রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

যে কাজটি বিএনপি খুব ভালো পারে

মহিউদ্দিন খান মোহন

যে কাজটি বিএনপি খুব ভালো পারে

একজন উচ্চপদস্থ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, যিনি বিএনপির একজন শুভাকাক্সক্ষী, আলাপ প্রসঙ্গে একদিন বলছিলেন, ‘বিএনপি হয়তো অনেক কাজই ঠিকমতো করতে পারে না, তবে একটি কাজ খুব ভালোভাবে করতে পারে, যেটা বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের আর কোনো রাজনৈতিক দল অত ভালোভাবে করতে পারে কি না আমার জানা নেই।’ জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটা? বললেন, ‘বন্ধুকে শত্রু বানানো’। ভদ্রলোকের এ উক্তিটি নিয়ে পরে অনেক ভেবেছি। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপিতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে, তিনি একটি নির্মম সত্য কথা বলেছেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুদীর্ঘ আটত্রিশ বছর দলটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সুবাদে এবং বর্তমানে বাইরে থেকে যা দেখছি, তাতে এ প্রতীতি জন্মেছে যে, দলটি বন্ধু বাড়ানোর চেয়ে শত্রু বৃদ্ধিতেই বোধকরি পারঙ্গম। এটা অনেকেই বলে থাকেন, বিএনপি সব সময় শত্রু-মিত্র চিনতে ভুল করে। দলটি শত্রুকে সাদরে কোলে নেয়, মিত্রকে দেয় দূরে ঠেলে। স্বার্থের কারণে যারা দলের সঙ্গে বেইমানি কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করার বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু একেবারে বিনা দোষে দলের শক্তিধর কোনো নেতা চক্রের রোষানলে পড়ে যখন কাউকে বহিষ্কারের গিলোটিনে রাজনৈতিক জীবন বিসর্জন দিতে হয়, কথা ওঠে তখনই। বিএনপিতে এ পর্যন্ত এমন পরিণতি বরণ করতে হয়েছে বহু নেতা-কর্মীকে। আবার অনেক নেতা দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেও পরে আবার ‘সসম্মানে’ ঠাঁই পেয়েছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও কে এম ওবায়দুর রহমান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এরা দুজনই দল থেকে বহিষ্কার হয়ে ফেরত এসে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পেয়েছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একবার বহিষ্কার হওয়ার পরে বলেছিলেন, বিএনপিতে কয়েকবার বহিষ্কার আর আবিষ্কার না হলে বড় নেতা হওয়া যায় না। কথাটা একেবারে বেঠিক ছিল না। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তারপরই দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার রাজনীতির শুরু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। ছিলেন বিএনপির ১১ সদস্যের প্রথম স্থায়ী কমিটির সদস্য। ব্যারিস্টার হুদা একাধিকবার বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন। প্রথমবার বহিষ্কার হন খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভা থেকে, ১৯৯৫ সালে। সে সময় আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছিল। বিএনপি সংবিধানের দোহাই দিয়ে সে দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। তখন একদিন নাজমুল হুদা গণমাধ্যমে অভিমত পেশ করেন, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের একজন সিনিয়র বিচারপতির নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। দলীয় স্ট্র্যাটেজির বাইরে প্রকাশ্যে কথা বলায় তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। যদিও বিএনপি শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল এবং তা প্রায় নাজমুল হুদার ফর্মুলার কাছাকাছি। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা দ্বিতীয়বার বহিষ্কার হন দল থেকে ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর। সেবার তাঁর অপরাধ ছিল দলের চেয়ারপারসন সম্পর্কে কথিত ‘কটূক্তি’। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, যেখানে আমাদের দেশের দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নাই, কেউ কারও মুখ দেখেন না, সেখানে এসব ঈদ আর নববর্ষের কার্ড বিনিময় স্রেফ ‘হিপোক্রেসি’। হুদা সাহেব কটাক্ষ করেছিলেন দুই নেত্রীকে। কিন্তু শাস্তির খড়গ নেমে এলো নিজ দলের কাছ থেকে। তিনি বহিষ্কার হলেন। তবে মাত্র পাঁচ মাস পরে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তিনি আবার বিএনপিতে ‘আবিষ্কার’ হলেন। অর্থাৎ তাঁর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হলো। অবশ্য নাজমুল হুদাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে একটি কারণ ছিল। সেবার সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে একটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তাঁর এই তৎপরতায় প্রমাদ গুনছিল বিএনপি। ভরাডুবির হাত থেকে দলীয় প্যানেলকে রক্ষা করতে হুদা সাহেবের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যারিস্টার হুদা যোগ দেওয়ায় সেবার বার সমিতিতে বিএনপি প্যানেল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে।

সে রাতে টেলিভিশনে নাজমুল হুদার সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার খবর শুনে পরদিন সকালে ফোন করলাম তাঁকে। বললাম, আপনাকে অভিনন্দন এ জন্য যে, আপনি ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরত যাননি, বরং দল তার প্রয়োজনে আপনাকে ডেকে নিয়ে সদস্য পদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তাঁকে বললাম, ঢাকা জেলা সভাপতি পদ তো আর পাবেন না, কারণ ওটা আবদুল মান্নান সাহেবকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ ফিরে পাওয়ার চিঠি নিয়ে ওই অফিস থেকে বেরিয়েছেন তো? হুদা ভাই বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে বললেন, ‘সে বলেছে, ওই চিঠি পরে পাঠিয়ে দেবে’। আমি বললাম, ভাই আপনি আমার চেয়ে অনেক সিনিয়র, অভিজ্ঞতাও বেশি। বিএনপিকে তো আমার চেয়ে আপনার ভালো চেনার কথা। লিখে রাখেন ওই চিঠি আপনি আর কোনো দিন পাবেন না। কারণ, নামের শেষে ‘বিশ্বাস’ থাকলেই সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হুদা ভাই বললেন, ‘বল কী! এবার বোধহয় এমনটি হবে না’। কিন্তু নাজমুল হুদা সে চিঠি আর পাননি। বিএনপি সে দিন নাজমুল হুদার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাকে শুধু ‘কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালে পাঁজি’ প্রবাদের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। ব্যর্থ বিষণ্ন নাজমুল হুদা অবশেষে ২০১২ সালের ৬ জুন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নতুন দল গঠন করেন। তাঁর সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দল ‘তৃণমূল বিএনপি’; যার নেতৃত্বে আছেন সাবেক বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার কথা ছিল না। কিন্তু তাঁকে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছে, এ ছাড়া তাঁর কোনো উপায় ছিল বলে মনে হয় না।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কি খুব বড় কোনো অপরাধ করেছিলেন? মনে হয় না। কিন্তু এরচেয়ে অনেক বড় অপরাধ করেও অনেকে এখন বিএনপির বড় বড় পদে শাহেনশাহ্র মতো বসে আছেন। ওয়ান-ইলেভেনের কথা তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারের নামে বিএনপিতে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যে ‘ক্যু’ করার অপচেষ্টা হয়েছিল, তার অন্যতম বীর সেনানী আজ দলটির মিডিয়া সেলের প্রধান। সে সময় জেনারেল মইন উ আহমদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে যারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও অস্থায়ী মহাসচিব হওয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন, তারা পরে দলে বহাল তবিয়তে ছিলেন এবং এখনো আছেন। কারও কারও প্রমোশনও হয়েছে। মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাবের কপি ম্যাডাম জিয়াকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন যিনি, যাকে তিনি বাসায় ঢুকতে দেননি, সেই ব্যক্তিটি এখন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপি অফিসের তালা ভেঙে দখলে নিয়েছিলেন যারা, তারা এখন দলটির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, নীতিনির্ধারক। আর যারা সে দুঃসময়ে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পাশে থেকে জেল-জুলুমের ঝুঁকি নিয়ে বেগম জিয়া ও দলের পক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া সবাই আজ অবহেলিত, বঞ্চিত, দল থেকে নির্বাসিত। তাদের সে অবদানের কোনো স্বীকৃতি বিএনপি দেয়নি। দুঃসময়ের বন্ধুকে ছুড়ে ফেলে শত্রুকে কোলে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। কথায় আছে অন্ধ যখন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়, প্রথমেই সে হাতের লাঠিটি ছুড়ে ফেলে দেয়। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী বিএনপি যেন তা-ই করেছে; যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমি স্বয়ং। ওয়ান-ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার বিবৃতি স্বাক্ষর করার কেউ ছিল না। তাঁর ‘সাবেক সহকারী প্রেস সচিব’ পরিচয়ে ওইসব বিবৃতিতে আমিই স্বাক্ষর করেছি। ম্যাডাম জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সুপারিশে আমাকে সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের কাউন্সিলের পর আমাকে সদস্যও রাখা হয়নি। আমার কোনো অপরাধ ছিল না। ম্যাডামের দুই স্বঘোষিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তার রোষানলে পড়ে আমার রাজনৈতিক ভাগ্য জ্বলেপুড়ে খাক। এখন বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা, ভুল সিদ্ধান্ত, নেতাদের নানা ধরনের বাণিজ্য ইত্যাদি পত্রিকায় আমার কলামে তুলে ধরায় দলটির কেউ কেউ আমাকে বিএনপির শত্রু বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস পান। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। আমি ছিলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মী। একটি কথা আমি বলে থাকি- বিএনপি যদি একটি সুউচ্চ ইমারত হয়, তাহলে জিয়াউর ররহমান সেটার মূল স্থপতি। আর আমরা নির্মাণ শ্রমিক। একটি একটি করে ইট গেঁথে এই ইমারতটি আমরা গড়ে তুলেছি। তখন এটা ছিল আমাদের মানে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর সম্পদ। এখন আর তা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দল তো কারও একার সম্পত্তি হতে পারে না।

বর্তমানে বিএনপিতে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। এতে কেউ উঠে যাচ্ছেন সপ্তাসমানে, আর কেউ হচ্ছেন পপাৎ ধরণীতল। এখন আর দলটিতে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দলের প্রতি অবদানের কোনো মূল্য নেই। আর্থিক যোগ্যতাই এখন সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। এ যোগ্যতার বলে টাউট-বাটপার, অনৈতিক পথে ধনী হওয়া ব্যক্তি, রাজনীতি সম্বন্ধে অজ্ঞ-মূর্খরা কল্কে পাচ্ছে। টাকা হলেই দলের বড় বড় পদ, নির্বাচনে মনোনয়ন সবকিছু বাগিয়ে নেওয়া যায়। যে কারণে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের পদাবনতি হয়, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে দেওয়া হয় অব্যাহতি, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ হন বহিষ্কার। হাইকমান্ডকে পরামর্শ দিতে গিয়ে চরম অপদস্থ হতে হয়েছে সদ্যপ্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে।

বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু ক্রমশ দলটি আরও বিভক্ত হচ্ছে। সবিস্তারে লিখতে গেলে এই কলামের পাঁচ কিস্তিতেও কুলাবে না। দুয়েকটি উদাহরণ দিই। চাঁদপুরের কচুয়া দুই ভাগে বিভক্ত। হাই কমান্ড এহছানুল হক মিলনের জায়গায় যাকে প্রতিস্থাপন করতে চাচ্ছে তার ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা দলের সিংহ ভাগ নেতা-কর্মী ও জনগণের কাছে নেই। একই অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এক কর্মচারীর ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এমন একজনকে জেলা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে, যার পেছনে কোনো কর্মী নেই। কর্মীর অভাবে তিনি জেলা শহরে কর্মসূচি পালন করতে পারেন না। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে একজনকে আগাম প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দলকে নিজের মতো করে সাজাতে গিয়ে এলোমেলো করে ফেলছেন। দলের নিষ্ঠাবান ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সেখানে বঞ্চিত। তার গুডবুকে না থাকলে কমিটিতে কেউ ঠাঁই পায় না। কথা বললেই নাকি দেওয়া হয় বহিষ্কারের হুমকি। এমন অবস্থা প্রায় প্রতিটি এলাকায়। দলের অভ্যন্তরে এমন অগোছালো অবস্থা রেখে আন্দোলন কিংবা নির্বাচনে সাফল্য অর্জন যে দুরূহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমস্যা হলো এসব বলতে গেলেই তাকে ‘বিএনপির শত্রু’ আখ্যায়িত করা হয়। তাই এখন আর কেউ এসব নিয়ে কিছু বলতে চান না। কারণ যেচে অপদস্থ হতে কে চায়?

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

সর্বশেষ খবর