে ছিল! একদিন সেই আমি অন্ধকারে ছিল বলে চেনা যেত, যখন আলো এসে অন্ধকারকে গ্রাস করেছে তখন সেই অন্ধকার আলোর ভিতরে হারিয়ে গেছে।

কখনো কখনো অন্ধকার আলোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অন্ধকারে হারিয়ে গেলে নিজেকে চেনা যায়, আলো থাকলে হারিয়ে যাওয়া আমার আমিকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না। অস্কার ওয়াইল্ড একটু অন্যভাবে বলেছেন, আমি অভিনয়কে ভালোবাসি।  কেননা এটা জীবনের চেয়েও কিছুটা বেশিই সত্যি।

খুব অদ্ভুত একটা ভাবনা, যেখানে অভিনেতা কখনো মানুষ, কখনো অভিনেতাই। তবে যে অভিনয় মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে, সে অভিনয় মিথ্যা বলে মনে হলেও সে অভিনয় জীবনের চেয়েও কিছুটা বেশিই সত্য অথচ যে অভিনয় মানুষের অমঙ্গল বয়ে আনে, সে অভিনয় সত্য বলে মনে হলেও সে অভিনয়ে জীবনের চেয়েও সত্য বলে কিছু নেই, বরং সেখানে স্ক্রিপ্টে লেখা হিপোক্রেটদের নাটক আছে, নিজেদের স্বার্থের মতো করে সাজানো সর্বনাশা মঞ্চ আছে, মানুষের বদলে ঝুলন্ত মুখোশ আছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর