কিশোর অপরাধ বেড়েই চলছে। মাথায় বড় চুলে ভিন্ন রং। হাত ও কানে রিং। ছিঁড়া জামা স্টাইল মনে করে পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়িয়ে স্কুল-কলেজের সামনে আড্ডা দিয়ে তরুণীদের দেখে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে বিরক্ত করে। অযথা মোটরসাইকেল নিয়ে দৌড়ানোই তাদের প্রধান কাজ। সামান্য বিষয় নিয়ে এরা জড়িয়ে পড়ছে সহিংসতায়। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, প্রেমের বিরোধ, মাদকসহ নানা অপরাধে লিপ্ত। অল্প বয়সেই চুরি, ডাকাতি ও খুনোখুনি করতেও এরা ভয় পায় না। এরা বয়সে ছোট, তাই এদের অপরাধকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা হয়। ক্ষমার সুযোগে এলাকায় হাজারো অপরাধ সংঘটিত করে এই কিশোর গ্যাং। তাদের করা অপরাধের বিরুদ্ধে বললেই বেয়াদবি শুরু করে। এমনকি বড়দের ওপর হাত তুলতেও তাদের অন্তর কম্পিত হয় না। অপরাধ অপরাধই। তা ছোট-বড় যেই করুক। তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা নির্মূলের চেষ্টা করতে হবে। সর্বদা ভালো কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর’ (সুরা আলে ইমরান : ১১০)। সমাজে বিদ্যমান হতাশা, নৈরাজ্য আর দারিদ্র্য কিশোর অপরাধ সৃষ্টির প্রধান কারণ। স্থানীয় অনেকেই এসব কিশোরের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহী করে তুলছে। পরিবারের অভিভাবকদের তাদের সন্তান, ভাই কিংবা আত্মীয়দের মধ্যে যারা কিশোর তাদের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সে কোথায় যায়, কী করে, কোন বন্ধুর সঙ্গে চলাচল। মোবাইল ফোন ও মাদকে আসক্ত কি না, এ ছাড়া কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত কি না, এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কিশোরদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া জরুরি। এ জন্য প্রত্যেককে দীনি জ্ঞান অর্জন করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ)।
কিশোর সময়েই সমাজে যারা অপরাধে যুক্ত তাদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিশু-কিশোরদের পাশে দাঁড়িয়ে উপকার করা সময়ের দাবি। কোনো অবস্থাতে যাতে কিশোররা অপরাধে যুক্ত হতে না পারে সে জন্য সমাজে সংগঠন তৈরি করে কিশোর গ্যাংসহ সব অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এখনই সময়। কিশোর অপরাধ দমনের জন্য প্রতিটি এলাকায় কিশোরদের জন্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাসহ মসজিদে কিশোরদের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রতিবেশী ও সমাজের সৎ, কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ও মেধাবী ভালো বন্ধুদের ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া যাবে না। এলাকায় গুরুজন কিশোরদের কীভাবে কথা বলতে হবে এবং কীভাবে দাঁড়াবে সেসব আদব শিক্ষা দেবে। প্রতিটি এলাকায় পাঠাগার স্থাপন করা বাধ্যতামূলক, সেখানে এলাকার কিশোররা অবসর সময়ে জ্ঞানী মনীষীদের বই ও তাঁদের জীবনী পাঠ করে তাঁদের অনুসরণ করতে পারবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলেই কিশোর গ্যাংসহ কিশোরদের সব অপরাধমুক্ত সম্ভব হবে বলে আশা করি। কোরআনের অন্য স্থানে আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎ কর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অপকর্ম করলে তা-ও দেখতে পাবে।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক