সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ইবাদত করতে হবে

মাওলানা আবদুর রশিদ

ইসলাম সামাজিক কল্যাণের ধর্ম। আল্লাহর প্রতি অনুগত বান্দা তার প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে করবে এটিই ইসলামের স্বীকৃত নিয়ম। মানবতার কল্যাণে প্রতিটি মানুষ নিবেদিতপ্রাণ হবে আল্লাহ এমনটি দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে কেউ আত্মগরিমা বা আত্মপ্রচারের আশ্রয় নেবে তেমনটি অনুমোদন যোগ্য নয়। ইসলামী বিধান অনুযায়ী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বদলে কেউ মানুষকে দেখিয়ে যশ-খ্যাতি লাভ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সৎকাজ করলে তার নাম- রিয়া। আল্লাহ মুনাফেকদের নিদর্শন বর্ণনা করে ঘোষণা করেন : ‘তারা মানুষকে প্রদর্শন করে বেড়ায়, তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।’ সুরা নিসা-১৪২।

শুধু মানুষের কল্যাণ নয়, ইবাদতের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য থাকতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে অমনোযোগী, যারা লোকদেখানোর উদ্দেশে নামাজ পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্যকে দেয় না।’ সুরা মাউন-৪-৭।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরও ঘোষণা করেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদকাগুলো বরবাদ কর না সেই লোকের মতো, যে রিয়া বা লোকদেখানোর উদ্দেশে আপন অর্থ-সম্পদ খরচ করে।’ সুরা বাকারা-২৪৬।

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। এ ইবাদত হতে হবে শতভাগ সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে নিবেদিত। সেখানে কোনো ধরনের অন্যথা কাম্য নয়। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভের আশা করে, সে যেন সৎকাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক না করে। (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে দেখানো বা সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদত না করে)।’ সুরা কাহফ-১১০।

মানুষ যদি শুধু সৃষ্টিকর্তার জন্য ইবাদত করে, যদি তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য মানুষের কল্যাণ সাধনে নিজেকে নিয়োগ করে তবে তা যেমন সামাজিক ঐক্য দৃঢ় করবে তেমন সব ধরনের হীনম্মন্যতা থেকে মানুষকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। এক মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের আত্মিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতেও তা সহায়ক বলে বিবেচিত হবে।

ইসলামে লোকদেখানো ভালো কাজকেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। লোকদেখানো কাজে আত্মগরিমার প্রকাশ ঘটে। এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রে তা যাতে লোকদেখানো না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

হজরত আবু হুয়ায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (দ.) বলেছেন : কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আগে যাদের বিচার-ফয়সালা করা হবে, তাদের মধ্যে প্রথমজন যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ময়দানে শহীদ হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সমুদয় নেয়ামতরাজির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে, সেসব নেয়ামতের প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে : এসব নেয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে তুমি (আল্লাহ) কি ইবাদত করেছ? জবাবে সে বলবে : আমি তোমার দীনের জন্য যুদ্ধ করে শাহাদাতবরণ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন : তুমি মিথ্যা বলছ। প্রকৃতপক্ষে মানুষের কাছে তুমি বীর (মুজাহিদ) হিসেবে পরিচিত হওয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলে। মানুষ তো (এখন) তোমাকে বীর (সাহসী) বলছে। অবশেষে তাকে আল্লাহর নির্দেশে দোজখে ফেলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়জন আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রভূত অর্থসম্পদের অধিকারী হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে প্রাপ্তি স্বীকার করবে। এরপর তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি এই বিত্তবৈভব কোথায় ব্যয় করেছ? সে জবাব দেবে : হে আল্লাহ! আমি তোমার দীনের রাস্তায় যেখানেই যখন প্রয়োজন হয়েছে সেখানেই তোমার (দেওয়া) সম্পদ খরচ করতে কার্পণ্য করিনি।

আল্লাহ বলবেন : তুমি (সত্য নয়) মিথ্য বলছ। আমার রাস্তায় নয় বরং মানুষ যাতে তোমায় দানবীর হিসেবে প্রশংসা করে সে জন্য অর্থ ব্যয় করেছ, মানুষ তো এখন তাই বলছে। অবশেষে তাকেও দোজখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে।

তৃতীয়জন পার্থিব জীবনে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অপরকেও শিক্ষা দিত এবং পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করত। অনন্তর তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতরাজির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে সে তার প্রাপ্তি স্বীকার করবে। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে যে, তুমি (তোমার) জ্ঞান দিয়ে কী করেছ। সে উত্তর দেবে : আমি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তা অপরের কাছে বিতরণ করেছি এবং তোমাকে খুশি করার জন্য (নৈকট্য লাভের আশায়) তোমার বাণী পবিত্র কোরআন চর্চা (অধ্যয়ন) করেছি। আল্লাহ বলবেন : না, তুমি মিথ্যা বলছ। আমাকে খুশি করার জন্য নয় বরং মানুষ যেন তোমায় (ভালো) কারী বলে বাহবা দেয় সে আশায় তুমি কোরআন অধ্যয়ন করেছ। অবশেষে তাকেও দোজখে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে। মুসলিম শরিফ।

ওপরের হাদিসটি প্রমাণ করে আল্লাহর ইবাদত করার ক্ষেত্রে স্রষ্টার সন্তুষ্টি ছাড়া ভিন্ন কোনো চিন্তাভাবনা অবকাশ থাকলে তা কোনো কাজে আসবে না। এ ধরনের ইবাদত জান্নাতের বদলে জাহান্নামের পথকেই উন্মোচিত করবে। আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বিচ্যুতি হতে দূরে থাকা এবং সব ক্ষেত্রে আল্লাহপাক ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর