শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নবীর প্রতি তুব্বার বাদশাহর অনন্য ভালোবাসা

নবীর প্রতি তুব্বার বাদশাহর অনন্য ভালোবাসা

) আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

পবিত্র মদিনা শরিফ আবাদ হওয়ার পেছনে চমকপ্রদ ইতিহাস আছে যা আমরা অনেকেই জানি না। তুব্বা বংশের এক বাদশাহ (হিমইয়ার গোত্রের) সিরাতে মুস্তাকিমের সন্ধানে মদিনা হতে দামেস্ক হামলা করার ইচ্ছা করেছিল। ওই যুগের বাদশাহদের নিয়ম ছিল- তারা তাদের সঙ্গে একজন আল্লাহর অলি রাখত। তুব্বার এ বাদশাহ (আসাদ বিন যুরারাহ) ওই আল্লাহর অলিকে নিয়ে মদিনায় অবস্থান করেছিলেন। সকালে যখন দামেস্কের উদ্দেশে রওনা হবেন তখন ওই অলি বাদশাহকে বললেন, আমি এখানে থেকে যাব, অন্য কোথাও যাব না। বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? তিনি উত্তরে বললেন, শুনেছি আখেরি নবী মদিনাতে আসবেন, আমিও এ জায়গার বাতাস ও মাটি থেকে ঘ্রাণ পাচ্ছি যে, নবী এখানেই আসবেন।

আমি নবীর আগমনের হাজার বছর আগে এসেছি; জানি না তাকে পাব কি না তবুও আমি এখানে থাকব। অতঃপর তুব্বার বাদশাহ আল্লাহর অলিকে মদিনাতে থাকার অনুমতি দিয়ে নবীর জন্য একটি সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করল এবং তার সঙ্গে একটি পত্র লিখে রেখে গেল। পত্রের ভাষা ছিল এ রকম-

আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আহমাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সত্য নবী। তিনি হবেন উত্তম বংশের মধ্য থেকে। যদি আমার হায়াত তাঁর জমানা পর্যন্ত দীর্ঘ হয় তাহলে অবশ্যই আমি তাঁর সহায়ক ও সাহায্যকারী হব এবং আমি তাঁর পক্ষ হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করব। আর এভাবে অন্তর থেকে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট দূর করার প্রয়াশ চালাব।

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদিনাতে পৌঁছলেন তখন মদিনাবাসী সবাই আবেদন করেছিল যে, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনি আমার ঘরে অবস্থান করুন! হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, উটকে যেতে দাও, আল্লাহর নির্দেশে সে যেখানে গিয়ে থামবে আমি সেখানেই অবস্থান করব। ভাইয়েরা আমার! নবীর জন্মের হাজার বছর আগে বাদশাহ তুব্বা যে ঘর বানিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, উট সেই ঘরের সামনে গিয়েই থেমে গেল। উট চিনতে পারল নবীকে, তুব্বা চিনতে পারল নবীকে, কিন্তু আমরা তাঁর প্রিয় উম্মত হয়েও তাঁকে চিনতে পারলাম না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাদশাহর তৈরি করা বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলেন তখন সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) তুব্বার বাদশাহর চিঠিটি নবীর কাছে পেশ করলেন।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে সারা পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা আজ যে ইসলামের কথা বলি তা হজরত সাহাবায়ে কেরামের অবিস্মরণীয় কোরবানির বিনিময়ে পাওয়া। হজরত সাহাবায়ে কেরামগণ দ্বীনের জন্য বাড়িঘর ছেড়েছিলেন, কাফেরের হাতে মার খেয়ে শরীর রক্তাক্ত করেছিলেন। আজ একদল লোক আমাদের অনেক কিছুই বলে। আসলে তারাও তো মুসলমান। তাদের সঠিক ইতিহাস জানানোর দায়িত্ব আমাদের ছিল; আমরা তা পালন করত পারিনি বিধায় তারা আমাদের প্রতি নানা সন্দেহের তীর নিক্ষেপ করে। এর জন্য দায়ী আমরাই।

আমাদের বন্ধু হয়ে যাও

হে সমাজ ও দেশের কর্ণধাররা! তোমাদের সঙ্গে আমাদের ন্যূনতম শত্রুতা নেই। আমরা তোমাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাব, তবে শর্ত হলো- আল্লাহ-রসুলের বিরুদ্ধে, কোরআন-সুন্নাহ তথা শরিয়তের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ আসতে পারবে না।

সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি তা পরিষ্কার করতে হবে। রসুলের শানে বেয়াদবি, সুন্নতের শানে বেয়াদবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। মাদরাসা বা স্কুল-কলেজের ছাত্র, সরকারি বা বেসরকারি লোক, কেউ নবীর শানে বেয়াদবি মেনে নিতে পারে না। তোমরা আমাদের ক্ষেপিও না। আমরা নবীর দল, সুন্নতের দল। আমরা আল্লাহ, রসুল, সাহাবা, তাবেয়ি, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন, হক্কানি আউলিয়া ও মাশায়েখদের অনুসারী। তাঁরা আমাদের জন্য পথ প্রদর্শক।

যারা এ জামাতের ওপর হাত তুলবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা আলেমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিচ্ছেদ সৃষ্টি করছে, একদিন তাদের চরম মাশুল গুনতে হবে। আল্লাহর দ্বীন, রসুলের সুন্নতের ক্ষতিসাধন করে কেউ টিকে থাকতে পারবে না ইনশা আল্লাহ!

হে দেশের পরিচালকরা! আমরা কারও ওপর বদ দোয়া করতে চাই না। তবে আমাদের একটি আবদার যে, নবীর এ বাহিনীকে তোমরা কষ্ট দিও না। জেনে রেখ, তাদের চোখের দুই ফোঁটা অশ্রু আল্লাহর কাছে পৃথিবীর সবকিছু থেকে উত্তম। আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন!

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর